কানসাস সিটিকে বলা হয় আমেরিকার হার্টল্যান্ড। আর আমাদের, অর্থাৎ কেসিবিএ বা কানসাস সিটি বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পুজো, আক্ষরিক অর্থেই হৃদয়ের মেলবন্ধন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নবীন-পুরনো নির্বিশেষে সবার নিজের পুজো। আজকের পুজোয় যে নতুন, পরের বছর সে-ই হর্তাকর্তা হয়ে উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের ফিউশন গানের সাথে নেচে উঠতে দেখতেই পারেন আমাদের আমেরিকান সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারকে। আমরা ধরে রাখার চেষ্টা করি অচেনা আত্মীয়তাকে, বন্ধুত্বের বন্ধনকে। যে কারণে পুজো বেড়ে চলেছে বহরে, স্থান সংকুলানের জন্যে স্থানান্তরিতও হয়েছে গত বছর।
বাঙালির পুজো মানে তো শুধু পুজো নয়, সে ষোড়শোপচার। আর তা যদি করতে হয় নিজের হাতে, তা হলে ভাবুন। কেসিবিএতে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ করতে হয় সদস্যদেরই। যে সে চণ্ডীপাঠ নয়, 'অসংস্কৃত' আমাদের বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে, হয়তো প্রাজ্ঞ পণ্ডিতমশাই তাঁর পাওয়ারপয়েন্ট-এ বিশ্লেষণ করতে বসলেন সংস্কৃত শ্লোকের মানে। প্রতিমাসজ্জাই হোক, পূজাবার্ষিকী প্রকাশ, বা পুজোর প্রতিদিন পাঁচশোর ওপর লোকের রান্না, কোনওটাই বাদ নেই। ভাবছেন যে, বাড়ির রান্না কেমন হবে? যে কোনও রেস্তরাঁকে হার মানায়। আমাদের দশভুজা কেবল আরাধ্যা নন, তিনি অধিষ্ঠান করছেন ঘরে ঘরে। এত লোকের ইলিশই হোক, বা পাঁচমিশালি হোক, বা মন্ডা-মিঠাই— সবই আসবে হেঁশেল থেকে।
সন্ধেবেলার প্রধান আকর্ষণ গানের অনুষ্ঠান। প্রবাসীরা শুনতে ভালবাসেন দেশের সুর, ফিরে যেতে চান তাঁদের ফেলে আসা দিনগুলোতে। প্রতি বছর শিল্পীরা আসেন আমাদের সঙ্গে থাকতে, ওই দিনগুলোর সন্ধেতে। এ বার তিন দিন পর পর ব্যান্ড কায়া, লোপামুদ্রা ও নোবেল। এবং তাঁদের সুর ধরিয়ে দেবে এখানকার বাঙালিদের ব্যান্ড 'ইমোশনাল আইকনস'। রাত্রির খাবারের পর শুরু হবে গানের অনুষ্ঠান। চলতে থাকবে মাঝরাত অবধি। তার পর হল ছেড়ে বেরিয়ে ছোট ছোট দল বেঁধে রাতভর আড্ডা। সকাল হতে না হতেই পরের দিনের প্রস্তুতি। শনিবার দিন থাকে সন্ধিপুজো ও অঞ্জলি, রবিবার অঞ্জলি ও সিঁদুরখেলা। আর সিঁদুরখেলার আগে আছে কেসিবি-র মহিলাদের নৃত্যানুষ্ঠান। তারা চমক দিতে পটু, এ বছরও আমরা তারই অপেক্ষায়।
কোনও পুজোর গল্পই অসমাপ্ত থেকে যাবে ছোটদের ছাড়া। এখানে বেড়ে ওঠা কচি কাঁচারা মহাউৎসাহে লেগে পরে পুজোর কাজে। তাদের দায়িত্বে থাকে চা, কফি, নরম পানীয়। দিনভর হাসিমুখে পরিবেশন করা চাট্টিখানি কথা নয়।