ananda utsav 2022

সুদূর কানাডায় একাধিক দুর্গোৎসব! বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বাঙালি

টিনা চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ ঘোষ, ও সৌগত মন্ডল - প্রবাসে বাঙালি আড্ডা

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:৪০
Share:

কানাডার পুজো, ছবি: সংগৃহীত

কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। কিন্তু তারই মধ্যে বাকি সমস্ত উৎসবকে ছাড়িয়ে যে বিশেষ দিনগুলির জন্য বিশ্বের আপামর বাঙালি সারা বছর অপেক্ষা করে বসে থাকে, তা আমাদের সবার প্রিয় দুর্গাপুজো। আর যে উৎসব বাঙালির সর্বকালের সেরা উৎসব তাকে কি ভৌগোলিক সীমানা আর কালের গন্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা গিয়েছে।

সারা বিশ্বের যে প্রান্তে বাঙালি আছে সেখানে আর কিছু না হোক দুর্গাপুজোর আয়োজন যে হবেই সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাহ্যিক চাকচিক্যে দেশের পুজোর সঙ্গে হয়ত প্রবাসের পুজোর তুলনা করা সমীচীন নয়। কিন্তু আবেগ, একাত্মতা, ভক্তি এবং সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা যদি দেখতে হয় তা হলে এই কথা বলাটা মোটেই অতিরঞ্জিত হবে না যে এই সব বিষয়ে প্রবাসের দূর্গাপুজো দেশের থেকে এগিয়ে বৈ পিছিয়ে নেই। আর সারা বিশ্বে যত দুর্গাপুজোর আয়োজন প্রবাসী বাঙালিরা করেন, কানাডার গ্রেটার টরন্টো এলাকার বিভিন্ন দুর্গাপুজোগুলো যে তাদের মধ্যে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে তা আজ সর্বজনবিদিত। শেষ দুই বছর কোভিডের জন্য জাঁকজমক একটু স্থিমিত থাকলেও এই বছর আবার ধুমধাম করে স্বমহিমায় আয়োজন হতে চলেছে টরন্টোর সমস্ত দুর্গাপুজোর।

ছবি: সংগৃহীত

তবে কিনা প্রবাসের বাকি সব দুর্গাপুজোর মতোই টরন্টোতেও বেশিরভাগ ভাগ পুজো হয় উইকেন্ডে। যেমন ‘আগমনী’, ‘আমার পুজো’, ‘বঙ্গীয় পরিষদ টরন্টো এবং প্রবাসী বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’, ‘বঙ্গ পরিবার’, ‘ডারহ্যাম দুর্গোৎসব’, ‘সাগরপারে দুর্গাপুজা’, ‘ওয়াটারলু দুর্গোৎসব’, ‘কিংস্টন দুর্গাপুজো’ এনারা এবার উইকেন্ডে ব্যবস্থা করেছেন মা দুর্গার আবাহনের। আবার কিছু সংস্থা আছেন যারা পুজোর দিনগুলিতেই পুজো করছেন। যেমন ‘বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু মন্দির’, ‘ভারত সেবাশ্রম সংঘ’, ‘টরন্টো দুর্গাবাড়ি’, ‘টরন্টো কালীবাড়ি’, ‘বেদান্ত সোসাইটি অফ টরন্টো’, ‘হিন্দু ধর্মাশ্রম’। এ ছাড়াও আছে কিছু বাড়ির দুর্গাপুজো যেমন ‘দত্ত বাড়ির দুর্গোৎসব’, ‘চক্রবর্তী পরিবারের দুর্গা পুজো’, ‘ধর বাড়ি দুর্গাপুজো’, ঘোষবাড়ির ‘আমাদের বাড়ির পুজো’ ইত্যাদি।

ভিড় করে আসা আবেগ নিয়ে সব্বাই মিলে এক সঙ্গে, এই প্রবাসে, প্যান্ডেল বানানো থেকে শুরু করে ভোগের আয়োজন, আলপনা দেওয়া থেকে শুরু করে মণ্ডপ সজ্জা, পুজোর ক’টা দিন হাতে হাত মিলিয়ে একটা পরিবারের মতো সবাই সমস্ত কাজটা সম্পন্ন করে। পুজোর কোনও খুঁটিনাটি কিন্তু কোথাও বাদ পড়ে না। কলা বউ স্নান, অষ্টমীর অঞ্জলি, সন্ধি পুজো এবং সিঁদুর খেলা সবটাই কিন্তু ধরা পড়ে এখানে। এই যে এত সুচারু আয়োজন, তার মধ্যে সাংস্কৃতিক মনোরঞ্জনেরও কোনও খামতি থাকে না। প্রতি বছর বাংলা থেকে বিভিন্ন স্বনামধন্য শিল্পীরা আসেন নানারকম অনুষ্ঠান উপহার দিতে। এছাড়াও প্রবাসী বাঙালিরাও নিজেরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং তাতে যোগদান করে। এতো কাজ এবং আনন্দের মাঝে বাঙালির যে বিষয়টা না হলে বাঙালিত্বটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাই সেই রসনা তৃপ্তির ব্যবস্থাও থাকে ভরপুর। বিভিন্ন বাঙালি খাবারের স্টল এইসময় পুজোর আশেপাশে থাকে যেখানে পুজোর কটাদিন মনের ও জিভের তৃপ্তি করতে পারা যায়। মানে এক কথায় বলতে গেলে, টরন্টোতে যেন এক টুকরো বাংলা বিরাজ করে এই পুজোর ক’দিন। নিজের দেশ ও পরিবারের বাকি লোকজনের থেকে দূরে থাকার দুঃখগুলো নিমেষে উড়ে যায় অচিনপুরে এই পুজোগুলো হয় বলেই।

পরিশেষে, এই সমস্ত পুজোর আয়োজক সংস্থাদের পাশাপাশি আরও একটি সংস্থার নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। টরন্টোতে বাংলার আর্ট ও কালচার প্রচারের একটি নন প্রফিট অর্গানাইজেশন হল ‘প্রবাসে বাঙালি আড্ডা’। বাঙালিয়ানাকে প্রবাসের বাঙালিদের মধ্যে প্রচার করার উদ্দেশ্য নিয়ে নানারকম উদ্যোগ নিয়ে থাকে, এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে দেশে ও বিদেশে। টরন্টোর এই বিভিন্ন পুজো সংস্থাগুলির বহু মানুষ এই ‘প্রবাসে বাঙালি আড্ডা’র পরিবারের সঙ্গে যুক্ত ও তারাও বিভিন্ন সামাজিক কাজে ‘প্রবাসে বাঙালি আড্ডা’কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বাঙালিয়ানাকে প্রবাসে ও পরবর্তী প্রজন্মর কাছে বাঁচিয়ে রাখতে তারাও নিরলস চেষ্টা করে চলেছে ।

‘প্রবাসে বাঙালি আড্ডা’ আন্তরিক ধন্যবাদ জানায় সমস্ত পুজোর আয়োজকদের এবং কুর্নিশ জানাই তাদের এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে। এই সমস্ত আয়োজকদের জন্যই পুজোর কটা দিন কিছুটা হলেও ভুলে থাকা যায় দেশ ছেড়ে দূরে থাকার কষ্ট আর সারা বছরের কর্মবহুল প্রবাস জীবনের একঘেঁয়েমি। প্রতি বছর এইভাবেই সম্পন্ন হোক প্রবাসের পুজোগুলো, ক্রমশ এগিয়ে যাক আরো বৃহৎ স্তরে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মনে রোপণ হোক এই নস্টালজিয়ার বীজ। ইউনেস্কো দুর্গাপুজোকে কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা করেছে এই বছর। সমস্ত বিদেশিরা এই প্রবাসী বাঙালিদের পুজো দেখে বুঝতে পারবে এই হেরিটেজ তকমার যথার্থতা। উমা আসুক প্রতিবার সমাজ ও মনের অসুর বধ করতে।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের অংশ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন