বিমানের ইঞ্জিন তৈরির জন্য ১৯১৬ সালে জন্ম হয়েছিল একটি প্রস্তুতকারক সংস্থার। সেভাবেই চলছিল ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। এর পর তারা তৈরি করতে শুরু করে মোটরবাইকের ইঞ্জিন।
এটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ঘটনা। তারা নিজেরা ১৯২৩ সালে প্রথম মোটরবাইক তৈরি করে ফেলেন। সারা বিশ্বে এখন মোটরবাইক তৈরিতে দ্বাদশ স্থানে এই প্রস্তুতকারী সংস্থা।
যারা মোটর স্পোর্টস নিয়ে একটু আধটু চর্চা করেন বা মনে মনে ইচ্ছা আছে, তাদের কাছে এই ব্র্যান্ডটি খুবই পরিচিত নাম। আর সেই ভালবাসা থেকেই ব্র্যান্ডটির মোটরবাইকের খোঁজ খবর পেতেও ইচ্ছা করে।
আরও পড়ুন: মাত্র ১৫ লক্ষে গাড়ি, নতুন এম জি হেক্টর প্লাস চোখ ধাঁধিয়ে দেবে গ্রাহকের
আজ বিএমডব্লিউ মোটরবাইকের একটি মডেলের বিষয়ে আলোচনা করা হল। ‘বিএমডব্লিউ জি এস’— প্রায় ৪০ বছর আগে , অর্থাৎ ১৯৮০ সালে এই মডেলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই সময়ে ‘আর ৮০ জি এস মডেল ’ জনপ্রিয়তা পায় দুটি কারণে। প্রথমত; এর দৌড়াবার ক্ষমতাই চিনিয়ে দিয়েছিল, কেন এটি অন্য সব কিছুর থেকে আলাদা। এই ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৮১ সালে, এটি যখন ‘প্যারিস-ডেকার র্যালি’ জেতে। দ্বিতীয়ত; এটি যিনি চালাচ্ছেন, তিনি চালাতে গিয়ে কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন। অর্থাৎ চালকের কাছে গতি যেমন প্রিয়, তেমনই সেটি ব্যবহার করার সময়, সমস্যা মুক্ত যেন থাকে, সেটাই তিনি চান।
এরপর এই জি এস মডেলটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ১৯৯৩ সালে আসে আরও একটি
মডেল, ‘ফান্ডিউরো এফ-৬৫০’। ৪৭ অশ্বশক্তির এই সিঙ্গল সিলিন্ডার মোটরবাইকটি কিছুটা জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করে জিএস-এর। এর সঙ্গে তাই আসে ‘এফ–৮০০’। এর পর আসে আর ১১০০ জি এস মডেল । এটিতে যোগ করা হয় ৪ ভাল্ভের বক্সার ইঞ্জিন।
বিশ্বে এখন মোটরবাইক তৈরিতে দ্বাদশ স্থানে রয়েছে বিএমডব্লিউ। ছবি: ট্যুইটার।
জি এস-এর এটি সেই অর্থে প্রথম মোটরবাইক, যার মধ্যে আছে ফোর ভাল্ভ বক্সার, সঙ্গে ৮০ বিএইচপি (ব্রেক হর্স পাওয়ার) নিয়ে চলবার ক্ষমতা। যারা একটু দূরের সফর ভালবাসেন, তাদের জন্য এর সাসপেনশন আর গিয়ার এর বিষয়টা একটু অন্যরকম ভাবে চিন্তা করে যুক্ত করেছে প্রস্তুতকারক। এর ফলে দূরের যাত্রায় কোনও রকম অসুবিধে তো হবেই না, উল্টে চালক একেবারে নিরাপদ ও আরামের মধ্যে চালাতে পারবেন তাঁর মোটর বাইকটি। সামনের চাকার সাসপেনশন নিয়েও চিন্তাভাবনা করে যুক্ত করেছে টেলিলিভার সাসপেনশন কারিগরি। এটি মোটর সাইকেলটির ক্ষেত্রে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। সঙ্গে রয়েছে ১০৮৫ সিসি (অয়েল কুলড) ফ্ল্যাট টুইন বক্সার ইঞ্জিন।
যারা গতি ভালবাসেন তাদের জন্য, এটি ঘন্টায় ১৯৫ কিলোমিটার দৌড়াবার ক্ষমতা রাখে। ২০১২ সালে এরকমই এক শরতে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘আর ১২০০ জি এস’-এর। একেবারে নতুন ভাবে ডিজাইন করা এই মোটরবাইকের ইঞ্জিনটি হয় ১২৫ হর্স পাওয়ার। এর সঙ্গে যোগ করা হয় দু’রকম, এয়ার এবং অয়েল কুলড কারিগরি।
আরও পড়ুন: দুরন্ত লুকস ও সুরক্ষায় চমক, বিএমডব্লিউ’র নয়া শ্যাডো এডিশন মিলবে দেশের বাজারেই
২০১৬ সালের শরতে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘জি এস’ পরিবারের নতুন সদস্য, ‘জি ৩১০ জি এস’ এর । ‘৫০০ সিসি’র এই মোটরবাইকটি নিজের রূপ, গুণ আর চলার ক্ষমতায় খুব অল্প সময়েই মন কেড়ে নেয় সবার। ওই বছর আরেকটি সদস্যও চলে আসে, ‘আর ৯০ আরবান জি এস’ । এটি পুরনো মডেল ১৯৮০ সালের ‘জি এস’-কে মনে করিয়ে দিলেও, এর সঙ্গে জুড়ে থাকা আধুনিক কারিগরি ,নিজেকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়।
আগের থেকে ৩০ হর্স পাওয়ার বেশি এটির ক্ষমতা। ২০১৭ সালে জি এস-এ ইতিহাস এগিয়ে চলে। নতুন ভাবে আসে এফ ৭৫০ ও এফ ৮৫০ জি এস মডেল দু’টি। দুই সিলিন্ডারের এই বাইকে আছে ইঞ্জিন আর সঙ্গে ৭৭ হর্স পাওয়ার ক্ষমতা। জুড়ে দেওয়া হয়েছিল দুটো ব্যালেন্সার স্যাফট। ২০১৮ সালে ‘বিএমডব্লিউ বক্সার’ ইঞ্জিনকে আরো আধুনিক করে তোলে নতুন প্রযুক্তিতে । ফলে নতুন ভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে জি এস পরিবারের সমস্ত মোটরবাইক।
আরও পড়ুন: বর্ষায় লং ড্রাইভ, এই সব বিষয়ে খেয়াল রাখতেই হবে
১৯৮০-এর শরতে শুরু থেকে ২০২০ সালের শরত , ৪০ বছরের ‘বিএমডব্লিউ জি এস’-এর এই যাত্রা। লক্ষ লক্ষ চালকের মন জয় করা এক জয় যাত্রার ইতিহাস। বিশেষ করে মোটরবাইকের দুনিয়ায়।