ছোটবেলা থেকেই মা দুর্গার সঙ্গে আমার খানিক দূরের সম্পর্ক।
ছোটবেলা থেকেই মা দুর্গার সঙ্গে আমার খানিক দূরের সম্পর্ক। কলকাতার পুজোর খুব বেশি স্মৃতি নেই। দুর্গাপুজো বলতে বুঝি, ঔরঙ্গাবাদে চাঁদোয়া টাঙিয়ে ছোট্ট পুজো। কর্ণপ্রয়াগে গঙ্গার ওপার থেকে আসা ঢাকের আওয়াজ বা তাকদায় দুর্গা-মহিষাসুর সেজে ১০ জনের মিছিল করে যাওয়া। এ-ই আমার পুজো। এখন তারই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় থাকলে তাই বুঝে উঠতে পারি না কী করব। সবাই দেখি বলে, ‘ষষ্ঠী সর্টেড, সপ্তমী সর্টেড’। এ দিকে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
পুজোর প্রেম নিয়ে কত কী পরিকল্পনা করতে দেখেছি বন্ধুদের। সেজেগুজে, সুগন্ধী মেখে, মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেরিয়ে ছবি তোলা— এ সব দূর থেকে দেখতে ভাল লাগে আমার। নিজেকে ওই ভিড়ের মধ্যে দেখতে পাইনি কোনও দিন। চাইওনি। নিজের ভাল লাগার মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে পুজোর ভিড়কে বেছে নিতে পারি না। যা-ই হোক, প্রেম করাও তো ভীষণ ব্যক্তিগত একটি বিষয়।
সবাই দেখি বলে, ‘ষষ্ঠী সর্টেড, সপ্তমী সর্টেড’। এ দিকে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
কলকাতার পুজোয় নিজেকে একাত্ম করতে পারিনি এখনও। হয়তো কোনও না কোনও দিন পারব। পুজো কড়া নাড়লেই আমি পাহাড়মুখী। মানচিত্র খুলে বসে বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায় আমার বাড়িতে। তবে ছোটবেলার পুজোর কিছু বিক্ষিপ্ত স্মৃতি রয়েছে আমার। তার মধ্যে একটি এখনও খুব দগদগে।
পুজো কড়া নাড়লেই আমি পাহাড়মুখী।
মালদহে থাকাকালীন পাড়ার পুজো দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমাদের পাড়ায় দুর্গার থান ছিল। প্রতি বছর সেখানেই পুজো হত। এক বার মহা আড়ম্বরে পুজো করার শখ হয়েছিল গোটা পাড়ার। থান ছেড়ে প্রাঙ্গণে সেজে উঠেছিল মণ্ডপ। তবে সাড়ম্বরে দুর্গার আরাধনা হয়েছিল বটে, কিন্তু সে বার দুর্গার ভাসান হয়নি। কারণ ৮০ জন লোক এনেও মণ্ডপ থেকে প্রতিমাকে টেনে নামাতে পারেনি। শেষে হোসপাইপ এনে মূর্তি গলানো হয়েছিল। সেই হইহই, হাহাকার, আতঙ্কের পরিবেশ আমার আজও মনে আছে। লোকের মুখে মুখে ঘুরেছিল নানা তত্ত্ব। নাস্তিকতা, আস্তিকতার প্রসঙ্গ তুলব না, কিন্তু এই ঘটনাটি আমার মনে বেশ গভীর দাগ কেটেছিল। তাই অত ছোটবেলার ঘটনা ভুলিনি আজও। তার পর থেকে ওই পাড়ায় দু্র্গার থানেই পুজো হয়। না হলেও অন্ততপক্ষে প্রাঙ্গণে ঘট পুজো করে নিয়ে তবেই বাইরে পুজো হয়।