Durga Puja 2019

প্রবাসে পুজোটাই অস্ত্র বাংলার সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার

কেরলের বাণিজ্যিক রাজধানী শহরে আমাদের পুজোয় ‘ট্র্যাডিশন’ই তাই প্রতি বারের থিম।

Advertisement

রণজিৎ কাঞ্জিলাল

কোচি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৯ ১২:৩৫
Share:

নিজের শহর ছেড়ে এসেছিলাম ৩৯ বছর আগে।সেই থেকেই ঠিকানা ভিন্ন রাজ্য, ভিন্ন শহর। ভিন্ন তার পরিবেশ, ভিন্ন তার সংস্কৃতি। এই অচিনপুরে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েও শিকড়ের টানটা ভুলিনি। দুর্গাপুজোই আমাদের কাছে সেই শিকড়টা ধরে রাখার মস্ত হাতিয়ার।

Advertisement

দক্ষিণ ভারতের মানুষ নিজেদের সংস্কৃতি ও পরম্পরা সম্পর্কে খুব সচেতন। উৎসবেও তাঁরা সেই ঐতিহ্য পছন্দ করেন। কেরলের বাণিজ্যিক রাজধানী শহরে আমাদের পুজোয় ‘ট্র্যাডিশন’ই তাই প্রতি বারের থিম। আর মালয়ালিরা যখন এত যত্ন করে নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষা করে চলেছেন, আমরাই বা পারব না কেন? পুজোর সময়ে একেবারে নিজস্ব উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাদের বাংলা চর্চার উপলক্ষ।

প্রবাসের বহু পুজোয় কলকাতা বা বাংলা থেকে শিল্পীদের এনে অনুষ্ঠান করার রেওয়াজ আছে। কিন্তু আমরা সেই পথে নেই। কোচির গাঁধীনগরে ৬০-৬৫টা বাঙালি পরিবার মিলেই পুজোর অনুষ্ঠান সাজাই আমরা। সারা বছর স্কুল-কলেজে, কাজের প্রয়োজনে চলতে হয় এখানকার মতো করে। শুধু পুজোর সময়ে অনুষ্ঠানগুলো হয় বলে ছেলেমেয়েদের বাংলা চর্চাটা চালিয়ে যাওয়া যায়। প্রবাসে এটাই বা কম কীসে? বাঙালি ঘরের ছেলেমেয়েরা পুজোর আসরে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি তুলে ধরছে, এই দৃশ্য দেখে স্থানীয় মানুষও খুশি হন।আমাদের ‘কেরল বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ’ মানুষে-মানুষে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানে বিশেষ নজর দিয়েই এগিয়ে চলেছে।

Advertisement

পরম্পরার প্রতি নিবেদিত থাকব বলে প্রতিমা আমাদের সাবেকি। বেলুড় মঠের ঠাকুরের আদলে মূর্তিই এখানে পছন্দ। কুমারটুলি থেকে শিল্পীরা এসে তৈরি করে দেন প্রতিমা। আশেপাশে আরও কয়েকটা পুজো হয়। পরম্পরা যখন, ঢাক সেখানে ‘মাস্ট’! ঢাকের কাঠি বাংলার মানুষের হাতে যেমন, অন্য কোথাও ঠিক তেমন হয় না। ঢাকি তাই বাংলা থেকেই নিয়ে আসা হয়।

পুজোর কয়েকটা দিন একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। এখানে পুজোর সময়ে ছুটি নয়। নবমীর দিনটা বাদ দিয়ে খিচুড়ি ভোগেরই ব্যবস্থা থাকে। কাজের ফাঁকেই মানুষ এসে খাওয়ার আসরে ঘুরে যান।নবমীতে একটু অন্য রকম, পোলাও এবং অন্যান্য পদ। তবে নিরামিষ। এলাকার মানুষের পছন্দ মাথায় রেখেই এমন আয়োজন। তিরুঅনন্তপুরমে থাকা বাঙালি বন্ধুরা যে পুজো করেন, সেখানেও স্থানীয় ভাবাবেগ ওঁরা স্মরণে রাখেন।

সত্যি কথা বলতে গেলে, আমাদের এই পুজোয় চোখ ধাঁধানো কোনও বাহার নেই। আছে প্রাণ আর আন্তরিকতা। প্রবাসে থিতু হয়েও নিজেদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা। যেখানে পুজো মানে সব অর্থেই মিলনোৎসব। কেরল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এখন এক বঙ্গসন্তান। সেই বিচারপতি হৃষীকেশ রায়ও সপরিবার ঘুরে গিয়েছেন আমাদের পুজোয়।

কোচি শহরে নৌ-সেনার শিবির আছে। উৎসবের শেষে বিসর্জনের সময়টায় নৌ-বাহিনীর সঙ্গেও মিলনের একটা সুযোগ মেলে আমাদের। গাড়িতে প্রতিমা চাপিয়ে বিসর্জনের জায়গায় পৌঁছে আমরা ব্যাকওয়াটারের ভিতরে নিয়ে যাই। তার পরে নৌ-বাহিনীর ডুবুরিরা ঠাকুর টেনে নিয়ে যান। আমরা বলি, আসছে বছর আবার হবে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement