এ বছরের পুজো নিয়ে কি বলি বলুন তো? সরকারি নির্দেশনামা না আসার আগে প্ল্যান করারই তো উপায় নেই! করোনার কারণে সারা বছরের আনন্দটাই মাটি! মন খুলে শপিং-এর উপায় নেই। ঘুরে, বেড়ানো নেই। অঞ্জলি হবে ফুল ছাড়াই! পুজো হবে হাতেগোনা। প্যান্ডেল হবে ছোট ছোট। দূরত্ব মেনে প্যান্ডেল হপিং। পুজো আমেজের আর রইল কী! এত নিয়ম মেনে উৎসব হয়?
‘এবার পুজোয় বেড়াতে যাব না?’ কেমন সব হয়ে গেল! অনেক লম্বা সময়…
পুজোর ছুটি মানেই শুট বন্ধ। বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে প্রতি বছর বেড়াতে যাওয়া। কোনও বছর কলকাতায় থাকি না। পরিবারের সঙ্গে চলে যাই দিকশূন্যপুর। কখনও পাহাড়, কখনও সমুদ্র, যে বছর যেমন হয়। সেই আনন্দেও বাগড়া দিয়েছে অতিমারি। ভয়ের চোটে কোথাও, কিচ্ছু বুকিং করিনি।
কেমন যেন দম বন্ধ লাগছে। মনে হচ্ছে, বাড়ি, বন্ধু-বান্ধব আর নিউ আলিপুরে পাড়ার শারদীয়া। ঘুরে ঠাকুর দেখার কথা এ বার ভুলতে হবে।
আরও পড়ুন: পুজোর একটা শাড়ি পরে ফটো শুট করে ফেলেছি
মায়ের ভোগেও নিষেধাজ্ঞা!
দুঃখের কথা আরও বলব? শুনছি, পাড়ায় নাকি এ বছর মায়ের ভোগও হবে না। অথচ ছোট থেকে বড় হয়েছি অষ্টমী, নবমীর ভোগ খেয়ে। ছোট বেলায় পাড়ায় ভোগ বিতরণেও থাকতাম। সেটাও নাকি বন্ধ থাকবে। মায়ের পুজো হবে, ভোগ হবে না এ কেমন কথা! বাড়িতে থাকব বলে যেন ভেবে নেবেন না কোমর বেঁধে রান্নায় নেবে পড়ব। এটা-সেটা ভাল-মন্দ রাঁধব সারা বছর, সবার জন্য। পুজোয় রান্নাবান্নার নো সিন। চারটে দিন বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে খাবার নিয়ে আসা হবে। যদিও তাতেও সংক্রমণের ভয় থেকেই যাচ্ছে। সব দিক থেকেই বছরটা কেমন যেন নেগেটিভ! তাই না?
ঘুরে ঠাকুর দেখার কথা এ বার ভুলতে হবে: ইন্দ্রাণী হালদার।
পুজোর কেনা কাটা....
বাইরে যাওয়া নেই, ঠাকুর দেখা নেই, প্যান্ডেল হপিং নেই, কিচ্ছু যখন নেই তখন কেনাকাটাও ‘নেই’। ঠিক করেছি, নিজের জন্য একটাও শাড়ি বা ড্রেস কিনব না। একটা, দুটো নতুন শাড়ি আছে। যদি একটু বাইরে যাই মানে বেড়োনোর চান্স পাই...ওই গুলো দিয়েই ম্যানেজ করে নেব। উপহার একেবারেই না দিলে নয়। তাই আমার বাড়িতে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের সবাইকে দেব। আর ছোটদের। মা বারণ করে দিয়েছেন কেনাকাটা করতে। বলছেন, ‘একটুও ইচ্ছে করছে না এ সব।‘ পুজোর আগে প্রতি বছর এই কিনব, সেই কিনব, কত জল্পনা! এবারে কোনও উৎসাহই নেই। দোকানে নানা ধরনের পোশাক সাজানো। লোকের হাতে অর্থও আছে। ইচ্ছেটাকেই ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিয়েছে কোভিড। অষ্টমী, নবমীর সাজটাই যদি না সাজতে পারেন কেউ, কেন এখন শপিং করবেন!
অনলাইনেও যদি করোনা লুকিয়ে থাকে!
আপাতত এই ভয়ে কাঁটা। কেনাকাটা না-ই করলাম। খাওয়া-দাওয়া প্রচুর করব। আগেই বলেছি। রান্নার পাট থাকবেই না। তাহলে উপায়? অনলাইনে খাবার অর্ডার। সেটিও হতে দিচ্ছি না ইদানিং। কী জানি! যদি সুইগি, জোমাটো-তেও করোনাভাইরাস লুকিয়ে থাকে! তাই পাড়ার চেনা রেস্তরাঁ থেকে হোম ডেলিভারিতে খাবার আনানোটাই নিরাপদ। সেটাই করব। সেই তালিকায় বিরিয়ানি থাকবেই।
আরও পড়ুন: এ বার না হয় একটু অন্য রকম পুজো হোক
পুরী নইলে পন্ডিচেরি
লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট....এই দুটো জায়গার কোনও একটা বেছে নিতে পারি। কারণ, বেড়ানোর ভূত কিছুতেই ঘাড় থেকে নামতে চাইছে না। বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা সেরে রেখেছি। টুক করে পন্ডিচেরি ঘুরে আসার। শান্ত, নিরিবিলিতে সময়টা ভালই কাটবে। সেটাও যদি অসম্ভব হয় তা হলে হাতের গোড়ায় পুরী! এর আগেও বার তিনেক আমি পুজোয় পুরী গিয়েছি। জগন্নাথ দেব ভীষণ টানেন। এ বারেও চলে যেতে পারি। যদি মন্দির খোলা থাকে, তবেই।