একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ, তিনে নেত্র। তিন বছরের কন্যা আমাদের উমা। পেঁজা মেঘ আর নয়-দশ ডিগ্রি তাপমাত্রাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে হেলসিঙ্গবোর্গে পুজো আসছে। তার সাথে দোসর উত্তরের কনকনে হাওয়া। অভয়দাত্রী মা আসছেন।
পাঁচ আর ছয়, অক্টোবরের এই দু’দিন চলবে শারদার আরাধনা। সঙ্গে চুটিয়ে মজা। গত বছরের মজাও তো কিছু কম ছিল না। তিন ঘন্টার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে এক সুইডিশ ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন “ডু ইউ ডু দিস এভরি ইয়ার?” আমরা মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। সব থেকে মজার ব্যাপার হল, আর এক জন সুইডিশ ভদ্রলোক ফুচকার স্টল দিয়েছিলেন। বিক্রিবাটাও ভালই হল। এই দেখে এ বারে আমরা গোটা একটা দিন শুধু রেখেছি স্টলের জন্য। এখানে বাড়ি থেকে বানিয়ে এনে বিক্রি করা যাবে নানা ধরনের খাবার।
এই বছরে আমরা চেষ্টা করছি প্লাস্টিক ব্যবহার না করতে। এ ছাড়াও আমাদের লক্ষ্য থাকবে কোনও ভাবেই খাবার নষ্ট যেন না হয়। গত বছরের মতো এ বছরেও থাকবে ধুনুচি নাচ আর সিঁদুর খেলা। ধোঁয়ার আড়াল থেকে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠা মায়ের সেই রূপ, কেমন যেন মন উদাসীন করা মুহূর্ত।
আরও পড়ুন: দেখতে দেখতে ১৪ বছর, তৈরি হচ্ছে ডেট্রয়েটের দুর্গা টেম্পল
আসলে কলকাতা থেকে বহু দুরে এই হেলসিঙ্গবোর্গেও কোথাও একটা দুর্গাপুজোর কলকাতা লুকিয়ে আছে। সেই কলকাতার স্পর্শে জেগে ওঠে রঙিন পাঞ্জাবি, পাট ভাঙা লাল পাড় সাদা শাড়ি। পাশেই কোপেনহেগেন আর মালমোর মত বড় শহর। বহু মানুষের সমাগম হবে এই পুজোতে। দেদার আড্ডা দিতে দিতেই ঝুপ করে নেমে যাবে সন্ধে। মঞ্চের পর্দা সরিয়ে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ হল নাটক। মহড়া চলছে। এ ছাড়া গান আর নাচের অনুষ্ঠান তো থাকবেই। ছোটরাও কোমর বেঁধে তৈরি।
আরও পড়ুন: হুহু করে উঠত বুকটা, এ বার পুজোয় কলকাতাটাকেই তুলে আনছি অসলোয়
আমাদের পুজোর একটা বড় অঙ্গ হল আমাদের নিজস্ব পূজাবার্ষিকী। এটা আমাদের লেখালেখির চণ্ডীমণ্ডপ। বিদেশের এই পুজোতে একটা জিনিস আমরা খুব মিস করি, সেটা হল কলাবউ স্নান। আসলে কলা পাওয়া গেলেও কলা গাছ বা পাতা কোনওটাই আমাদের নজরে পড়েনি। তবে সন্ধি পুজো হয় নিয়মকানুন মেনেই। দুদিন আমাদের সঙ্গে কাটিয়ে মা ফিরে যাবেন কৈলাস। সুইডেনের আকাশে মুখ লুকোবে নীলকণ্ঠ পাখি।
ছবি: অর্পণ রায়