পুজোর আড্ডায় বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী ও বিদীপ্তা চক্রবর্তী।
কারও মনে পড়ছে নবমীর দিন। ‘অপারেশন টেবিলে ‘আমার রাত পোহালো’গাইতে গাইতে দ্বিতীয়বার মা হলাম নবমীর দিন...।’বিদীপ্তা
‘আমার প্রাক্তন প্রেমিকাকে আমার মা পুজোয় শাড়ি দিত...।’বিক্রম
‘পুজোর সকালে অঙ্ক না করায় বাবা দিদিকে ঘরে বন্ধ করে রেখেছিল। আর দিদি বিরহে কবিতা লিখেছিল।’সুদীপ্তা
তিনজনের পছন্দই হাল্কা সুতির পোশাক। সুদীপ্তা: ‘‘এখন ড্রেস পড়তে বেশ লাগছে। লুকটা বদলে যায়। আর পুজোতে আড্ডা মারাই আসল। তাই এমন পোশাক পরব না যাতে অস্বস্তি হয়।’’পাশ থেকে বিদীপ্তা বললেন, ‘‘আমার একটা নিজস্ব ধারা আছে। কটন শাড়ি। গুঁড়ো টিপ। রূপোর গয়না। আজ যেমন। পুজোতেও তেমন।’’মধ্যমণি বিক্রম বললেন, ‘‘পুজো মানে গরম! তাই হাল্কা পোশাক বেস্ট।’’
বিক্রম! নিজের ইচ্ছেতেই মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেন। এই আড্ডায় রাজি হলেন যে? বিক্রম বললেন, ‘‘সুদীপ্তাদি আর বিদীপ্তাদি বলেই রাজি হলাম। টুম্পাদির সঙ্গে তো ‘বিগ বস’ থেকে আলাপ। আর বিদীপ্তাদির সঙ্গে ফ্লোরে। ওরা দু’জনেই আমায় খুব ভাল চেনে। আর সেই কারণেই এই আড্ডাটা রিস্কি...কী যে বলবে এরা আমাকে...’’
অনুশ্রী মলহোত্রর সুতির ফেব্রিকে তিনজনেই ঝকঝকে।
আরও পড়ুন: ছোটবেলায় পুজোর প্রেম প্রচুর হয়েছে, নায়িকা হওয়ার পর…
আরও পড়ুন: মায়ের গন্ধ মাখা পুজোর চারটে দিন: যিশু সেনগুপ্ত
ইয়র্কার বল দিয়েছিলেন বিক্রম। কিন্তু হাজার হোক, তাঁর দুই দিদি। দু’জনেই যা বললেন, তাতে দাঁড়াল, ইন্ডাস্ট্রির সব্বাই বলে ওর মতো ভদ্র ব্যবহারের মানুষ খুব কম দেখা যায়।
বিক্রমের এক গাল হাসি!
কিন্তু দুই বোনের দুগ্গাপুজোর গপ্পগুলো কী?
প্রশ্নটা শুনেই বিদীপ্তা বললেন, ‘‘আমি অল্প করে বলে নিই। বাকিটা সুদীপ্তা গুছিয়ে বলবে। আমি ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলাম।’’
সুদীপ্তা উৎসাহে ধরে নেন, বলেন,‘‘আমি বলছি। ছোটবেলা থেকে ও দিদিগিরি ফলিয়েছে। বাবা আমাদের তিন বোনকে পুজোর জন্য টাকা দিত। আমাকে আর মেজদিকে ১০ টাকা আর দিদি বড় বলে ১৫ টাকা। ওমা! দিদি আমাদের থেকে রীতিমতো ভয় দেখিয়ে কমিশন নিত!’’
আরও পড়ুন: এই পুজোয় খাওয়া-ঘুম-রাধুবাবুর স্টু, নব প্রেম পঞ্চাশে
বিক্রম যোগ করলেন সঙ্গে সঙ্গে,‘‘আসলে আমার কাছে টুম্পাদি বড় দিদির মতো। এটা করবিনা! ওটা ভুল লিখলি কেন?ইত্যাদি। আর বিদীপ্তাদি সবরকম দুষ্টুমি শেখায়। ‘ফাগুন বউ’-এর জন্য আউটডোরে গেছি। বিদীপ্তাদি শিখিয়ে দিত, কত তাড়াতাড়ি প্যাক আপ করতে হবে। কত রাত অবধি কীভাবে আড্ডা দেব আমরা। কী খাব...’’
সুদীপ্তা এক্কেবারে দিদিসুলভ ভঙ্গিতে বিক্রমকে থামায়! বলে, ‘‘সবটা এখানে বলিস না।’’
বিক্রম খুব ভাল করেই জানেন, সব বলতে নেই। পেছনের অনেক ঝড়ঝাপ্টার পরেও বিক্রম নিজের মতো করে জীবনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
‘‘আমার কাছে পুজো মানে এখন বেড়াতে যাওয়া। হিমাচলে যাব আমি, সঙ্গে এক বন্ধু, ওর সদ্য ব্রেক আপ হয়েছে।’’এ বছর দুর্গাপুজো মানে তাহলে নিজেকে সময় দেওয়া।
কোনও স্পেশাল গিফ্ট?
বিক্রম বলেন, ‘‘নাহ, আমার স্পেশাল গিফ্ট দেওয়ার কোনও লোক নেই।’’
সুদীপ্তা আর বিদীপ্তা চেপে ধরে বিক্রমকে, যেমন যৌথ পরিবারের ঠাকুরদালানে ভাইয়ের নতুন প্রেমের খবর জানতে দিদিরা ঝাঁপিয়ে পড়তো।
বিক্রম প্রচন্ড চাপাচাপিতে হাসতে হাসতে বলে, ‘‘বান্ধবী তো আছে। কিন্তু আমার বান্ধবীরাও আমায় কিছু দেয় না। আমিও ওদের কিছু দিই না।’’
এভাবেই চলে আড্ডা। সুদীপ্তা পুজোয় বাচ্চাদের পোশাক কেনার গল্প করেন, আর বিদীপ্তা জানান বিরসাকে কিছু কিনে দিলে তাঁর পছন্দ হয় না। তাই তিনি কেনেন না।
গান গেয়ে ওঠেন সুদীপ্তা। বিদীপ্তাও। শরতের সোনা রঙে মখমলি আলো এসে পড়ে তিনজনের উচ্ছ্বাসে।
নাহ, পুজোয় আগের মতো নতুন প্রেম খোঁজা বা চলে যাওয়া নয়, নিজের আনন্দর মধ্যে অন্যদের খুঁজে নেওয়ার রাস্তায় হাঁটবেন এবার এই তিনজন। সেটা হতে পারে পুজোর শপিং কমিয়ে কেরলের বন্যায় সব হারানো মানুষের পাশে থাকা, বা এমন কোনও বাচ্চাদের পুজোর জামা কিনে দেওয়া যাদের পুজোয় জামা কেনার কেউ নেই...
মেক আপ: প্রসেনজিৎ মুন্সি
হেয়ার: হেমা মুন্সি
স্টাইলিস্ট: অনুশ্রী মলহোত্র
ক্যামেরা: অজয় রায়
ছবি: অজয় রায়