অনেক কিছুই ছিল না উঠতি বয়সে। অষ্টমীর ধুনুচি নাচ। অঞ্জলি, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় নাচানাচি...। নেই বলে আফসোসও নেই। তা বলে একটা প্রেম, বিশেষ কোনও নারীর হাতছানিও কি আসতে নেই পুজো ঘিরে? উড়ন্ত বয়সে এমন একটাও ঘটনা ঘটল না জীবনে! এই ফাঁক ভরাই কী দিয়ে?
কলেজ ফ্রেন্ড পাশে, গার্ল ফ্রেন্ড নেই...
তখন নাইন-টেন। আপনাদের ভাষায়, ডানা গজিয়েছে। প্রথম স্বাধীনতা পেয়েছি বন্ধুদের সঙ্গে বেরনোর। বাড়ি ঢুকতে ন’টা দশটা হলেও মা-বাবা কিছু বলবেন না। পকেটে আবার ইচ্ছে মতো খরচের জন্য হাতখরচ। আমি যেন চারটে দিনের ‘মহারাজা’! আস্তে আস্তে কলেজ লাইফ। যে ছেলে এত দিন মা-বাবার শাসন টাসনে কাটিয়েছে, হঠাৎ করেই যেন লাগাম ছাড়া!
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। ক্যাম্পাস নারী বিবর্জিত! খালি মনে হত, এক জন মেয়েরও কি ভাল লাগে না ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে? সারা বছর হস্টেল। পুজোর কটা দিনের জন্য বাড়ি ফেরা। বাসের সিট নম্বর হয়তো বি ২। জার্নির আগের মুহূর্ত পর্যন্ত মনপ্রাণ ঢেলে ঈশ্বরের কাছে মিনতি- বি ৩ থেকে ৫, একটা সিট কোনও এক জন সুন্দরী দখল করুক। পাশে যদি না-ও বসে, আগে পিছে, ডাইনে, বাঁয়ে বসলেও হবে। জাস্ট দু’চোখ ভরে দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরব। কোথায় কী! ক্যাম্পাসের মতোই বাসেও একই দশা।
আরও পড়ুন: এ বছর পুজো থাক, আসছে বছর জমিয়ে হবে!
ফিরে এসে বন্ধুদের সঙ্গে তুমুল হুল্লোড়। দলে কিন্তু কোনও মেয়ে নেই। অনেকেই ব্যঙ্গ করে বলেন, মা-বাবার টিপিক্যাল ভাল ছেলে! আমি বলি, পোড়া কপাল! ‘গোল্ডেন পিরিয়ড’টাই বৃথা গেল।
গানবিলাসী, পোশাকবিলাসীও
অনেক জায়গাতেই আমার জীবন নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়। চট করে শপিং নিয়ে কেউ জানতে চান না। হয়তো ভাবেন, ছেলেদের আবার শপিং! ওই তো দোকানে গিয়ে দু’চারটে দেখেই কিনে নেবে। কিংবা অনলাইনে অর্ডার দিয়ে দেবে। আপনারা জানেনই না আমি কী প্রচণ্ড শপাহলিক। একটা সময়ে মা বলতেন, আমার সঙ্গে কেনাকাটা করতে বেরনো বিশাল ঝকমারি। কেন? আমি হয়তো একটাই ডেনিম কিনব। এবং সেটা নীল। কিন্তু একটা দোকান নয়! কম করে চারটে দোকান ঘুরে। কারণ, চারটে দোকানের নীল রং চার রকম ঠেকে আমার চোখে। তার পরেই মনে হয়, প্রথম দোকানের ডেনিমটাই যেন সেরা ছিল। ওটা কিনলেই হয়। ব্যস, আবার দৌড় সেই দোকানে। বিয়ের পরে বছর দুয়েক পিয়া চেষ্টা করেছিল আমাকে নিয়ে শপিং করার। ওর অভিজ্ঞতাও ভয়াবহ। আমার হাত ছেড়ে এখন নিজে নিজেই শপিং করে।
আমার খুব পছন্দের পোশাক পাঞ্জাবি।
এর পরে পোশাকের টেক্সচার। সুতির সঙ্গে অন্য ফ্যাব্রিক মিশিয়ে দিলেই আমার গায়ে কুটকুট। ফলে সেই নিয়েও আরেক প্রস্ত খুঁতখুঁতানি। তাই কেউ আমায় কিছু দিতে চাইলে ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কী দেবে! সেটা মনমতো হবে তো? উপহার দেওয়াতেও সমস্যা। কী দেব- ভাবতে ভাবতেই দিন কাবার।
তবে আমার খুব পছন্দের পোশাক পাঞ্জাবি। চারটে দিন পরতে পারলে শরতেই শরীরে দখিনা বাতাস! কিন্তু আমাদের দেশের আবহাওয়া তো যেমন বেয়াড়া, তেমনই আনপ্রেডিক্টেবল। পুজোর চারটে দিন চার রকম প্রকৃতি। একটা দিন গরমে ঘামিয়ে স্নান করিয়ে ছাড়বে। পরের দিনই হয়তো তোড়ে বৃষ্টি। বাকি দুটো দিন তর্জন-গর্জনই সার, বর্ষণ নেই! তাই টি-শার্ট, হাফ শার্টেই পুজো কাটে আমার।
একটা মাছ, দু’পিস মাংস...আর কত খাব?
এই একটা বিষয়ে আমায় নিয়ে কোনও জ্বালা নেই। সারা দিনে এক টুকরো মাছ, দু’টুকরো মাংস...যথেষ্ট। মা ছোটবেলায় অষ্টমীতে নিরামিষ চালু করেছিলেন। বড় হওয়ার পরে এই রীতি বাতিল করেছি। কারণ, আমি প্রতি বছর নিরামিষ খেয়ে খেয়ে বোর। আগে বাইরের খাবার জুটত কালেভদ্রে। তাই পুজো মানেই চারটে দিন নো বাড়ির রান্না। বাইরেই খাব যা পাব! এখন অবশ্য এত বাইরে খাই যে, তাতেও একঘেয়েমি এসে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: মেয়েদের দেখতাম আর ভাবতাম আমায় দেখছে কি না!
এ বারের পুজোয় তাহলে কী করব? হাতে এত অপশন যে, একটা না একটা কিছু ব্যবস্থা হয়েই যাবে। আর আমি তো ভোজনবিলাসী নই! ২০টা লুচি, ২৫ পিস মাছ, ৪০টা রসগোল্লা- ভাবতেই পারি না। পাতে একটু গুছিয়ে কিছু পড়লেই খুশি।
গানহীন পুজো...
শুধু একটাই ব্যতিক্রম এ বছর। গত ১০ বছর ধরে পুজোয় অনুপম রায় গানহীন থাকেনি। এ বছর করোনা সেটাও করে দেখিয়ে দিল! এই প্রথম পুজোয় আমি গান শোনাব না দর্শক-শ্রোতাদের।
করোনা, তোমায় থ্যাঙ্ক ইউ!