‘বড় কাজের জন্য কলকাতার বাইরে গেলে নাম পাব, অর্থ পাব কিন্তু মনের শান্তি পাব না।’
জন্ম এখানে, বসবাস এখানে, বড় হওয়া এখানে। স্টুডিও পাড়ায় জন্ম হলেও স্টুডিওতে কিন্তু অনেক পরে এলাম। সবকিছুই আমার কলকাতায়। আমি জীবনেও কলকাতা ছেড়ে যাব না—এখনও পর্যন্ত এটাই আমার ইচ্ছা।
কাজ হয়তো অনেক করব জীবনে, হয়তো অনেক বড় বড় কাজ করব। কাজের জন্য হয়তো আমাকে বাইরে যেতে হবে। মুম্বই যেতে হতে পারে,বিদেশে যেতে হতে পারে...। কিন্তু অন্য কোথাও থাকার আমার ইচ্ছে নেই। বড় বড় কাজ হয়তো হবে। কিন্তু যাঁদের সঙ্গে আমি বড় হয়েছি, যাঁরা আমার আপনজন, তাঁদের পাব না। বড় কাজের জন্য বাইরে গেলে নাম পাব, অর্থ পাব কিন্তু মনের শান্তি পাব না। দিনের শেষে আমি মা-বাবাকে দেখতে চাই। সুযোগ পেলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতে চাই। ওঁদের সঙ্গে খেলাধুলো করতে চাই। যদিও এখন এসব অনেক কম হয়।
ছোটবেলা থেকে যেহেতু এই শহরেই বেড়ে উঠেছি, এখানে কোথায় কী খাবার দাবার পাওয়া যায় সব জানি। কী কী খাবার ভাল লাগে, কী কী খারাপ লাগে সব বলতে পারব। বাইরে যখন কোথাও ঘুরতে গিয়েছি, সেই সময় হয়ত অন্যান্য জায়গার খাবার ভাল লেগেছে। কিন্তু রোজকার খাওয়ার জন্য আমি কলকাতা ছাড়া আর কোনও জায়গার কথা ভাবতেই পারি না। সেজন্য কলকাতা ছাড়ার কথা ভাবতেই পারব না।
আরও পড়ুন: কলকাতা, ভেবে দেখো যাবে কি না আমার সাথে
বোনের অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল আমার সঙ্গে ফটোশুট করার
তবে খারাপ লাগে যখন জ্যামে আটকে যাই। আমার প্রতিদিনের রুটটাকে অনেক গালাগালি করি। টালিগঞ্জ থেকে ভিলাইন স্টুডিও এত ব্যস্ত রাস্তা, তার ওপর খুবই সরু। যেজন্য দিনের যে সময়েই যাই না কেন, জ্যাম থাকেই। তবে আপাতত কিছুদিন এই জ্যাম থেকে আমার মুক্তি। ‘বকুল কথা’ ধারাবাহিকের শুটিং শেষ। আমাকেও আর ওই রাস্তায় রোজ রোজ যেতে হচ্ছে না। ভবিষ্যতে যেতে হবে কিনা এখনও জানি না।এই চত্বরেই বেহালা। বেহালা এমনিতেই অনেক ঘিঞ্জি এলাকা। এই জ্যামটা কলকাতার একটা খারাপ দিক। যদি সুযোগ পেতাম,তা হলে পাল্টে ফেলতাম। কিন্তু সে সুযোগ আমার নেই।
আরও পড়ুন: কলকাতার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমার প্রথম কবিতা লেখা
কলকাতাকে পাল্টে ফেলার সুযোগ পেলে আমি প্রথমেই যানজটের মোকাবিলা করব। এখানকার মানুষের দিন শুরু হয় রাস্তার জ্যাম দিয়ে। রাস্তাতেই যদি মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, দিন ভাল যাওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্তত আমি সে রকমই মনে করি। রাস্তা যদি বড় করা যায় কোনও ভাবে... এটা অবশ্য শুধুই আমার একটা ভাবনা। নিশ্চয় আমাদের সরকার ভেবেছে বা ভাবছে এইসব নিয়ে। যতটা সম্ভব করেছে। তবে পুরো সমস্যাটা দূর করতে পারলে খুব ভাল হত।
কলকাতা শহরটার সঙ্গে আমার প্রেম করার স্মৃতি আছে
অন্যদিকে কিছু কিছু অটো খুব খারাপভাবে চালানো হয়। অনেক অটোচালকের ব্যবহারও খুব খারাপ। তবে সবার কথা অবশ্যই বলছি না। ট্যাক্সি, বাস, রিকশা...আরও অনেক যানবাহন আছে কলকাতায়। কিন্তু খারাপ ব্যবহার অটোওয়ালাদেরই বেশি। এটা যদি নিয়ন্ত্রণে আসে তা হলে ভাল হয়।
কলকাতায় ভাল স্মৃতিও কম নেই আমার। মনে আছে আমার বোনের সঙ্গে নলবনটুতে একটা ফটোশুট করেছিলাম। তার কয়েকদিন পরেই ওর বিয়ে ছিল। বোনের অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল আমার সঙ্গে ফটোশুট করার। আমি সেটার ব্যবস্থা করেছিলাম। সেটা খুব ভাল হয়েছিল। খুব সুন্দর সুন্দর ছবি পেয়েছিলাম। এটা খুব সুন্দর স্মৃতি হয়ে মনের মধ্যে থেকে যাবে। তার কয়েক দিন পরেই বোনের বিয়ে হয়ে যায়।
প্রেম জায়গা দেখে তো হয় না। তবে কলকাতার মেয়েরা খুব সুন্দর। বড় বড় চোখ, মিষ্টি মিষ্টি ঠোঁট। যখন শাড়ি পরে তখন আরও ভাল লাগে। হ্যাঁ, কলকাতা শহরটার সঙ্গে আমার প্রেম করার স্মৃতি আছে। ‘আছে’ বলেই এ বিষয়ে আমি কিন্তু ফুল স্টপ দিলাম।