প্রতি বার ক্যালেন্ডারের পাতায় সেপ্টেম্বর মাসটা পড়লেই মনে হয় এক ছুট্টে চলে যাই কলকাতা। কিন্তু মাঝের দূরটা বড্ড দূর। কাজ, অফিস, কেরিয়ার... বাড়ি থেকে আসা ভিডিয়ো কলগুলোর অপেক্ষায় থাকি। এক গোলার্ধ পেরিয়ে, আর এক গোলার্ধে চোখ। এ তো আমারই ফেলে যাওয়া পাড়া। ছোটবেলার পুজো। প্যান্ডেলে খুঁটি, বাঁশ, কাঠ, পেরেক পোঁতার শব্দ ঝাঁপিয়ে আসে ফোনে। হুহু করে ওঠে ভিতরটা। ফি বছর বুক কাঙাল করা মন খারাপ। চাতক তেষ্টায় ঘর ছেড়ে বহু দূরে আমি প্রবাসের বাঙালি।
এমন ঢাকের বোলে বেজে ওঠা মনখারাপটাকে হঠাৎই একদিন বাই বাই করে ফেলা গেল। রাস্তার ধারের ফোটা কাশফুল ছিল আমাদের অনুপ্রেরণা। অসলোর মাটিতে এল আমাদের দুর্গা।
তিন বছর আগের এক ছুটির দিনের আড্ডায় গল্পের ছলে কয়েক জন বন্ধু মিলে আচমকাই পুজোর প্ল্যান। একেবারে এলোমেলো খামখেয়ালটা কখন যে সিরিয়াস হতে শুরু করল একটা সময়, নিজেরাও বুঝতে পারলাম না। আমাদের আগ্রহটা দেখলাম বাকিদের মধ্যেও ছড়িয়ে যেতে সময় লাগল না বেশি। ওয়েবসাইট, পোস্টার কলকাতা থেকে প্রতিমা, পুজোর সাজগোজ সব মিলিয়ে জমজমাট পুজোর প্রস্তুতি। হই হই আনন্দে একেবারে বাড়ির পুজোর গন্ধ।
আরও পড়ুন: স্কটল্যান্ডে তিন-তিনটে পুজো রয়েছে! আর কী চাই!
আরও পড়ুন: দেখতে দেখতে ১৪ বছর, তৈরি হচ্ছে ডেট্রয়েটের দুর্গা টেম্পল
শুধু কলকাতার প্রতিমা নয়, এ বছর আস্ত কলকাতাটাকেই উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। সেই পুরনো অলিগলিরাস্তা, ল্যাম্পপোস্ট, হলুদ ট্যাক্সি। পুরনো নস্ট্যালজিয়ায় তোলপাড় আমাদের হিয়া। হঠাৎ যেন ঘুম ভেঙে জেগে উঠবে কলকাতা অসলোর পাড়ায়। সেই চেনা নামে ডাক দেবে কবেকার শহরটা।এ বার আমরা সবাই মিলে অসলোতেই গড়ে তুলছি কলকাতা। আমাদের এ বারের থিম শহর কলকাতা। মণ্ডপে পা রাখলেই মনে হবে ভিক্টোরিয়া চত্বরে পৌঁছে গিয়েছি। কমিউনিটি হলের দেওয়ালে দেওয়ালে কলকাতার ছবি। রেখায়-লেখায় ধরা দেবে। কানে বাজবে বাংলা গান। ডাণ্ডিয়ার সুরে মিলে মিশে একাকার। পুজোর আড্ডার সঙ্গে থাকবে জলসাও। আমাদের এবারের অতিথি উজ্জয়িনী। অসলোর কনকনে ঠান্ডায় হাড়ে কাঁপন লাগলেও পুজোর কটা দিন আমরা খাঁটি বাঙালি।