সপ্তাহান্তে দলবেঁধে দলছুট হতে কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসার কথা ভাবলেই মাথায় আসে গ্রামবাংলা। সেখানকার কিছু ঐতিহ্যমণ্ডিত রাজবাড়ি বা জমিদারবাড়ির কথাও মনে আসে। পুরনো বনেদি পরিবার বা রাজবংশের আজকের প্রজন্মরা ইদানীং এগিয়ে আসছেন তাঁদের পারিবারিক ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে। এমনই দুই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য বর্ধমানের আমাদপুর জমিদারবাড়ি এবং পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ি। কলকাতার কাছাকাছি এই দুই ‘হোম স্টে’ এক-দু’দিনের জন্য ঘুরে আসার জন্য আদর্শ।
ইতিহাস যাপনে রাত কাটানো যায় কলকাতার কাছের এই দুই রাজবাড়িতে
পুরনো বনেদি পরিবারের প্রজন্মরা ইদানীং এগিয়ে আসছেন তাঁদের পারিবারিক ঐতিহ্যকে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে।
ফাইল ছবি
আমাদপুর জমিদারবাড়ি
বর্ধমানের মেমারি শহরের অনতিদূরে আমাদপুর গ্রামে রয়েছে চৌধুরীদের ‘জমিদারবাড়ি’। এই চৌধুরীরা আদতে সেনশর্মা। চৌধুরী উপাধিপ্রাপ্ত। এঁদের আদিপুরুষ শ্রীবৎস সেনশর্মার নাতি ছিলেন রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি। এর পর সম্ভবত ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি মুঘল সম্রাট শাহজাহানের ফরমানে এই পরিবার বর্ধমানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জমিদারি পায়। পরে চৌধুরী উপাধি নিয়ে এই পরিবারের রমরমা শুরু। পরবর্তী সময়ে জমিদারি ‘প্রথা’ অবলুপ্ত হওয়ার পর বর্তমান উত্তরসূরি শিলাদিত্য চৌধুরী বাড়ির একটা অংশ সংস্কার করে তা খুলে দিয়েছেন পর্যটকদের জন্য।
৩৮৬ বছরের পুরনো বাড়িটির ঘর, মেহগনি কাঠের আসবাব, ঝাড়বাতি, বৈঠকখানায় ফেলে-আসা দিনের সাদা-কালো ছবি— সব মিলিয়ে অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করে পর্যটকদের মনে। এটি এখন ‘হেরিটেজ হোম স্টে’। সেখানে এক-দু’রাত কাটিয়ে আসাই যায় অনায়াসে। সবুজ বন, দিঘি, পাখপাখালির এক মনোরম পরিবেশে। পারিবারিক দেবী আনন্দ মায়ের মন্দির দর্শনীয়। পাশাপাশি এই গ্রামে টেরাকোটার কাজ সমৃদ্ধ মন্দিরও অতুলনীয়। চৌধুরী বাড়িতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে চারটে ঘর। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল।
মহিষাদল রাজবাড়ি
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট মহিষাদল রাজবাড়ি। হাওড়া থেকে মহিষাদল বা সতীশ সামন্ত হল্ট স্টেশন। এ দুয়ের যে কোনও একটাতে নেমে পৌঁছনো যায় মহিষাদল রাজবাড়ি। স্টেশনে নেমে টোটোয় করে মহিষাদল পৌঁছে ১০ টাকার টিকিট কেটে ঢুকে পড়ুন রাজবাড়ির চৌহদ্দিতে। গর্গ বংশের এই রাজবাড়ির অনেক পুরনো ইতিহাস। শোনা যায় তাম্রলিপ্ত রাজ পরিবারের একটি শাখা এখানে রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে। প্রথমে বীরনারায়ণ রায়চৌধুরী। তাঁর বংশধর কল্যাণ রায়চৌধুরী খাজনা মেটাতে না পারায় সম্রাট আকবর তাঁর জমিদারি কেড়ে নেন। পরবর্তীকালে এই জমিদারি হস্তান্তর করা হয় জনার্দন উপাধ্যায় নামে প্রতিপত্তিশালী এক ব্যবসায়ীর কাছে। পরে তিনি রাজা উপাধি পান।
১৮৪০-এ আনন্দলাল উপাধ্যায় অপুত্রক মারা গেলে তাঁরই মেয়ের বংশের উত্তরাধিকারী গুরুপ্রসাদ গর্গ এই জমিদারি তথা রাজবাড়ি পান। মহিষাদল রাজবাড়ির দু’টি ভাগ। মূল প্রাসাদ ফুলবাগ প্যালেস। এটি একটি বিশ্রামাগার ছিল। কালের চক্রে এটি ভগ্নপ্রায় হয়ে যায়। এর পর সেটি সংস্কার করে এবং ফুলবাগ প্যালেসের পাঁচটি কক্ষকে মিউজিয়ামের রূপ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকখানা, শিকারকক্ষ, অস্ত্রাগার সবই খুলে দেওয়া হয় জনসাধারণের জন্য ২০১৮ সালে। পুরনো রঙ্গিবাসান প্যালেস ছিল আবাসস্থল। এখানেই রয়েছে রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির। মিউজিয়ামটি খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। সম্প্রতি এই রাজবাড়ির দু’টি ঘর র্নিধারিত হয়েছে অতিথিশালা হিসাবে। তবে এ জন্য আগে থেকে বুকিং করে যেতে হবে।