২০২০ সাল বড় অদ্ভুত! একটা বছর ‘নেই’ রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে যেন কাটিয়ে দিলাম। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া।
ভীষণ চিন্তায় পড়েছি এ বছরের পুজো নিয়ে। বাঁকুড়ায় দেশের বাড়িতে ঘটা করে দুর্গাপুজো হয়। সেখানেই সবার সঙ্গে আনন্দ করে দিন কেটে যায়। সাল, তারিখ অনুযায়ী ২০২০-তে আমাদের বাড়ির পুজো ৮০ বছরে পা দিল। কপাল দেখুন, এ বছরেই করোনা আবহ! পুরোহিত মশাই আসবেন কী করে? ঢাকিরাই বা আসবেন কী ভাবে? পুজোর এত চাপ! সামলাবে কে?
২০২০-র পুজো তাই আমার কাছে ভীষণ টেনশনের। পুজো তুলতে প্রচুর লোকবল লাগে। আত্মীয়স্বজন সবাই বাইরে থাকেন। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, দেশের বাইরে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তাঁরা আসতেই পারবেন না। এ দিকে পুজোও হবে নিয়মনীতি মেনে। নমো নমো করে ঘট বসিয়ে পুজো সেরে দিলাম, এটি হওয়ার জো নেই।
পুরোহিত মশাই, ঢাকি এলেও তাঁদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়ও রয়েছে। তবু একটা বিষয়ে নিশ্চিন্ত, প্রতিমা আনার প্রয়োজন নেই। অষ্টধাতুর প্রতিমা বাড়িতে থাকেন। প্রতি বছর দোকান থেকে নানা রকমের প্রচুর অর্ডারি মিষ্টি আসে মায়ের ভোগ হিসেবে। এ বছর সবেতেই কাটছাঁট। আয়োজন অনেকটাই গুটিয়ে আনতে হবে পরিস্থিতির চাপে। বাজেটেও তাই কাঁচি।
আরও পড়ুন: বাবার জন্যই পুজোয় প্রেমটা হল না : সন্দীপ্তা
এ বছর যেটা হবে, সেটা পুরোটাই হবে আমার দায়িত্বে। অন্য বার ভাগাভাগি হয়ে যায়। এ বছর তাই দম ফেলার ফুসরত পাব না। কাজের ফাঁকে এখনই টুকটাক শপিংগুলো সেরে রাখার চেষ্টা করছি। আমার সব কিছুই কিনব অনলাইনে। উপহারও দেওয়ার থাকে। তবে বাবার জিনিস অনলাইনে কেনা একটু সমস্যার। পাজামা, পাঞ্জাবি অনলাইনে পছন্দসই পাওয়া যায় না। আর মা দুর্গার শাড়ি তো অনলাইনে পাবই না! ওটা কিনতে দোকানে যেতেই হবে।
আর মেরেকেটে একটা মাস বাকি পুজোর। সকালের রোদ, প্রকৃতি জানান দিচ্ছে মা আসছেন। কিন্তু মনে ঢাক্কির বাদ্যি নেই। ফলে, শপিংয়েও সে রকম ঝোঁক নেই। তার উপর মেট্রো, লোকাল ট্রেন চালু হলে শহরের অবস্থা কী দাঁড়াবে ভাবলেই ব্লাডপ্রেশার হাই হয়ে যাচ্ছে।
২০২০ সালটা বড় অদ্ভুত! একটা বছর ‘নেই’ রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে যেন কাটিয়ে দিলাম। পুজোর আগে উদ্বোধন, বিচারকের দায়িত্ব সম্ভবত নেই। ঘুরে ঠাকুর দেখার কোনও চান্সই নেই। কারণ, বাবা বয়স্ক। আমার থেকে তাঁর কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।
আরও পড়ুন: যতই অতিমারি আসুক, অষ্টমীর সকালের জন্য দুর্দান্ত শাড়ি দেবেই মা
পুজোর এই আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়।
এ বছরের চারটে দিন তাই পুজোর কাজে নিবেদিতপ্রাণ। সকাল থেকে সিল্কের জোড় পরব প্রতি বছরের মতোই। ওই সাজেই অঞ্জলি। অষ্টমীর বিকেলে পাঞ্জাবি-পাজামা মাস্ট। অন্য বিকেলগুলোয় জিন্স, টি-শার্ট, কুর্তি, ইচ্ছেমতো। সঙ্গে দেদার খাওয়া। রকমারি নিরামিষ ভোগ। ষষ্ঠীর দিন সাধারণ ভাত, শুক্তো, তরকারি, সাত রকমের ভাজা। অষ্টমীতে খিচুড়ি ভোগ। নবমীতে পোলাও ভোগ। চাটনি, দই ফি-দিন। দশমীতে বিসর্জনের পরে বাড়িতে মাছ ঢোকে। আর একটা জিনিস ডায়েট ভুলে খাই, সেটা মিষ্টি। এ বছর মিষ্টির লিস্টিতেও বোধহয় টান পড়বে!
আরও পড়ুন: অনলাইনে নয়, পুজোর উপহারের জামাকাপড় নিজের হাতেই কিনব
শুধু পুজোর আনন্দ নয়, এই চারটে দিন আমার সবচেয়ে প্রিয় আরও দুটো কারণে। ডায়েট আর জিম নেই। নিজের মতো করে আনন্দ খুঁজে নেওয়ার অবাধ ছাড়পত্র পাই। এখন মুঠোফোনেই জগৎ সংসার। এই চারটে দিন খুব দরকার ছাড়া সেই দুনিয়া থেকেও সরে থাকার চেষ্টা করব।
পুজোয় নবমিতা আসবে হয়তো। আড্ডা মেরেই কেটে যাবে দিনগুলো।