ছবি সংগৃহিত
দুর্গা পুজো তো সবার, কলকাতার বাঙালি, পচিমবঙ্গের বাঙালি, ভারতবর্ষের গণ্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর সব কোণায় ছড়িয়ে থাকা বাঙালির মনে দুর্গা পুজো মানে এক অনন্য উৎসব । আর এবার সেই খুশির উদ্যাপনের রঙে রঙ মেলাতে তৈরি আরও একটি প্রবাসের পুজো, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের বাঙালী কমিউনিটি ত্রিবেণী এলসবেরি!
দ্বিতীয় বছরের জন্য এই দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছেন তারা । “১১ থেকে ১৩ ই অক্টোবর তিথী নক্ষত্র খেয়াল রেখেই মাতৃ আরাধনায় মেতে ওঠার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত এই কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত সদস্যরা।”- জানালেন মৌসুমী পাল এবং সুমনা আচার্য।
যুক্তরাজ্যের বেরিফিল্ড এলসবেরি-র এলসবেরি ভ্যেল অ্যাকাডেমিতে এই দুর্গোৎসবের আয়োজন হয়েছে। না শুধু নিয়ম আর শ্রদ্ধার সঙ্গে পুজোই নয়, সঙ্গে রয়েছে থিম ও। “দ্বিতীয় বছরের পুজোতে আমাদের থিম “আলো”, শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতবর্ষ না, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যে অযাচিত অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, তার বিপরীতে গিয়ে মা দুর্গার কাছে আলোর উপাসনা করা, বিশেষ করে বলতে গেলে চেতনার আলোর উপাসনা করা, এই বিষয় মাথায় রেখেই এই বছরের থিম ভাবা হয়েছে।”- জানালেন অন্যতম সদস্য অরিন্দম রায় ও দেবাশীষ সেনগুপ্ত।
ছবি সংগৃহিত
“আমাদের পুজোর একটা বিশেষত্ব আছে, আমি খুব গর্ব করে বলতে পারি, সমস্ত কাজের ফাঁকে আমাদের সদস্যরা নিজেরাই থিম নির্বাচন করে এবং আমাদের মণ্ডপ থিম ভিত্তিক করে সাজিয়ে তোলেন। বিগত বছরে আমাদের থিম ছিলো পুজো মোটিফ, সমস্ত সদস্যরা মিলে আমরা সাজিয়ে তুলেছিলাম মণ্ডপ, দেশ থেকে দূরে থেকে এটা যে কি আত্মিক অনুভূতি! এই বছরেও ব্যতিক্রম হলো না। এই বছর মা দুর্গার কাছে অন্ধকার অপসারণের প্রার্থনায় আমাদের থিম আলো, এই পুজোয় আমাদের আলোর থিমের সঙ্গে মানানসই নানান সাজের হাতে তৈরী কাগজের ল্যান্টার্ন দিয়ে আমাদের সহায়তা করছে কলকাতা ভিত্তিক সংস্থা ‘ডেস্টিনি”- জানালেন শর্মিলা দে, সঞ্জয় পাল ও শুক্লা বিশ্বাস।
শুধু দুর্গাপুজোর উদ্যাপন না, এই পুজো আসলে তাদের চ্যারিটি-র ও দ্বিতীয় বছরের উদ্যাপন। “বিগত বছরের দুর্গা পুজো আয়োজনের পর আমরা কালী পুজো ও আয়োজন করি, পয়লা বৈশাখ - এর মতো উৎসব ও সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি আমরা। আমাদের চ্যারিটি প্রতি দুইমাস অন্তর এলসবেরি খাদ্য তহবিলের জন্য খাদ্য সামগ্রী আহরণের কাজ করে। আমাদের পুজোতে অটিজম-এ আক্রান্ত শিশুদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে বাচ্চাদের নিয়ে বসে আঁকার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এ বছর, বিস্টার অটিজম নামক সংস্থার অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য এই ছবিগুলি নিয়ে বিশেষ অকশন-এর আয়োজন করা হয়েছে, যার থেকে উঠে আসা অর্থ তাদের মঙ্গলার্থে কাজে লাগানো হবে। আমরা কলকাতার একটি সংস্থা ‘ডেস্টিনি’-র সঙ্গেও যুক্ত, যারা যৌন হেনস্থার শিকার মহিলা ও পাচার চক্রে আক্রান্ত শিশুদের মঙ্গলার্থেও কাজ করে, তাদের সমস্ত রকম সহায়তা দিতে প্রস্তুত আমাদের চ্যারিটি। উৎসব তো তখনই, যখন মানবিকতায় তার ভিত্তি প্রস্তর নির্মিত হয়। আমরা এ ভাবেই প্রতি বছর দুর্গোৎসব আয়োজন করতে চাই, তবে যারা এই উৎসবের আলোর নিচের আঁধারে, তাদের আলোর দিশা না দেখালে মাতৃ আরাধনা বোধহয় সম্পূর্ণ হয় না। আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের আসন্ন পুজোর থিম ‘আলো’ বৃহতর্থে সে কথাই জানাচ্ছে সমস্ত পৃথিবীকে ।”- জানালেন অন্যতম সদস্য শ্রাবণী ভট্টাচার্য, ইন্দ্রজিৎ দে এবং বিশ্বজিৎ আচার্য।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।