লোখান্ডওয়ালার বাড়ির পুজোটা আমার প্রাণের পুজো। আজ ২৫ বছর ধরে তিল তিল করে এর সবটুকু সাজিয়ে তুলেছি আমরা সবাই মিলে। আর আমাদের এই পুজোটাকে মুম্বইয়ের বাঙালিরাও আপন করে নিয়েছেন। শারদীয়ার ক’টাদিন তাই তাঁরা সবাই মিলে ভরিয়ে রাখেন আমাদের মণ্ডপ চত্বর। জমে যায় পুজো।
ভক্তিভরে অঞ্জলি, আরতির পরে ঢাকের তালে সবাই মিলে জমাটি ধুনুচি নাচ, পাত পেড়ে ভোগ খাওয়া, সিঁদুরখেলার মজা- কিচ্ছু বাদ দিই না আমি নিজেও। বলিউডের বন্ধুরা সবাই আসেন। নাচে-গানে-হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন। গায়ক বন্ধুরা দুর্দান্ত ফাংশন করেন। ভরপুর বাঙালিয়ানার উদযাপনে ফ্যাশন শো হ্য। নানা রকম স্টলে খাওয়াদাওয়া, কেনাকাটা চলে দেদার। তুমুল আড্ডা, হইচই আর ভিড়ে ঠাসা পুজোর আনন্দ-র কথা আর কীই বা বলব নতুন করে!
হ্যাঁ, নতুন বলতে বরং এ বারের পুজো। কারণ চেনা কোনও কিছুই এ বছর হবে না। সম্ভবও নয়। করোনার এই সাঙ্ঘাতিক পরিস্থিতিতে অন্য বারের মতো করে উদযাপনের কথা ভাবতেই পারছি না। তাই এ বার মানুষের নিরাপত্তা আর সুস্থতার কথা ভেবে এ বছর লোখান্ডওয়ালার পুজোর চেনা উদযাপন বন্ধ রাখছি আমরা।
আরও পড়ুন: মায়ের আঁচল ক্যারামে পড়ল...গুটি উধাও
কিন্তু এ বছরটা তো স্পেশালও বটে। কারণ এ বছর আমাদের বাড়ির পুজোর পঁচিশ বছর হল। তাই ভিড়ে ঠাসা উৎসব না হলেও এ বছরটা মানুষের পুজোয় মাততে চাইছি। এই উপলক্ষে তাই আমাদের পুজোর পুরনো উদযাপনগুলো থেকে সবটুকু আনন্দের মুহূর্তের কোলাজ একটা ভিডিও-র আকারে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি আমরা। আর পুজো বন্ধ তো কী হল! গত ২৫ বছর ধরে মুর্শিদাবাদ থেকে যে ঢাকি, ডেকরেটরস, শিল্পীরা এসে আমার লোখান্ডওয়ালার পুজোকে এত জমকালো করে তুলেছেন, তাঁদের মুখের হাসি কি মলিন হতে দেওয়া যায়? পুজোয় ওঁদের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব তাই আমরাই কাঁধে তুলে নিয়েছি।
নতুন বলতে বরং এ বারের পুজো।
এ বছরটা আসলে বড্ড মনখারাপের। একটা রোগ যে গোটা পৃথিবীটাকে এই পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করাতে পারে, তা অকল্পনীয় ছিল। এমন বিষন্নতার সময়ে সব ভুলে হইচই করে পুজোয় মাতি কী করে! সব ঠিক থাকলে, সব বাধা পেরিয়ে সামনের বছর ঠিক সব আগের মতো হবে পুজোয়। হবেই। আসছে বছর জমিয়ে হবে! আবার হবে!
আরও পড়ুন: মেয়েদের দেখতাম আর ভাবতাম আমায় দেখছে কি না!
তবে কলকাতার কথা আলাদা। মুম্বইতে যেমন দুর্গাপুজো ছাড়াও আরও অনেক উৎসবে মাতেন মানুষ; কিন্তু কলকাতা বা বাংলার মানুষ তো সারা বছর বসে থাকেন পুজোর দিনগুলোর দিকে তাকিয়েই। তাই কলকাতা বা বাংলা যদি এই অতিমারীর পরিস্থিতিতেও সব রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুষ্ঠু ভাবে উদযাপন করতে পারে, সেটাও কিন্তু একটা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে!