আধুনিক বাড়ির সাজের অন্যতম সঙ্গী হল কুশন।
নিজের ঘরকে মনের মতো করে সাজিয়ে তুলতে কে না চান!অথচ খেয়াল রাখতে হবে যেন পকেটে বাড়তি চাপও না পড়ে। ঘর সাজানোর জন্য যে সব সময় দামী সামগ্রীই লাগবে তা কিন্তু একেবারেই নয়। একটু ভাবনাচিন্তা করে বাছাই করা টুকিটাকি সামগ্রী দিয়েও দারুণ সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার স্বপ্নের নীড়।আধুনিক বাড়ির সাজের অন্যতম সঙ্গী হল কুশন। সোফা থেকে শুরু করে বিছানাতেও কুশন দিয়ে সাজানো যায়। এতে দেখতেও ভাল লাগে, সঙ্গে আরামও বজায় থাকে। তবে সব ঘরের জন্য সব কুশন নয়। আবার কুশন কভারও বাছতে হবে ভেবেচিন্তে।
আজকাল যে কোনও শপিং মলেই কুশন ও কুশন কভারের অজস্র সম্ভার মেলে। তবে মলে দামটা একটু বেশি। বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলাতেও নানা কারুকাজের কুশন পাওয়া যায় সেখান থেকেও কিনতে পারেন পছন্দসই কুশন কভারের সেট। মূলত তিন ধরনের কুশন আপনি ব্যবহার করতে পারেন ঘরের অন্দরসজ্জার জন্য।
অল ফোম কুশন: এই ধরনের কুশনের পেটের মধ্যে বেশি ঘনত্বের ফোম ব্যবহার করা হয়। এমনকি সেই ফোমের বাইরে দিয়েও আর একটা নরম ফোমের আবরণ থাকে। ফলে এই ধরনের কুশনে বসলেও ভাঁজ পড়ে না।
স্প্রিং ডাউন কুশন: এই ধরনের কুশনের একদম ভিতরের স্তরে স্প্রিংয়ের কয়েল থাকে। তাকে ঘিরে থাকে ফোমের বাক্স। আর সবচেয়ে বাইরে পলিয়েস্টার ফাইবারের স্তর। ফলে এই ধরনের কুশন দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে বসে যেতে পারে। তাই এর বিভিন্ন দিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করাই ভাল।
ডাউন পুশ কুশন: সবচেয়ে আরামদায়ক কুশন এটি। তবে তা ব্যয়সাপেক্ষও। মোটা পলিয়েস্টার ফাইবার দিয়ে হালকা ফোম র্যাপ করে এই কুশন তৈরি।
কুশানের রঙে যেন অবশ্যই থাকে কনট্রাস্টের ছোঁয়া।
ঘর সাজাতে কুশন
আকার: হরেক মাপ ও আকারের কুশন এখন ভীষণ ট্রেন্ডি। গোল, ত্রিকোণ, চৌকো ইত্যাদি জ্যামিতিক আকার ছাড়াও একফালি তরমুজ, স্ট্রবেরি, পেঁচা, মাছ, হাতি, কেট্ল ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের ফাঙ্কি কুশন এখন খুব ‘ইন’। বাচ্চাদের ঘরের সাজে বিছানায় সাজিয়ে রাখতে পারেন এই সব কুশন। ঘরের মাপ খুব বেশি বড় না হলে অযথা অতিরিক্ত কুশন দিয়ে ঘর ভরতি করবেন না। সেই কুশন আপনার ঘরের সাজের সঙ্গে মানাচ্ছে কি না সেটা দেখে নিন। বিভিন্ন মাপের কুশন মিলিয়ে মিশিয়ে রাখুন।
রং: কুশনের রং বাছাইটা খুব ভেবেচিন্তে তবেই করুন। এমন কোনও রং বাছবেন না, যা চোখে লাগে। যে ঘরের জন্য কুশন কিনবেন, সেই ঘরের দেওয়াল, পর্দা, সোফা ইত্যাদির রং আগে ভাল করে লক্ষ করুন। কুশানের রঙে যেন অবশ্যই থাকে কনট্রাস্টের ছোঁয়া। পাশাপাশি সব একই রঙের কুশন না রেখে বিভিন্ন রঙের কুশন দিয়ে সাজাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, রংগুলি যেন একে অপরের সঙ্গে মানানসই হয়। সোফা সেটের রং হালকা হলে গাঢ় রঙের কুশন বাছুন। এই ভাবেই নানা রঙের মিশেলে ঘরকে সাজিয়ে তুলুন।
কভারের নকশা: দু’রকম হতে পারে কুশন কভারের নকশা। প্রিন্টেড বা এমব্রয়ডারি করা। আজকাল ডিজিটাল প্রিন্টের কুশন কভারেরও বাজারে হেশ রমরমা। কাশ্মীরি, গুজরাতি ইত্যাদি স্টিচের উপরে ফুলেল নকশার কুশন কভার বেশ ভাল লাগে। এ ছাড়াও বোল্ড সলিড, জিয়োমেট্রিক প্রিন্ট, পেজলি প্রিন্ট, ফ্লোরাল মোটিফ, লিভিং মোটিফ ইত্যাদি প্রিন্টের কুশন কভারও ব্যবহার করতে পারেন ঘরের সাজে অভিনবত্ব আনতে।
কাপড়ের ফ্যাব্রিক: নরম তুলতুলে ফারের কুশন আপনার ঘরের সাজসজ্জায় চমক আনতে পারে। তবে এই ধরনের কুশন খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। দামটাও অনেকখানি বেশি। এ ছাড়া খাদি, খেস, মটকা, তসর, রেশম ইত্যাদি বিভিন্ন ফ্যাব্রিকের কুশন কভারও পাওয়া যায়। দক্ষিণাপণ কিংবা বিভিন্ন মেলায় মিলতে পারে এই সব ফ্যাব্রিকের উপর হরেক রকম ডিজাইন। কুশনে পমপম বা টাস্ল থাকলেও দেখতে বেশ লাগে, তবে খেয়াল রাখবেন তা যেন খুলে পড়ে না যায়।
আজকাল ডিজিটাল প্রিন্টের কুশন কভারেরও বাজারে হেশ রমরমা।
সাজানোর খুঁটিনাটি
• সোফার উপরে পাশাপাশি তিনটে কুশন না রেখে আগে পিছে করে ছ’সাতটা মাল্টিকালার কুশন দিয়ে সাজাতে পারেন। এতে আপনার বাড়িতে অতিথি এলে তিনি চাইলে একটা কুশল কোলে নিয়েও বসতে পারেন। এতে আরাম বাড়বে বই কমবে না।
• সলিড, প্রিন্টেড মিলিয়ে মিশিয়ে কুশন কভার বাছতে পারেন।একই ধরনের প্রিন্ট বাছবেন না। সলিড প্রিন্ট পিছনের দিকে রেখে সামনে প্রিন্টেড কুশন রাখলে দেখতে ভাল লাগে। এতে ঘরের শোভা বাড়বে।
• অনেকেইঘরের জানালায় সুন্দর টাইলস কিংবা মার্বেল দিয়ে বসার ব্যবস্থা করে থাকেন। সেখানেও দু’চারটে কুশন দিয়ে সাজিয়ে ফেলতে পারেন। দেখতে ভাল লাগবে।
• বিছানায় কুশন রাখার সময়ে বিছানার মাথার দিকটা ব্যবহার করুন। বালিশের উপরে অসম নাম্বারে কুশন রেখে সাজান।
• এক ধরনের গোল বা চৌকো আকারের কুশন কিনতে পাওয়া যায় বসার জন্য। এই কুশন বসার ঘরে দেওয়াল ঘেষে রেখে তার উপরে পিঠের কাছে দু’টো কুশন দিয়ে সাজিয়ে নিলেই নতুন বসার জায়গা তৈরি হয়ে যাবে।
• কুশন যেমনই হোক না কেন তার কভার পরিষ্কার রাখতে হবে। দাগ পড়ে গেলে তা বদলে ফেলুন।