শ্রাবণী কুমার
ইদানীং প্রত্যেকেই কোনও না কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত। তবে নিজের পেশা বদলে নতুন করে অন্য কোনও পেশার জন্য নিজেকে গড়ে তোলা কিন্তু প্রত্যেকের কাছেই একটা বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সে যে পেশাই হোক না কেন, ভালবেসে কাজ করলে যেন মস্ত চ্যালেঞ্জকে জয় করা যায়। শ্রাবণী কুমার সেই পথেরই পথিকৃৎ।
শ্রাবণীর কর্মজীবন শুরু সাংবাদিকতার জগতে। পেশার সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার জড়িয়ে থাকলেও, সেই জগতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেননি। সেই কারণেই ১৭ বছর আগে সাংবাদিকতার পেশা থেকে সরে আসেন শ্রাবণী। শুরু করেন সাজসজ্জার কাজ। লক্ষ্য ছিল সাজের জগতেই নিজের কেরিয়ার তৈরির। সেই লক্ষ্যে আজ সফল শ্রাবণী। কথায় বলে, প্যাশন যখন ফ্যাশন হয়, তখন তা বেশ চমকপ্রদ হবেই। শ্রাবণীর কেরিয়ারের গ্রাফও সেই চমকে ঠাসা।
কিন্তু হঠাৎ কেন এমন পেশা বেছে নিলেন শ্রাবণী? উত্তরে বললেন, “শুধু ভালবাসা থেকেই এই জগতে পথ চলা শুরু।” কাজের দক্ষতা ও মানুষের ভালবাসাই তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। আসলে সাজের প্রতি সকলেই কমবেশি তৎপর। সে অনুষ্ঠান হিসাবে বিয়েবাড়ি হোক বা ছোট-বড় পার্টি, কাকে কত বেশি সুন্দর দেখাবে, তা নিয়ে মনের মধ্যে চাপানউতোর চলতেই থাকে। আর কোনও ব্যক্তিকে সুন্দর করে তুলতে ভরসা কিন্তু সাঁলোই। মাথা থেকে পা পর্যন্ত যত্ন নেওয়ার জন্য সপ্তাহের সাত দিনই সাঁলোর দরজা খোলা থাকে। কিন্তু সব জায়গায় ভাল পরিষেবা পাওয়া যায় কি?
সেই উত্তর খুঁজতেই সাংবাদিকতার ময়দান ছেড়ে সাজের ময়দানে নেমেছিলেন শ্রাবণী। তাঁর মতে, “আগের থেকে এখন মানুষ অনেক বেশি সচেতন। কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ভাল হয়, আর কোন প্রোডাক্ট ত্বকের ও চুলের ক্ষতি করে, সেই বিষয়েও অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ ওয়াকিবহাল। কী ব্যবহার করলে চুল পড়া কমবে, কোন ট্রিটমেন্ট ত্বকের এবং চুলের জন্য উপযুক্ত– সব কিছু অনেকটাই নখদর্পণে। কিন্তু এত কিছুর পরেও, সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে সঠিক পথ দেখানো যে কোনও সাঁলোর দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।” শ্রাবণী দীর্ঘদিন ধরে ঠিক এই কাজটাই করে চলেছেন।
বলা হয়, সাজই ঠিক করে দেয় মানুষের ব্যক্তিত্ব। পাশাপাশি, নিজের যত্ন তো সকলেই কমবেশি করেন। আসলে ত্বক এবং চুলের পরিচর্যা শুধু স্মার্ট এবং সুন্দর দেখাতেই প্রয়োজন, তা নয়। ত্বক ও চুলের পুষ্টির জন্য, তাদের ভাল রাখার জন্যও নিয়মিত পরিচর্যার দরকার। এবং একমাত্র ভাল কোনও সাঁলোই ঠিক পথে পরিচর্যার হদিস দিতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা, দেশে-বিদেশে একাধিক কর্মশালার মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেছেন শ্রাবণী। এমনকি, ১৭ বছর পার করে আজও নিয়মিত এই বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই। সমসাময়িক স্টাইল ও ট্রেন্ড সম্পর্কে নিজেকে ওয়াকিবহাল রাখা।
শ্রাবণীর মতে, বর্তমানে বেশির ভাগ সাঁলোই হয়ে উঠেছে ফ্যামিলি সাঁলো। যেখানে শুধু মেয়েরাই নয়, বাড়ির পুরুষ সদস্য থেকে বাচ্চা বা বয়স্করা, সকলেই যেতে পারেন এবং নিজেদের পরিচর্যা করতে পারেন। শ্রাবণীর কাছে গ্রাহকের চাহিদা মেটানোই যে একমাত্র লক্ষ্য, তা কিন্তু নয়। তাঁর উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী এমন পরিষেবা দেওয়া, যাতে তিনি বার বার ওই সাঁলোতেই ফিরে আসেন।
পাশাপাশি, শ্রাবণীর শখ ভ্রমণ। কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই পছন্দসই জায়গা থেকে ঘুরে আসেন। কিন্তু যেখানেই যান, সেখান থেকে কিছু না কিছু জ্ঞান সংগ্রহ করে আনেন শ্রাবণী। তার পরখ চলে নিজের সাঁলোতে।
তবে শুধু সাঁলো নিয়েই থেমে নেই শ্রাবণী। এই সাজের জগতে নিজের কেরিয়ার গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি আরও অনেক ছেলে-মেয়েকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন। আর শুধু তাদের অর্থ উপার্জনের পন্থায় নয়, বরং তারা যাতে কাজের পাশাপাশি নিজেদের আরও ভাল ভাবে গড়ে তুলতে পারে, সে দিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখেন শ্রাবণী।
আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩