কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আসে বোর্নমাউথে।
সপ্তমী থেকে দশমী ধূপধুনোর গন্ধ, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের আওয়াজে বাতানুকূল অডিটোরিয়ামে ফেরে ম্যাডক্স, বাগবাজারের উৎসবের আমেজ। সমুদ্রঘেঁষা বোর্নমাউথের সঙ্গে গঙ্গাতীরের মহানগরীর তফাৎ করা তখন কঠিন।
২০১৬ সালে ২০-২৫টি পরিবার মিলে শুরু করেছিলেন বোর্নমাউথের দুর্গা আরাধনার। তিন বছর পরে সেই পুজোয় এখন সামিল শ’দুয়েক প্রবাসী। প্রথম বার ঘটপুজো। পরের বার কুমোরটুলি থেকে নিয়ে আসা হয় ফাইবারের দুর্গামূর্তি। তা-ই চিন্ময়ী হয়ে ওঠে বছর বছর।
ইংল্যান্ডের অফিসে পুজাবকাশের বালাই নেই। কিন্তু উদ্যোক্তাদের তো ছুটি নিতেই হয় চার দিন। পঞ্জিকা মেনে ষষ্ঠীতে বোধন। বাকি দিনগুলিতে সকাল থেকে ব্যস্ততা। বাঙালি পোশাকে অঞ্জলির ভিড়। ফল-প্রসাদ খেয়েই শুরু গল্গগুজব। কারও কারও মুখে কয়েক হাজার মাইল দূরের কলকাতায় ফেলে আসা দিনের কথা। কখন যে সময় কেটে যায়। দুপুরের ভোগে খিচুড়ি, সব্জি, চাটনি, পায়েসে বাঙালিয়ানা। একটু বিশ্রামের পরে বিকেলে শুরু সন্ধ্যারতির তোড়জোড়। তত ক্ষণে অফিস সেরে পৌঁছে যান অন্যেরাও।
আরও পড়ুন: হে চিন্ময়ী লন্ডনময়ী
আরও পড়ুন: সাইবার সিটির শারদ-সরোদ
পুজোর দু’মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয় বোর্নমাউথে। পুরোহিত থেকে পুজোর উপকরণ— হরেক কিছুর হিসেব কষতে হয়। সঙ্গে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া।
আরতির পরে নাচ, গান, শ্রুতিনাটক। প্রবাসেও যেন কী ভাবে তখন মেলে নিজের মাটির গন্ধ।
আনন্দের দিন কেটে যায় তাড়াতাড়ি। হঠাৎই দশমীর বিষাদে ঘেরে চার পাশে। দুপুরে বিসর্জনের পুজো। দেবীবরণের পরে ভাসান নয়, মোড়কে মুড়ে রাখা হয় প্রতিমা। লালপাড় সাদা শাড়িতে সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠেন মহিলারা।
বোর্নমাউথের রাস্তার পাশে সারি সারি গাছ শীতের আগমনী-বার্তা শোনায় তখন। মনখারাপের বিকেলে অডিটোরিয়াম ভাসে একটাই স্লোগানে— ‘আসছে বছর আবার হবে।’