পুজো এখানে দু’দিন। কিন্তু পরিকল্পনা চলে বছর ভর। সান দিয়াগো ‘সৈকত’-এর পুজো এবার আঠারোতম বছরে পা দিল। একশো বাঙালির তৈরি করা পুজো এখন মহীরুহ। বাঙালি, অবাঙালি ও আমেরিকাবাসী মিলিয়ে পুজোয় লোক সমাগম হয় এবার হাজারেরও বেশি।
সেই কথা মাথায় রেখে বছর দুই ধরে পুজোর আয়োজন শুরু হয়েছে ৩৮০০ মাইকোনোস লেনের কারমেল ভ্যালি মিডল স্কুলে। দু’দিন ধরে চলে দেদার ভূরিভোজ। বিরিয়ানি থেকে কালিয়া, পান্তুয়া থেকে সন্দেশ।
সংস্কৃতি মনস্ক বাঙালির নৃত্যনাট্য থেকে নাটক, যাত্রা থেকে ঢাকের বাজনার মহড়ায় ব্যস্ততা তুঙ্গে। এ বারের পুজোয় সন্ধে আসর মাতাতে দেশ থেকে আসছে দেশের দুই শিল্পী। বিজয়া দশমীর দিন হলুদ পাঞ্জাবির দল বিসর্জনের বাজনার মাধ্যমে মাকে পরের বছর আসার আহ্বান জানায়। ট্রাকে উমা মাকে তুলতে গিয়ে অনেকেরই ভিজে আসে চোখের পাতা।
দেবপ্রিয় নামের যে মানুষটি এ বছর পুজোর দায়িত্বে। তিনিই এই দায়িত্বে থাকেন বছর বছর ধরে। পুজোর কাজে যাঁরা ব্যস্ত থাকেন, ইমেল চলে এসেছে, কোথায় কখন গিয়ে পুজোর আয়োজন শুরু করতে হবে। দেশ থেকে চলে এসেছে দূর্গা মায়ের শাঁখা, পলা, সিঁদুর, শাড়ি ও বিভিন্ন সঙ্গমের জল ও মাটি। বেল পাতাও আসে, ‘ ফ্রোজেন’ করে রাখা হয়। হোক না ‘ফ্রোজেন’, তবু তো বেল পাতা। পুজোর আগে দেশে যে যায় তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয় দেশ থেকে পুজোর সামগ্রী নিয়ে আসার জন্য।
কোনও ত্রুটি বিচ্যুতি যাতে না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই এই আড়ম্বর। দুর্গতিনাশিনীর আরাধনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাহিত্য আরাধনা। সাহিত্য ছাড়া বাঙালি জীবনের কথা ভাবাই যায় না। যায় না বলেই প্রতি বছর সৈকত থেকে প্রকাশিত হয় ‘সৈকত’ বাংলা পত্রিকা।পত্রিকার প্রচ্ছদ থেকে প্রুফ দেখা সব প্রবাসী বাঙালিরাই করে থাকেন। এবারে এদের পুজোর থিম সং ‘সৈকত সেজেছে পুজোর আনন্দে’ গেয়েছেন বাংলার এক নামী শিল্পী।’’
সান দিয়াগো “সৈকত” শুধু মাত্র মৃন্ময়ী মায়ের আরাধনা করে না, দেশের বেশ কিছু সেবামূলক কাজও করে।
পুজো শুরু হয়েছিল গোটা কয়েক বাঙালি নিয়ে একজন স্বহৃদয় ব্যক্তির বাড়িতে। কালক্রমে বাঙালিদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সৈকত কমিটি সিদ্বান্ত নেয় কুমারটুলি থেকে পরিবার সমেত মা দুর্গাকে আনার। সেই থেকে পুজো এলে এখানকার বাঙালিরা মেতে ওঠেন সান দিয়েগোর ঝলমলে এই শহরে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।