পারমিতা ঘোষ
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অনলাইন সেলিং প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা ঠিক কতটা, তা বলে বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। অথচ বছর দশেক আগেও কিন্তু পরিস্থিতিটা এমন ছিল না। যাঁর হাত ধরে এ রাজ্যে ফেসবুকে লাইভ সেলিংয়ের ধারণা জনপ্রিয় হয়, তিনি পারমিতা ঘোষ, বিটিএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।
গল্পের শুরুটা ২০১৬ সালে। তখনও ফেসবুকে ‘মার্কেটপ্লেস’ ফিচারটি আসেনি। সেই সময়েই লাইভ সেলিংয়ের মাধ্যমে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের উপার্জনের পথ প্রশস্ত করে দেন পারমিতা। যদিও সেই সময়ে এ কাজ ততটাও সহজ ছিল না। নিছকই খেলার ছলে একটি ফেসবুক গ্রুপ বানিয়েছিলেন পারমিতা। নাম দেন ‘বিটিএম’। বর্তমানে এই গ্রুপের সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন প্রায় ৩ লক্ষ মহিলা। সেই সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। গ্রুপটি সম্পূর্ণ মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত। পারমিতা ও তাঁর দলের নিরলস প্রচেষ্টা এবং আত্মবিশ্বাসের কারণেই বর্তমানে এই গ্রুপ অনলাইন সেলিংয়ের দুনিয়ায় এক পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে।
নিয়মমাফিক এই গ্রুপে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র কেনা-বেচা করা হয়। পোশাক থেকে শুরু করে নানা ধরনের গয়না, বিভিন্ন আনুষঙ্গিক সাজ সরঞ্জাম, আরও কত কী! তবে এ সবের পাশাপাশি, আরও একটি কারণে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছে বিটিএম গ্রুপ। তা হল প্রদর্শনীর আয়োজন।
২০১৮ সালে বিটিএম-এর অনলাইন সেলারদের নিয়ে প্রথম বার অফলাইন প্রদর্শনীর আয়োজন করেন পারমিতা। সেই শুরু। তার পরে প্রতি বছর নিয়ম করে বছরে ২-৩ বার প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। আর সেগুলি যে কতটা সফল, তা বোঝা যায় ভিড় এবং বিক্রির পরিসংখ্যান দেখলেই। সদ্য শেষ হওয়া পুজোর প্রদর্শনীগুলিও কলকাতা শহরে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছিল। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ।
প্রতি বছরের মতো এ বারও পুজোর পরে আরও একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করবে গ্রুপ— বিটিএম উইন্টার কার্নিভাল। এ বছর হাজরার হরিশ পার্কে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। ৩০ নভেম্বর শুরু। চলবে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০২২ সালে এই কার্নিভালের সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। অনলাইন সেলারদের পাশাপাশি তাতে অংশগ্রহণ করতে এসেছিল বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থাও। ভিড় জমিয়েছিলেন মুক্তির অপেক্ষায় থাকা বিভিন্ন ওয়েব সিরিজের কলাকুশলীরাও, তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রের প্রচারের জন্য। উইন্টার কার্নিভালের পরে ফের আরও একটি বড় ইভেন্টের আয়োজন করতে চলেছে বিটিএম গ্রুপ। ২০২৪-এর প্রথম প্রদর্শনী ‘চৈত্র কার্নিভাল’। ৬ থেকে ৮ এপ্রিল, তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান হবে কলকাতায়। অনলাইন ব্যবসায়ীরা তাঁদের বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা নিয়ে উপস্থিত থাকবেন সেখানে।
গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, মেয়েদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার নেপথ্যে অনলাইন সেলিং প্ল্যাটফর্মগুলি বড় ভূমিকা নিচ্ছে। কাজের ফাঁকে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করার মতো সুবিধা রয়েছে এতে। আরও বড় সুবিধা হল সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ সেলিং –এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কেনা-বেচা করা যায় অনায়াসেই। কোনও ভৌগোলিক সীমা থাকে না। এই উপলব্ধি বহু আগেই করতে পেরেছিলেন পারমিতা। সেই পথে চলেই বর্তমান বাংলার মানুষের কাছে এক বেনজির উদাহরণ হয়ে উঠেছেন তিনি।
আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩