Munich Durga Puja celebration

‘পুজোতেও আছি, প্রতিবাদেও আছি’, উদযাপনের মধ্যেই সম্প্রীতির সঙ্কল্প মিউনিখের শারদোৎসবে

পুজোর উদ্যোক্তা, মিউনিখের এই পুজোর ঠিকানা ‘সম্প্রীতি’ এক দশক পার করল জার্মানিতে। কিছু দিন আগে লোপামুদ্রা মিত্র ও জয় সরকার এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূচনা করে গিয়েছেন এই দশ বছরের উদযাপন। ‘শারদ সম্প্রীতি ২০২৪’-এর উন্মাদনা তাই এক বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। দশ বছরে ‘সম্প্রীতি’র সংসারও বেড়েছে সদস্য-সংখ্যার নিরিখে।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

মিউনিখ শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ১০:১৮
Share:

মিউনিখ শারদোৎসব

গত রবিবার, যে দিন রোদ ঝলমলে মিউনিখে পা দিলেন নৈহাটির প্রশান্ত ভট্টাচার্য, সে দিনই ছিল অক্টোবর ফেস্টের শেষ দিন। পড়ন্ত বিকেলে মিউনিখের মধ্যস্থল ময়দানে, যা থেরেসিয়েনউইজে নামে পরিচিত, তখন দেশবিদেশ থেকে আসা মানুষের ঢল। বিশ্বের বৃহত্তম লোকউৎসবের শেষ দিনের আমেজ তুঙ্গে। প্রশান্ত কিন্তু ভারত থেকে আগত কোনও অক্টোবর ফেস্টমুখী পর্যটক নন। তিনি প্রতি বছর এসময়েই মিউনিখে আসেন বিশেষ এক কাজে। এ বছরেও যার অন্যথা হয়নি। ২০১৯-এ গোড়াপত্তনের সময় থেকেই মিউনিখে মা দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে প্রশান্তরই পৌরোহিত্যে। ইউরোপের অগ্রণী বাঙালি সংগঠন আয়োজিত দুর্গোৎসব ‘শারদ সম্প্রীতি’তে। বরাবরের মতো দিনক্ষণ তিথি মেনে এ বারেও সেখানে মহাষষ্ঠী থেকে দশমী উদযাপিত হচ্ছে ৯-১৩ই অক্টোবর।

Advertisement

প্রশান্তর কথায়, “প্রতি বছর আসতে আসতে এ এখন আমার ঘরের পুজো। এমনকি কোভিড মহামারীতেও বাদ যায়নি মায়ের বোধন। তখন নৈহাটি থেকেই পুজো সারতে হয়ছিল, কিন্তু আরাধনায় খামতি রাখেননি কেউ। এই ষষ্ঠ বছরেও আচার কিংবা বিধি নিয়ে কোন আপস নয়। পঞ্জিকা মতে দেশের সঙ্গে সময় মিলিয়ে বোধন থেকে সন্ধিপুজো আর সিঁদুর খেলা-- সবই হবে নিয়ম মেনে।“

পুজোর উদ্যোক্তা, মিউনিখের এই পুজোর ঠিকানা ‘সম্প্রীতি’ এক দশক পার করল জার্মানিতে। কিছু দিন আগে লোপামুদ্রা মিত্র ও জয় সরকার এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূচনা করে গিয়েছেন এই দশ বছরের উদযাপন। ‘শারদ সম্প্রীতি ২০২৪’-এর উন্মাদনা তাই এক বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। দশ বছরে ‘সম্প্রীতি’র সংসারও বেড়েছে সদস্য-সংখ্যার নিরিখে। কারণ, ভারত-জার্মানির দ্বিপাক্ষিক নানা চুক্তির ফলে পড়াশোনা, গবেষণা কিংবা চাকরি– সব ক্ষেত্রেই বাঙালির আগমন বেড়েছে। তাই শুধু হল ভাড়া করে নয়, সেই সঙ্গে রীতিমতো প্যান্ডাল-তাঁবু খাটিয়ে ব্যবস্থা করতে হয় কেবল মাত্র সদস্য পরিবারের পাঁচ দিনের পুজো উদযাপন, মনোরঞ্জন আর খাওয়াদাওয়ার আয়োজনে।

Advertisement

হাওড়ার ছেলে সঞ্জীব মিউনিখ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হু-হু করে রেস্তরাঁ খুলে চলেছেন। কোথাও স্ট্রিট ফুডের মেনু যেখানে আছে ফুচকা, কোথাও বা ফাইন ডাইনিং। ‘শারদ সম্প্রীতি’র খাবারের দায়িত্ব বরাবরের মতো এ বারেও সঞ্জীবের কাঁধে। “পঞ্জাবি হলেও আমি তো কলকাতারই ছেলে। তাই সম্প্রীতির পুজো আমারও পুজো,“ বললেন সঞ্জীব। এ বারেও সপ্তমী থেকে দশমী, রোজ দু’বেলা ধরলে প্রায় কয়েক হাজার খাবারের প্লেট হবে। ঝুরঝুরে আলু ভাজা থেকে তন্দুরি চিকেন, খিচুড়ি-বেগুনি থেকে চিলি ফিশ, মটন থেকে রসমালাই- বাঙালির রসনাকে তৃপ্ত করার কোন কসুর যে ছাড়বেন না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করলেন তরুণ এই উদ্যোগী।

প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে দর্শক মনোরঞ্জনের ভার নিয়েছেন খোদ ‘সম্প্রীতি’র সদস্যরাই। অষ্টমীর সন্ধেয় কলকাতার ব্যান্ড ‘অনুভুতি’র অনুষ্ঠান ছাড়া বাকি দিনগুলোয় স্থানীয় প্রতিভাদেরই বরাবরের মতো দেখা যাবে। এ বারের বিশেষ আকর্ষণ সত্যজিতের চরিত্রদের নিয়ে কল্পিত, ছোটদের নাটক ‘সত্যজিতের কল্পনা’। রচনা আর রূপায়ণে ক্লাবেরই এক সদস্য। অপু-দুর্গা, গুপী-বাঘা, ফেলুদা-তোপসে- অভিনয়ে যে কচিকাঁচারা পিছিয়ে নেই, তার এক ঝলক নাকি রিহার্সালেই বোঝা গিয়েছে। বড়দের নাটকেও এ বার বড়সড় চমক। এ বারের মৌলিক নাটক ‘দুগগা এল’ আগাগোড়া একটি পলিটিকাল স্যাটায়ার, বর্তমান সময়ের নিরিখে যা সমাজের দর্পণ হিসেবেও উপস্থাপিত হবে। তাই হাসি, ব্যঙ্গ, রঙ্গের সঙ্গে তাতে আসবে অভয়ার প্রসঙ্গও।

বিদেশের বুকে বাঙালিয়ানার সঙ্গে সংহতির বার্তা দিয়েই তাই সাজছে ‘সম্প্রীতি’র এ বারের পুজো। প্রশান্তর মন্ত্রোচ্চারণে তেমনই সঙ্কল্প নেবে মিউনিখবাসী বাঙালি।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement