ঘোড়ার গাড়ি এবং মোটরকারের আগমনে পালকির সুদিন ঘুচে গিয়েছিল, এ কথা ঠিকই। তার কফিনে শেষ পেরেক বসিয়ে দেয় রিকশা। জাপান থেকে চিনের সাংহাই হয়ে এই যান এসেছিল কলকাতায়। তাকে লালনপালন ও ভরণপোষণ করেছিলেন কলকাতার আদি চিনে বাসিন্দারাই।
তবে প্রথম দিকে রিকশা ছিল মানুষের হাতে টানা এবং দুই চাকার। অনেক পরে রিকশায় চেন বসে। কলকাতায় প্রথম দিকে রিকশাচালকরা সবাই ছিলেন সকলে চিনা সম্প্রদায়ের।
রিকশা-র পুরো নাম ‘জিন-রি-কি-শ’। জাপানি ভাষায় যার অর্থ ‘মানুষ টানা গাড়ি’। জাপান থেকে এই গাড়ি পৌঁছয় চিনের সাংহাই শহরে। ভারতে রিকশার প্রথম বার পা পড়ে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে, সিমলায়।
লেডি ডাফরিন তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন সিমলায় রিকশা আগমনের কথা। প্রথমে এই যানের নাম ছিল ‘জেনি রিকশা’ বা ‘জিন রিকশা’। তার পর লোকের মুখে মুখে ছোট হতে হতে যানের নাম হল ‘রিকশা’।
সিমলা থেকে কলকাতায় রিকশার আসতে সময় লেগে গেল ২০ বছর! চিনা সম্প্রদায়ের কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে রিকশা নিয়ে এসেছিলেন কলকাতায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে চিনারাই ছিলেন কলকাতার রিকশাচালক।
তবে বেশি দিন তাঁদের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকল না। কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতীয়দের আধিপত্য তৈরি হল এই পেশায়। তবে হাতেটানা রিকশাচালক হিসেবে বিহারের মানুষ বরাবরই টেক্কা দিয়েছেন বাঙালিদের।
ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে ১ মাইল পর্যন্ত ২ জন আরোহীর ক্ষেত্রে রিকশার ভাড়া ছিল ৩ আনা। তার পর মাইলপিছু ভাড়া বাড়ত ৩ আনা করে।
কখনও আবার ভাড়া নির্ধাতির হত সময়ের নিরিখেও। ১ ঘণ্টা পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৬ আনা। সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে ঘণ্টাপিছু ভাড়া যোগ হত ৩ আনা করে।
প্রকারভেদ ছিল রিকশার আকারেও। ছোট রিকশা ছিল, এক জন আরোহীর জন্য। সে ক্ষেত্রে ১ মাইল পর্যন্ত ভাড়া হত দেড় আনা। এর পর প্রতি মাইল ভাড়া বরাদ্দ হত দেড় আনা করে।
ছোট রিকশার ক্ষেত্রেও সময় হিসেবে ভাড়া নির্ধারিত হত। ১ ঘণ্টা পর্যন্ত ৩ আনা এবং তার পরে প্রতি বাড়তি ঘণ্টা পিছু দেড় আনা করে ভাড়া গুনতে হত আরোহীকে।
রিকশার ঘণ্টার টুংটাং শব্দের আড়ালে চাপা পড়ে গেল পালকির গান।