সরসরি ভূতেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার সৌভাগ্য না হলেও একটা ঘটনা মনে পড়লে আজও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। লৌকিক-অলৌকিক নিয়ে আপনার বিশ্বাস টলাতে চাই না আমি। কিন্তু গল্পের শেষে একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই থাকবে আপনার কাছে। তখন ‘ত্রিনয়নী’ ধারাবাহিকের শ্যুটিং করছি। কলকাতার একটি নামী স্টুডিয়োতে শুটিং চলছে। সেখানে প্রত্যেকেই বিশালক্ষ্মী মাকে খুব জাগ্রত মানতেন। রোজ নিষ্ঠাভরে ভোগ নিবেদন করা হত মায়ের কাছে। সত্যি বলতে ওই স্টুডিয়োতে প্রায় রোজই কিছু না কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটত, যা যুক্তিতে হয়তো মেলানো যাবে না কখনওই।
স্বচক্ষে মাকে কোনও দিন দেখতে না পেলেও মায়ের উপস্থিতি নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না আমার।
এক রাতে শ্যুটিং চলছিল। ধারাবাহিকের দৃশ্যের স্বার্থে চুল খোলা রাখতে হয়েছিল আমায়। তবে ক্যামেরা বন্ধ হতেই ওখানকার কলাকুশলীরা সর্বদা সতর্ক করতেন রাতে খোলা চুলে না ঘুরতে। বরং চুলে একটা ক্লিপও যেন আমি লাগিয়ে নিই।
এর পরের ঘটনাটির ব্যখ্যা আজও আমার কাছে নেই। সেই রাতে শুটিং সেরে বাড়ি চলে যাই। পরদিন স্টুডিয়োতে ঢুকতেই আমাকে প্রোডাকশনের এক দাদা এসে বলেন, “তুমি তো একটুও ঝাল খাও না। রাতে রুটি খাও। আগের দিন রাতে শ্যুটিং শেষে ঝাল ঝাল মাংস দিয়ে ভাত খেলে কী করে?” এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেন, “বারবার বারণ করলাম, খোলা চুলে না ঘুরতে। সেই খোলা চুল নিয়েই ক্যান্টিনে খেতে গিয়েছিলে!”
আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ। এ কী বলছে? হতচকিত হয়েই বললাম, “আমার গতকাল রাত পর্যন্ত শুটিং ছিল বটে, কিন্তু ১১টার মধ্যেই তো প্যাক-আপ হয়ে যায়! আর আমি বাড়িও চলে যাই। বাড়িতেই রাতের খাওয়া সেরেছি। ক্যান্টিনে তো আমি যাইনি!” আমার কথা প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি ওই দাদার। সর্বসমক্ষেই জোরগলায় বললেন, “বোঝো কাণ্ড! আমি নিজে বসে খাওয়ালাম।” যদিও দাদা পরে মানতে বাধ্য হন যে, সেদিন ক্যান্টিনে আমি ছিলাম না। কারণ আমি ক্যান্টিনে কোনও দিন খাই-ই না। আমি জানি না, সে রাতে দাদা কাকে খাইয়েছিলেন। তবে আমি বিশ্বাস করি মা বিশালক্ষ্মীই আমার বেশে এসে ভাত খেয়ে গিয়েছেন। যদি তিনি না-ই হন, তা হলে ক্যান্টিনে এত রাতে আমার উপস্থিতি কী ভাবেই বা সম্ভব হল? যেখানে আমি নিজেই তখন বাড়িতে! উত্তর আছে?
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।