ছবি সংগৃহিত
পুজো মানেই ঘরে ফেরার পালা। কিন্তু যে মানুষগুলো ঘর থেকে বহুদূরে, যারা নতুন শহর, নতুন দেশে ঘর বেঁধেছে তারা কি করে জানেন! প্রবাসে বসে তারা দেশের মাটি আর সোঁদা গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা করে। বাঙালির এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, এই বারো মাসে তেরো পার্বণ, সেটা নতুন প্রজন্মকে অনুভব করানোর চেষ্টা করে।
প্রবাসে থাকা বঙ্গ সন্তান-সন্ততিদের এমনি একটি প্রচেষ্টা ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টি দুর্গা পুজো ‘ঐক্যতান’। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যার উদ্দেশ্য হল আর্তের সেবা করা এবং বাঙালিয়ানাকে বাঁচিয়ে রাখা। এই পুজো সকলের পুজো, তাই বাঙালি সংস্কৃতির একটি ছবি সকলের সামনে তুলে ধরাই এই পুজোর লক্ষ্য। অরেঞ্জ কাউন্টির স্থানীয়রাও এই পুজো দেখে ভারত এবং ভারতের সংস্কৃতির সম্পর্কে উৎসাহিত কিন্তু তারা অবগত ছিলেন না। এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ছবি দেখে গেছে তারা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাবুল সুপ্রিয়
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহান্তে ঐক্যতানের প্রথম দুর্গা পুজো সংস্থিত হয়েছিল। মাকে নিয়ে আসা হয়েছে কুমারটুলি থেকে। এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টা তাদের এই দুর্গোৎসবে অংশগ্রহণ দেখেই বোঝা যায়। ঐক্যতানের প্রচেষ্টা হল কেউ যেন উৎসবের দিনে নিজেকে একলা না ভাবে। এখানে প্রথম দুর্গোৎসবের সূচনা হল কলকাতা থেকে স্বনামধন্য শিল্পীর কণ্ঠেই। শতাধিক ব্যক্তি এসেছিলেন এই ৩ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে। প্রতিদিন প্রায় দুই শতকেরও বেশি মানুষ মায়ের দর্শন করতে এসেছিলেন, সাথে ছিল ভুরিভোজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় চন্ডীপাঠ, ঢাকের আওয়াজের সঙ্গে শঙ্খধ্বনি ঠিক যেন সেই দেশের পাড়ার পুজোর অনুভূতি। সন্ধ্যার প্রধান আকর্ষণ ছিল বাবুল সুপ্রিয়র গান এবং সুস্বতী মল্লিকের কনসার্ট।
সিঁদুরখেলা
সপ্তমী এবং অষ্টমীর পুজো হয় ৫ই অক্টোবর। কুমারী পুজোর পর সন্ধ্যায় মঞ্চ আলোকিত করেন স্থানীয় শিল্পীরা। যাকে বলে একদম জমজমাট অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের সূত্রে কত নতুন বন্ধুত্ব, প্রবাসে নতুন করে নিজের পাড়া, নিজের শিকড় খোঁজার চেষ্টা। দশমীর পুজো অবসানে ধুনুচি নাচ, সিঁদুরখেলা, মাকে শেষ বারের মতো প্রণাম, আবার পরের বছরের জন্য অপেক্ষা শুরু। প্রবাসে, অরেঞ্জ কাউন্টির এই দুর্গোৎসব দেশের পাড়ার পুজোর মতোই সকলকে আলিঙ্গন করে, সবাইকে নিয়ে এই পুজোর যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ পায় না। শুধু অনুভব করা যায়। আসছে বছর আবার হবে!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।