Successful Female Entrepreneur

পুজোর আগে শরীর সুস্থ রাখবেন কী ভাবে? জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ শাশ্বতী পাল সাহা

গত ১০ বছর ধরে এই সমস্ত শারীরিক সমস্যার সমাধানের পথ দেখাচ্ছেন শাশ্বতী পাল সাহা। শাশ্বতী পেশায় পুষ্টিবিদ। কলকাতার এক নামী হেলথ্ কেয়ার সংস্থায় ডায়েটিশিয়ান হিসাবে ৭ বছর কাজ করেছেন তিনি। তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ ক্লিনিকের বাইরে সাধারণ মানুষের ভিড়।

সংগৃহীত প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৫৫
Share:

পুষ্টিবিদ শাশ্বতী পাল সাহা

খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম যেন বর্তমানে জীবনের একটি অংশ হয়ে গিয়েছে। রোজকার ব্যস্ততার চাপ হোক কিংবা রোজনামচার গলদ, খাওয়াদাওয়ার অনিমের কারণেই কিন্তু অজান্তে শরীরে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন রোগ। কর্মজগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম, বা ভাল মন্দের দিকে অনেকেই নজর দিতে পারেন না। ফলে একাধিক শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ে ওজন। পাশাপাশি বাসা বাঁধে মানসিক অবসাদ।

গত ১০ বছর ধরে এই সমস্ত শারীরিক সমস্যার সমাধানের পথ দেখাচ্ছেন শাশ্বতী পাল সাহা। শাশ্বতী পেশায় পুষ্টিবিদ। কলকাতার এক নামী হেলথ্ কেয়ার সংস্থায় ডায়েটিশিয়ান হিসাবে ৭ বছর কাজ করেছেন তিনি। তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ ক্লিনিকের বাইরে সাধারণ মানুষের ভিড়। চোখ বন্ধ করে তাঁকে বিশ্বাস করেন অনেকেই। অতিমারির সময়ে যখন গোটা বিশ্ব উত্তাল, ক্লিনিক বন্ধ, সেই সময়েই শাশ্বতী সিদ্ধান্ত নেন নতুন কিছু করবেন। সঙ্গে স্বামী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের উৎসাহ তো ছিলই। শাশ্বতী বলেন, “সেই সময়ে আমার কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার ছিল যে, অতিমারি রুখতে গেলে মানুষের ইমিউনিটি তৈরি করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া সারা দিন বাড়িতে বসে থাকায় কম শারীরিক পরিশ্রমের ফলে বহু মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধছে। ওজন বেড়ে যাচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তখনই আমার মাথায় আসে অনলাইনের কথা। সেই সময়ে রোগীদের কাছে পৌঁছে যেতে অনলাইনের থেকে ভাল মাধ্যম আর কিছু হতে পারত না।”

সেই মতো ২০২১ সালে একটি ফেসবুক পেজ শুরু করেন শাশ্বতী। পেজটির নাম দেন ‘হেলদি লাইফ উইদ শাশ্বতী।’ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন টিপস, ডায়েট সলিউশন ইত্যাদির ভিডিয়ো পোস্ট করতে থাকেন সেই পেজে। ধীরে ধীরে মানুষ তা সাদরে গ্রহণ করতে থাকেন। বাড়তে থাকে ফলোয়ার্স।

বর্তমানে লেকটাউনে নিজস্ব চেম্বার রয়েছে শাশ্বতীর। অনলাইনের পাশাপাশি বহু মানুষ অফলাইনেও ভিজ়িট করেন তাঁর কাছে। বর্তমানে রমরমিয়ে চলছে তাঁর চেম্বার। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শাশ্বতীর কাছে আসেন ডায়েট সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য। ইতিমধ্যেই প্রায় ৮০০০-এরও বেশি মানুষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ডায়েট সংক্রান্ত বিষয়ে টিপস্ নিতে। দেশ পেরিয়ে বিদেশেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। এই বিষয় তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, “এত ভালবাসা আর এত পরিচিতি যে আমি পাব, তা কখনওই ভাবিনি।”

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রা বদলেছে। শরীরে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন রোগ। যেমন, হঠাৎ করেই মোটা হয়ে যাওয়া, মেয়েদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি। শাশ্বতী জানাচ্ছেন, “সঠিক জীবনযাপনের সঙ্গে সঠিক খাবার খেলেই সুস্থ থাকা যায়। তাই শুধু রোগা হওয়ার জন্য নয়, ডায়েট করা উচিত নিজেকে ফিট রাখার জন্য।”

কী ভাবে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়, তা নিয়ে কিছু টিপস্ দিচ্ছেন শাশ্বতী:

সময় মতো খাবার খান: সময় মতো খাবার খাওয়া কিন্তু ভীষণ ভাবে দরকার। নিয়ম মেনে সময় মতো খাবার খান। এক বেলা না খেয়ে পরে ভারী কিছু একেবারেই খাবেন না। অল্প খান, কিন্তু বারে বারে খান। এক বারে কখনওই বেশি খাবার খাবেন না।

তাড়াতাড়ি ডিনার করুন: কম সময়ে ওজন ঝরাতে রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শরীরও সুস্থ থাকে এবং মেদ কমে। দুপুরে ভারী খাবার খেতে পারেন। কিন্তু ডিনারে সব সময়ে হাল্কা খাবার রাখুন। একটা রুটি, সবজি অথবা এক বাটি সুপ খেয়ে নিন।

নিয়মিত শরীরচর্চা করুন: ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ও সুস্থ থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। কিছু না হলেও দিনে সারাদিনে তিরিশ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন.

ব্যালেন্সড ডায়েট মেনে চলুন: খাদ্য তালিকায় সব রকম পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন। অনেকেই কার্বোহাইড্রেট মানে ভাত-রুটি পুরোপুরি বন্ধ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। সবাইকে বলব, এটা করা একদমই উচিত না। খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন-ফ্যাটের ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাই কোনও বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে খাদ্য তালিকা বানিয়ে মেনে চলুন।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান: অতিরিক্ত স্ট্রেস ওজনের উপরে প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ভীষণ জরুরি। রাতে ৮ ঘণ্টা ভাল করে ঘুমোন।

বর্তমানে বহু মানুষ পেটের চর্বি বা বেলি ফ্যাট বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। সেই চর্বি কমাতেও উপায় জানাচ্ছেন শাশ্বতী। তাঁর মতে, পেটের চর্বি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন খাদ্য তালিকায় অত্যাধিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট অথবা সিম্পল সুগারের ব্যবহার। হয়তো আপনি মিষ্টি খান না কিন্তু হেলদি্ খাবার ভেবে যে খাবারগুলি খাচ্ছেন, যেমন বাজারের প্যাকেটজাত ফ্লেভারড কর্নফ্লেক্স,মুসলি,বিস্কুট– এর মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে আর্টিফিশিয়াল সুগার। তাই এগুলি খাওয়া অবিলম্বে বন্ধ করুন।

দ্বিতীয়ত, আপনার খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার নেই। ময়দার মতো খুব বেশি রিফাইন্ড খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। পরিবর্তে ওটস, ডালিয়া, সবুজ শাকসবজি, ফল, ইত্যাদির মতো খাবার খান, যেগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।

তৃতীয়ত, শরীরকে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম দিতে হবে। অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণেও কিন্তু অনেক সময়ে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।

চতুর্থত, এখন বেশির ভাগ মানুষকেই অফিসে বসে কাজ করতে হয়। তাই হাল্কা ব্যায়াম করা যেতে পারে। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন। যে ভাবেই হোক না কেন, অল্প সময় নিজের জন্য বার করুন।

পঞ্চমত, অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাটজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। যেমন প্যাকেটের চিপস, বিস্কুট, তেলে ভাজা খাবার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি।

আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন