কসমেটিক গাইনোকলজি চিকিৎসক সায়ন্তনী সেনগুপ্ত
বদলে যাওয়া জীবনযাপনের সঙ্গে সঙ্গে গর্ভধারণের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বহু নারী। অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে স্ত্রী-রোগের হার। সন্তানধারণ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার হারও বেড়েছে। শহরাঞ্চলে সেই সমস্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে সমাধান সূত্র। বেড়েছে চিকিৎসকের সংখ্যাও। যদিও মফস্সল বা গ্রামাঞ্চলে স্ত্রীরোগ নিয়ে আলোচনা করার লোকের সংখ্যা অত্যন্ত কম। এক জন চিকিৎসক হওয়ার দরুন নিজ উদ্যোগে সেই সমস্যার সমাধান করতেই এগিয়ে এসেছেন চিকিৎসক সায়ন্তনী সেনগুপ্ত।
বর্তমানে তিনি কলকাতার এসএসকেএম, আইপিজিএমইআর অ্যান্ড পিজি হাসপাতালের স্বনামধন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। কর্মজগতে নজরকাড়া সাফল্যের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত বিষয়ে একনিষ্ঠ ভাবে প্রত্যন্ত গ্রামীণ মানুষদের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে চলেছেন তিনি।
সায়ন্তনীর চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা ছোটবেলা থেকেই। ঝুলিতে রয়েছে এমডি, এফএমএএস এবং এফআইএওজি ডিগ্রি। পাশাপাশি তিনি কসমেটিক গাইনোকোলজিতেও ডিপ্লোমা করেছেন। ইনফার্টিলিটি তথা বন্ধ্যত্ব নিয়েও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তাঁর এই পড়াশোনা ও জ্ঞান যাতে সাধারণ মানুষের স্বার্থেই ব্যবহার করতে পারেন, সেই কারণেই এ ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন সায়ন্তনী।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, মহিলাদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া তুলনামূলক ভাবে জটিল। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে তাঁদের। এই বিষয়গুলি নিয়ে অনেকেই লজ্জায় মুখ খুলতে চান না। বিশেষত গ্রাম বা মফস্সলের বাসিন্দা মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রবল। সায়ন্তনী নিজ উদ্যোগে সেই সমস্যার সমাধানেই এগিয়ে এসেছেন। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও রোগী দেখার ফাঁকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামগুলিতে নিয়মিত মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই, সন্তান ধারণ ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে মহিলাদের সচেতন করে তোলা। যাতে সমস্ত বাধা কাটিয়ে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।
সায়ন্তনীর কাছে আত্মবিশ্বাসই হল সাফল্যের চাবিকাঠি। তাঁর মতে, প্রত্যেকটি মেয়ের নিজেকে ভালবাসা খুব জরুরি। কারণ নিজের প্রতি ভালবাসা থেকেই আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়। আর কেউ আত্মবিশ্বাসী হলে, তাঁকে আর কেউ আটকাতে পারেন না। ক্যাম্পে আগত রোগীদেরও তিনি একই পরামর্শ দেন। যা বহু নারীর জীবন বদলে দিয়েছে। এবং সায়ন্তনীর সেই উদ্যোগই তাঁকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ জনপ্রিয় করে তুলেছে।
তবে তথাকথিত স্ত্রীরোগ চিকিৎসাতেই সায়ন্তনীর সুনাম সীমিত থাকেনি। ইনফার্টিলিটি তথা বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা এবং কসমেটিক গাইনোকলোজির চিকিৎসক হিসাবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। এই চিকিৎসায় তাঁর দক্ষতা পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁকে বিশেষ জনপ্রিয় করে তুলেছে।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকেই ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্ব শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। কেউ কেউ হয়তো ইনফার্টিলিটির চিকিৎসার বিষয়েও জানেন। কিন্তু কসমেটিক গাইনোকোলজি আদতে কী? এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক সায়ন্তনী সেনগুপ্ত বলেন, “সন্তান ধারণের পরে অনেক সময়েই মহিলাদের তলপেটে, বুকে ও গোপনাঙ্গের চারপাশে স্ট্রেচ-মার্কস দেখা যায়। অনেকেই জানেন না যে এই স্ট্রেচ মার্কসের নিরাময় সম্ভব। কিন্তু বহু মহিলাই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা পান বা এড়িয়ে যান। অথচ, কসমেটিক গাইনোকোলোজির মাধ্যমে মাত্র ৬ থেকে ৮টি সিটিংয়ে এই দাগগুলি নির্মূল করা সম্ভব। এবং এর জন্য রোগীকে কোনও হাসপাতালে ভর্তি হতেও হয় না। বলা ভাল, এই ধরনের চিকিৎসা সন্তানধারণ পরবর্তী সময়ে এক জন নারীকে আরও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।” তিনি আরও যোগ করেন, “শুধু তাই নয়, এমন উন্নত পদ্ধতির মাধ্যমে খুব কম খরচে নিরাপদে শরীরের গোপন অংশে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিও সম্ভব হয়েছে।”
আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩