লন্ডন থেকে প্রায় ৬৪ মাইল দূরে, ইংল্যান্ডের পূর্বভাগে কেমব্রিজ শহরে বাঙালি মন মেতে উঠেছিল শারদ উৎসবের তোড়জোড়ে। যদিও সময়টা এই বার আলাদা ছিল, কিছু দিন আগে কলকাতায় তিলোত্তমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অবিচার বহু দূরে থেকেও আঘাত হেনেছে প্রবাসী মনে। তবু পুজোর আনন্দ থেকে বাঙালিকে বিচ্যুত করা যায় না। মা দুর্গা যে সকলের শক্তিদায়িনী অভয়দায়িনী, তাই মায়ের আরাধনা এই কঠিন সময়ে সাহস জোগাবে। এই মন্ত্রেই কেমব্রিজের ‘ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটি’ উদযাপন করেছিল এই বছরে মায়ের পুজো। সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যার মূল কথা হল নারীশক্তির জয়গাথা এবং মূলমন্ত্র হল ‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’। তাই দুর্গাপুজো বাঙালির জাতীয় উৎসব হলেও সব দেশের সব মানুষের সাদর আমন্ত্রণ থাকে এই পুজোয়।
এই পুজোর শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের উৎসাহে ভর দিয়ে পথ চলতে শুরু করা সেই পুজো এই বছর ২২-এ পা দিল। এবার ৪ থেকে ৬ অক্টোবর কেমব্রিজ শহরের নেদারহল স্কুলের হলে আয়োজন করা হয়েছিল মায়ের পুজো।
পুজোর দিনগুলোয় কলকাতার আর পাঁচজন বাঙালির মতো প্রবাসীরাও মেতে ওঠেন আড্ডা, খাওয়াদাওয়া, সাজগোজ আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। নিষ্ঠা সহকারে সমস্ত নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সপ্তাহান্তে মায়ের পুজো করা হয়। প্রতি বছর সদস্যরা মিলে ভোগ বানানোর আয়োজন করেন। এত আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য, পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে নিজের শিকড়কে আঁকড়ে ধরে রাখার শিক্ষা দেওয়া। উৎসবের মধ্যে দিয়ে ছোটরা বাংলা ভাষাকে চিনতে শেখে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তারা বাংলা গান, কবিতাকে আত্মস্থ করে নেয়। থাকে ঢাকের বাদ্যি, ভোগ খাওয়ার আয়োজন, বিকিকিনির পসরা, ছোটদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা আর অবশ্যই সিঁদুরখেলার আনন্দ। এই বছর কলকাতা থেকে ঢাকিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
পুজোয় উপস্থিত ছিলেন কেমব্রিজ সিটি কাউন্সিলের মাননীয় প্রতিনিধিরা। যাঁদের সহায়তায় এই অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ হয়েছিল। শাড়ি, গয়না, ঘর সাজানোর জিনিস থেকে শুরু করে ফুচকা, বিরিয়ানির দোকান, সব কিছুর আয়োজন ছিল। ধুনুচি নাচ, আরতি, হোম, অঞ্জলি দেওয়া থেকে নাচ-গান, কোনও কিছুরই খামতি ছিল না। সব বিপদকে জয় করার মন্ত্র নিয়ে পুজোর দিনগুলোয় কেমব্রিজ হয়ে উঠেছিল ‘মিনি কলকাতা’ আর সব শেষে বিজয়ার মিষ্টিমুখের সঙ্গে প্রবাসীরা বলে উঠেছিলেন ‘আসছে বছর আবার হবে’।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।