সাল ২০১৪; সবে পুজো শেষ হয়েছে। আমরা কয়েকজন দুর্ভাগা যারা শরৎকালে নেদারল্যান্ডসের বৃষ্টি উপভোগ করছিলাম। ঠিক করলাম, একটা ঘরোয়া বিজয়া সম্মিলনী করা যাক। হোয়াট্সঅ্যাপের আলোচনা-মতো মেনু নিয়ে ভেন্যুতে পৌঁছে বেশ আনন্দ হচ্ছে। এমন সময় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। কে বেশ বললো, এই আনন্দের পরিবেশটা আর-একটু প্রসারিত করলে কেমন হয়?
কিন্তু, সেই যে হীরকরাজা বলে গিয়েছেন, “যার নাম নাই, তার কথার দাম নাই”! তাই সবার আগে দরকার এই প্রয়াসের একটা নামকরণ করা। চা আর ডাচ ফ্রাইজ সহযোগে নামকরণ-প্রক্রিয়া শুরু হল। অনেক মাথা চুলকানোর পরে সেই বাবা মাণিকনাথকে স্মরণ করে আলো জ্বললো – ‘হল্যান্ডে হইচই’। তা, অর্গানাইজেশন তৈরি হল, ফেসবুকে পেজও তৈরি। এ বার দরকার ডাচ চেম্বার অফ কমার্সে রেজিস্ট্রেশন, না হলে নাকি অর্গানাইজেশন বেআইনি। ওই রেজিস্ট্রেশনের বৈতরণীও পার হওয়া গেল, আমরা এখন যাকে বলে ‘লিগ্যাল’! এই কাগুজে প্রক্রিয়া চলাকালীন আমরা অবশ্য আমাদের প্রথম অনুষ্ঠান করে ফেলেছি। বিজয়া সম্মিলনী ২০১৫!
প্রথম অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে মোটামুটি একটা উপন্যাস লিখে ফেলা যায়। প্রায় দু’শো মানুষ এলেন, খেলেন, প্রোগ্রাম দেখলেন, ভালবাসলেন। এক কথায়, সুপারহিট!
প্রথম অনুষ্ঠানের সাফল্য আমাদের চিন্তা বাড়িয়েও দিল, পরের অনুষ্ঠানে এই মান ধরে রাখতে হবে যে! সেই ভাবনা রূপায়িত হল, ২০১৬-তে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন হল, বিজয়া সম্মিলনী হল, বেশ হইচই করেই হল আর কি! বন্ধুদের সংখ্যা বাড়তে থাকল, আর আমাদের মধ্যে থেকে অমলাশঙ্কর থেকে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, মার্ক নফলার থেকে মারিয়া ক্যারে এক এক করে আত্মপ্রকাশ করতে থাকল। হইচই আস্তে আস্তে নেদারল্যান্ডসে বাংলা সংস্কৃতির এক নির্ভরযোগ্য নাম হয়ে উঠল।
আরও পড়ুন: বেজিং-এর পুজোয়ে দ্বিতীয় বছরের প্রাপ্তি কুমোরটুলির প্রতিমা
২০১৭ হইচই-এর পরিপ্রেক্ষিতে যাকে বলে ল্যান্ডমার্ক ইয়ার। ওই বছর আমরা প্রথম দুর্গাপুজোর ঘোষণা করি।
২০১৮-তেও অনন্য অভিজ্ঞতা হইচই-এর দুর্গাপুজোয়, গান গেয়ে গেলেন ইন্ডিয়ান আইডল-খ্যাত অমিত সানা। দুর্গাপুজো কেন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, তা হইচই বিগত দুই বছর ধরে প্রমাণ করে চলেছে নেদারল্যান্ডসের বুকে। শুদ্ধ শুচি থেকে ফুলকো লুচি, মিষ্টি পান থেকে পুরানো গান —কিছুই বাদ থাকে না এখানে।
সেই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, পাঠকরা এই বার পুজোয় এসে নিজেরাই বরং সেই স্বাদের ভাগ নিয়ে যান।