ছবি সংগৃহিত
শ্রী শ্রী রামায়ণে কথিত আছে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র অসুর প্রধান রাবণকে বধ করার জন্য শ্রী শ্রী মা দুর্গার অসময়ে শরৎকালে পুজোর আয়োজন করেছিলেন। যা সাধারণত বসন্তকালে আয়োজিত হতো। প্রাত্যহিক বা নিয়মিত অনুষ্ঠানের বাইরে মানুষ প্রয়োজনের নিরিখে কখনো কখনো এইরূপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, এক অদৃশ্য শক্তির আশীর্বাদ বা অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য। সেই প্রথা যুগ যুগান্তর ধরে চলছে এবং এখনও তার ব্যতিক্রম হয় না।
এই বছর ২২ শে জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রাম মন্দিরের দ্বারোদঘাটন হয়েছে এবং জনসাধারণের দর্শনের জন্য খোলা হয়েছে। হিন্দুদের বিশ্বাস ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের জন্মস্থান যেখানে সেই জায়গাটিতেই বর্তমান রামলালার মূর্তি বিরাজমান।
বিভিন্ন কারণে বসন্তকালের তুলনায় হিন্দু ধর্মালম্বীরা শরৎকালে মাতৃ আরাধনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বব্যাপী দুর্গোৎসব পালন করে । স্টকহোম সর্বজনীন পুজো কমিটি তার ব্যতিক্রম না করে এই বছর ১১ থেকে ১৩ই অক্টোবর ২০২৪ স্টকহোমের উপকণ্ঠে যারফালা জিমনাসিয়ামে অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গা পুজোর আয়োজন করেছে।
সম্প্রতি কিছুদিনের ব্যবধানে দুই দেশে ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনা সারা বাঙালি জাতিকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে।
কয়েক সপ্তাহব্যাপী সরকার বিরোধী গণ আন্দোলনের পরে শাসকদল বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করে এবং সরকার প্রধান প্রাণনাশের হুমকি থেকে বাঁচতে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সামরিক বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বিদেশে সাময়িক রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়।পদত্যাগ পরবর্তী কয়েকদিন সময় ব্যাপকভাবে ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে বিরোধী বাহিনী। এমনকি বেশকিছু প্রাণহানি ও বিশেষ কয়েকটি ধর্মাবলম্বীদের উপর ব্যাপক অত্যাচার হয় এবং তা এখনো কমবেশি চলছে।
এর কয়েক দিনের ব্যবধানে ঘটে গেল কলকাতার একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের কর্তব্যরত মহিলা ডাক্তারের উপর পাশবিক অত্যাচার ও হত্যার ঘটনায, যার রেশ এখনো অব্যাহত।
উপরোক্ত দুটি ঘটনাতে যাদের এই দুটি দেশের/অঞ্চলের সঙ্গে যোগ আছে তারা তাদের মত করে এই দুটি ঘটনাতে প্রতিবাদ জানায়। আমাদের সংগঠন ও তার সদস্যরা এই দুটি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।
স্বাভাবিকভাবেই বিদেশে বসবাসকারী বাঙালিদের মন কমবেশি ভারাক্রান্ত। আমরাও পুজোর আয়োজন করছি নিয়ম ও প্রথাকে ধরে রাখার জন্য। উৎসবের আনন্দ বা আমেজ উধাও।
অসুর বিনাশিনী মার কাছে প্রার্থনা তুমি সেই শক্তিকে ধ্বংস করো যা আমাদের সংবেদনশীল মানুষ হতে দিচ্ছে না, আসুরিক প্রবৃত্তিগুলিকে বিকশিত করছে।
দেখতে দেখতে SSPC ২০১৩ সালে পথ চলা শুরু করে এখন কৈশোরের দিকে পা ফেলছে। গত বছর আমরা একটি মাইলফলক স্পর্শ করি। তা স্মরণীয় করে রাখার জন্য আয়োজন ছিল ব্যাপক।
প্রতিবছরের মত এই বছরেও সপ্তাহান্তে শুক্র থেকে রবি এই তিন দিন পুজোর আয়োজন করা হয়।
পুজোর প্রথম দিন অর্থাৎ ২০ শে অক্টোবর ২০২৩ শুক্রবার আমন্ত্রিতের অধিক জনসমাগম হয়েছিল যদিও সেটি একটি কাজের দিন ছিল। পুজো, পুষ্পাঞ্জলি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর প্রসাদ ও নৈশ আহারের বন্দোবস্ত ছিল। স্টকহোমস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রধান মাননীয় শ্রী মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন। উনি বক্তব্যে SSPC-র পুজো আয়োজনের প্রশংসা করেন। সমাজে অন্যায় অবিচার ও অসুর শক্তির দমনের মাধ্যমে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শারদীয় দুর্গাপুজোর উপযোগিতা ব্যাখ্যা করেন।। শনিবার পুজোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিন। সারাদিন পুজো, পুষ্পাঞ্জলি,সন্ধিপুজো, ক্যুইজ, নাচ, গান, নাটক প্রভৃতি অনুষ্ঠানে ভরা দিন। সন্ধ্যায় স্টকহোমস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের রাজদূত মাননীয় শ্রী তন্ময় লাল সস্ত্রীক সন্ধি পুজোয় উপস্থিত ছিলেন। তার বক্তৃতায় উপস্থিত সকলকে দুর্গা পুজোর সম্ভাষণ জানান।
দুর্গাপুজো হল নারী শক্তির ও তার গুণের আরাধনা যা হাজার হাজার বৎসর আমাদের পুরাতন সভ্যতাকে বয়ে নিয়ে চলেছে। ওই সন্ধ্যায় সুইডেন ডেমোক্র্যাট দলের সাংসদ মাননীয় নিমা গোলাম আলী পওর তার সংক্ষিপ্ত ভাষণে সুইডেনের উন্নয়নে ভারতীয়দের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। ভারতীয় সংস্থাগুলি বিশেষত টেকনোলজি, মেডিসিন, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে সুইডেনের বাণিজ্যে। যা শুধু কর্মসংস্থানেরই সুযোগ করেনি এমনকি উদ্ভাবন ও জ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়েছে।
এছাড়াও ওই সন্ধ্যায় আয়োজনে ডেমোক্রেট ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে আমাদের পুজো আয়োজনের প্রশংসা করেন। এখানে উল্লেখ্য ২০২৩ ক্যুইজের বিষয় ছিল ভারতীয় চন্দ্রযানের দক্ষিণ গোলার্ধে পদার্পণ। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে অনূর্ধ্ব ১৬ বছরের বাচ্চারা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি ছিল আমন্ত্রণ মূলক যাতে এখানকার পরিচিত সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলি অংশগ্রহণ করে। এখানে উল্লেখ্য শিল্পীরা প্রধানত স্থানীয়।
রবিবার অর্থাৎ শেষ দিনে দশমী বিহিত পুজো বিসর্জন, সিঁদুর খেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিন দিবসীয় পুজো অত্যন্ত আনন্দ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে শেষ হয়। ভারতের বিভিন্ন দৈনন্দিন সংবাদপত্র ও ডিজিটাল মিডিয়া আমাদের পুজোর খবর পরিবেশন করে উৎসাহ প্রদান করে।
পুজো প্রাঙ্গণে খাবার, সাজসজ্জা, বই, বস্ত্র ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রদর্শনী ও কেনাকাটার আয়োজন করা হয়েছিল।
নবীন প্রজন্ম যাদের শিকড় ভারত-বাংলাদেশে রয়েছে তারা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে দেখতে পায় এই উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও সকল পঞ্জিভূত দর্শকদের চারবেলা প্রসাদ ও আহারের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। যেহেতু হলের আসন সংখ্যা সীমিত তাই আগাম পঞ্জিভূত করার প্রয়াস রাখা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য পঞ্জিভূত বা যোগদানের জন্য কোন আর্থিক সাহায্য আরোপ করা হয় না। স্বেচ্ছা দান ও SSPC- র সদস্যদের আর্থিক আনুকূল্যে এই পূজা পরিচালিত হচ্ছে।
য়া দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন ন সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমঃ নমঃ।।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।