অপ্সরা গুহঠাকুরতা
পুজো হোক বা বিয়েবাড়ি কিংবা পার্টি, সাজের দিক থেকে কোনও রকম ফাঁকি দিতে নারাজ বাঙালি রমণী। শাড়ি থেকে গয়না, নিজেকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে এই সব কিছু নিয়ে একটু বেশিই যত্নশীল হন তাঁরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই বদল এসেছে ফ্যাশন দুনিয়ায়। সাবেক থেকে পশ্চিমি, বদলে গিয়েছে পোশাকের ভাবনা। আসলে সঠিক পোশাক এক লহমায় কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় ব্যক্তিত্বকে। নারীদের সেই সাজকে আরও বর্ণময় করে তোলার ভাবনা নিয়েই শুরু হয় অপ্সরা: দ্য ডিজাইনার স্টুডিয়ো। নেপথ্যে অপ্সরা গুহঠাকুরতা।
ফ্যাশন বা সাজের সংজ্ঞাটা অপ্সরার কাছে একদম অন্য রকম। তিনি মনে করেন, প্রতিটি নারীর সাজ আসলে তাঁর ভিতরে থাকা গল্পগুলোকে ক্যানভাসের মতো করে তুলে ধরে। সেই ভাবনার প্রতিচ্ছবিই ফুটে ওঠে অপ্সরার প্রতিটি কালেকশনে। আসলে, দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি যুক্ত রয়েছেন ফ্যাশন দুনিয়ার সঙ্গে। ঝুলিতে রয়েছে মিসেস ইন্ডিয়া ২০১৮, উয়োম্যান অফ দ্য ইউনিভার্স ২০১৯-এর মতো একাধিক খেতাব। পাশাপাশি, তিনি প্রশিক্ষিত শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পীও বটে।
গল্পের শুরুটা যদিও খানিকটা অন্য রকম। অপ্সরা পেশায় ছিলেন শিক্ষিকা। কিন্তু অতিমারির সময়ে সবটা কেমন যেন বদলে যায়। তাঁর কথায়, “চাকরির চাপে নিজের মতো করে কিছুই করে ওঠা হচ্ছিল না। কিন্তু সেই ছোট থেকেই ফ্যাশনের দুনিয়ায় কিছু একটা করার স্বপ্ন আর ইচ্ছে দুই-ই ছিল। কোভিডের সময়ে বাড়িতে বসেই অনলাইনে ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। সেই সময়েই এই ব্র্যান্ড তৈরির কথা মাথায় আসে। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর শুরু করি অপ্সরা: দ্য ডিজ়াইনার স্টুডিয়ো। যেহেতু আমি দীর্ঘ দিন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছি, তাই আমার কাছে গোটা বিষয়টা খুব সহজ ছিল।”
অপ্সরা জানতেন, নতুন প্রজন্মের কী পছন্দ। সেই কারণেই তার প্রতিটি সম্ভারে ফুটে উঠেছে স্বাচ্ছন্দ্য ও নান্দনিকতার এক অভূতপূর্ব মিশেল। সঙ্গে ট্রেন্ডিং কালেকশন এবং নজরকাড়া ডিজ়াইন— সব মিলিয়ে খুব অল্প সময়েই গ্রাহকদের মন জয় করে নিয়েছে অপ্সরার ডিজ়াইনার স্টুডিয়ো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশ পেরিয়ে সুখ্যাতি ছড়িয়েছে বিদেশেও।
প্রথম থেকে গতে বাঁধা ধারণার বিপরীতে হেঁটেছিলেন অপ্সরা। আর সেই সিদ্ধান্তই তাঁর স্টুডিয়োর জনপ্রিয়তার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, “আমি এমন কিছু তৈরি করতে চেয়েছিলাম, যা গ্রাহকদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে। খুব ছোট সাইজ় হোক বা প্লাস সাইজ়, সব ধরনের পোশাকই রয়েছে আমার সংগ্রহে। পাশাপাশি, উন্নত মানের ফ্যাব্রিকের ব্যবহার এবং চোখ ধাঁধানো নকশাই আমার ব্র্যান্ডকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে।”
কী নেই অপ্সরার কালেকশনে? হাতে বোনা শাড়ি, ডিজ়াইনার ব্লাউজ, ফিউশন ড্রেস, কো-অর্ড সেট থেকে শুরু করে মানানসই গয়না, আরও কত কী! পুরুষদের পোশাকের মধ্যে রয়েছে ক্যাজুয়াল শার্ট, কুর্তা, বন্ধগলা জ্যাকেট সহ আরও অনেক কিছু। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাব্রিকের বিকল্পও। শুধু দেশেই নয়, অপ্সরার তৈরি পোশাকের গুণগ্রাহী ছড়িয়ে রয়েছেন বিদেশেও। তাঁদের জন্য শিপিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।
আসলে অপ্সরা বুঝতে পেরেছিলেন, এই ব্যস্ত সময়ে মানুষ দ্রুত পরিষেবা চায়। এমন পোশাকের খোঁজ করে, যা নিজ গুণে স্বতন্ত্র। দু’টি আউটলেটও রয়েছে তাঁর। একটি কেয়াতলা রোড, গড়িয়াহাট এবং অপরটি গাঙ্গুলিবাগানে। অপ্সরা বলেন, “আমি চেয়েছিলাম গ্রাহকদের পরিষেবায় যেন কোনও খামতি না থাকে। সেই কারণেই আমার আউটলেটের লাইভ ডিজ়াইন ইউনিটে গ্রাহকেরা পোশাক তৈরির সঙ্গে সঙ্গেই ইচ্ছেমতো সাইজ অল্টারও করিয়ে নিতে পারেন। তাঁদের ভালবাসার কারণেই আমার এই যাত্রা আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে।”
সম্প্রতি পুজোর সম্ভার নিয়ে এসেছেন অপ্সরা। সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি থেকে ডিজ়াইনার ব্লাউজ, হাতে বোনা কাপড়-সহ আরও অনেক কিছু। যেগুলি পুজোর উদযাপনকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।
আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩