Successful Female Entrepreneur

‘খোয়াই’ যেন পিসিমার গয়নার বাক্স! রয়েছে গামছার তৈরি পোশাকের কালেকশনও

এই শহরের বুকে গড়ে ওঠা একটি বুটিক হল ‘খোয়াই’। যাদের তৈরি অভিনব গোল্ড পলিশ্ড গয়না ইতিমধ্যেই মন জয় করেছে আট থেকে আশির। নেপথ্যে সুলগ্না মজুমদার।

সংগৃহীত প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০২:২৫
Share:

সুলগ্না মজুমদার

বিগত কয়েক বছরে কলকাতা শহরে বেড়েছে বুটিকের রমরমা। তাদের তৈরি রকমারি সামগ্রীর সৃজনশীলতায় মুগ্ধ হয়েছেন বহু গ্রাহক। এই শহরের বুকে গড়ে তেমনই একটি বুটিক হল ‘খোয়াই’। যাদের তৈরি অভিনব গোল্ড পলিশ্ড গয়না ইতিমধ্যেই মন জয় করেছে আট থেকে আশির। নেপথ্যে সুলগ্না মজুমদার

সুলগ্না পেশায় শিক্ষিকা। ভালবাসতেন নাচতে। খোয়াই বুটিকের গল্পের শুরুটা সেই নাচের জগৎ ঘিরেই। ২০১৬ সালে হঠাৎই স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী কোহিনুর সেন বরাটের একটি শোয়ের জন্য সুলগ্নাকে গয়না বানাতে বলা হয়। সেই গয়না বহু মানুষের নজর কাড়ে। এর পরেই একে একে অর্ডার আসতে শুরু করে সুলগ্নার কাছে। কখনও নাচের দলের জন্য, কখনও বা নিজের জন্য। তবে তখনও স্রেফ শখেই গয়না বানাচ্ছিলেন তিনি।

একই ঘটনা ঘটে স্কুলেও। স্কুলে পড়ানোর পরে সময় পেলেই চলত গয়না তৈরির কাজ। নিজের মতো করে গয়না বানিয়ে, সেই গয়নাই স্কুলে পরে যেতেন সুলগ্না। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষিকা তাঁদের জন্যও গয়না বানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করতে থাকলেন। সেইমতো গয়না বানিয়েও দিতেন সুলগ্না। তখনও বিষয়টা শখেই আটকে।

সেই পরিস্থিতিটাই বদলে যায় অতিমারির ঠিক আগে। তখন সদ্য মা হয়েছেন সুলগ্না। সেই সময়ে হঠাৎ করেই পিঠে ব্যথার সমস্যা শুরু। চিকিৎসকেরা সুলগ্নাকে ৬ মাসের জন্য সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। উপদেশ দেন স্কুল ছেড়ে দেওয়ার। তাঁরা বলেছিলেন, ঠিকমতো বিশ্রাম না পেলে কোনও দিন সোজা হয়ে আর দাঁড়াতে পারবেন না সুলগ্না। তাঁদের নির্দেশেই নাচও বন্ধ করে দিতে হয়।

এক প্রকার বাধ্য হয়ে স্কুলের চাকরি ছাড়তে হয় সুলগ্নাকে। ভাবতে থাকেন কী করা যায়। তাঁর কথায়, “এই সময়ে মাঝে-মধ্যেই গয়নার বাক্স খুলে দেখতাম। নিজের মতো নকশাও বানাতাম। হঠাৎই ফেসবুকে চোখে পড়ল লাইভ সেলিং। সিদ্ধান্ত নিলাম আমিও এই পথেই হাঁটব।”

সময়টা ২০২০ সালের ১৭ জুন। ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৪টে। মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য তৈরি একটি ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে সেখানেই জীবনের প্রথম লাইভ করেছিলেন সুলগ্না। তখন হাতে মাত্র ২০-২৫টি নকশার গয়না। তিনি বলেন, “এই সময়টা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রায় ৩৮২ জন বসে আমার ওই লাইভ দেখেছিলেন। ওই লাইভ সেশনেই প্রায় ১২,০০০-১৫,০০০ টাকার অর্ডার আসে। প্রথম বারের লাইভেই যে এতটা সফলতা আসবে, আমি ভাবতেই পারিনি।”

এর পরে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি সুলগ্নাকে। সেই থেকে শুরু হয় ‘খোয়াই’-এর যাত্রা। শুধু গয়নাই নয়, বর্তমানে তার ভাঁড়ারে রয়েছে বিভিন্ন পোশাকও। যার বেশির ভাগটাই গামছা ও খাদিতে তৈরি। তা ছাড়াও বিভিন্ন গয়নার দোকানের জন্য নিয়মিত গয়না বানানো হয় এখানে। পাশাপাশি, তামার উপরে ২৪ ক্যারাটের গোল্ড পলিশ করে গয়নাও তৈরি হয়। মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে থাকা এমন নজরকাড়া কালেকশনের চাহিদা এখানে প্রচুর। সাবেক থেকে আধুনিক, সব ধরনের নকশাই রয়েছে ‘খোয়াই’-এর কালেকশনে।

গোল্ড পলিশ্ড গয়নার ক্ষেত্রে কেন ‘খোয়াই’কেই বেছে নিচ্ছে নতুন প্রজন্ম? সুলগ্না জানালেন, “উত্তরটা খুব সহজ। বৈচিত্রের কারণেই আমাদের কাছে গ্রাহকেরা বার বার ফিরে আসেন। আমরা শুধু তামার উপরেই নয়, টেরাকোটা, বেত, বাঁশ, নারকেল মালা, ইত্যাদির উপরেও গোল্ড পলিশের কাজ করি। আমাদের নিজস্ব কারিগরেরা রয়েছেন, যাঁরা এই গয়নাগুলি বানিয়ে দেন।” ২০২২ সালে জুয়েলারি সেকশনে বেস্ট জুয়েলারি সেলার হিসাবে ‘বঙ্গপ্রনিওর’ পুরস্কারও পেয়েছেন সুলগ্না।

মাত্র ৩,০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে গড়িয়াহাট, গোলপার্কে নিজস্ব একটা দোকান রয়েছে। আগামী দিনে আরও একটি দোকান খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। সেই লক্ষ্যেই নিজের মতো করে এগিয়ে চলেছেন সুলগ্না।

আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন