সপ্তাহান্তে ক্লান্তি কাটাতে আপনি ঘুরে আসতে পারনে বিড়লা মন্দিরে। এই মন্দির চত্বরের বাইরের অংশটি বেলেপাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, আর ভিতরের অংশটি সাদা মার্বেল দিয়ে অলংকৃত করা। স্থপতি নমি বসুর কারুকাজ করা এই মন্দির তৈরির অনুপ্রেরণা ভুবনেশ্বরের বিখ্যাত লিঙ্গরাজ মন্দির এবং লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির থেকে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। গর্ভগৃহে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি ছাড়াও শিব ও দেবী দুর্গার মূর্তিও স্থাপন করা আছে। এর দেওয়ালে রাজস্থানী শৈলীর নকশার সঙ্গে পাথরে খোদাই করা শ্লোক এবং গীতার দৃশ্যের চিত্রিত উপস্থাপনা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বিখ্যাত বিড়লা পরিবারের তৈরি এই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হয় ১৯৯৬ সালে। তখন থেকেই এই মন্দিরটি কলকাতার মানুষের অন্যতম প্রিয় এক গন্তব্য। এই মন্দির এতটাই বড়ো যে ঘুরে দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে সময় কেটে যাবে আপনি বুঝতেও পারবেন না।
সেন্ট জনস চার্চ
সেন্ট জনস চার্চ সেই সময়ে নির্মিত হয়েছিল, যখন আমাদের শহরটি ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল। ১৮৪৭ সালে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালকে অ্যাংলিকান ক্যাথিড্রালে পরিণত করা পর্যন্ত এই গির্জাটি অ্যাংলিকান ক্যাথিড্রাল হিসাবে কার্যভার নির্বাহ করে এসেছে। আপনি যদি স্থাপত্য বিষয়ে উৎসাহী হন, তবে সেন্ট জনস চার্চকে নিওক্লাসিক্যাল স্থাপত্যের অংশ বলে চিনে নিতে পারবেন। ছুটির দিনে কলকাতা শহরের এই গির্জার চত্বরের সমাধিগুলির মধ্যে নানা উল্লেখযোগ্য মানুষের স্মৃতির সন্ধান পেতে পারেন। মৃত্যুর পর ভারতের গভর্নর-জেনারেল এবং ভাইসরয় চার্লস ক্যানিংয়ের স্ত্রী লেডি ক্যানিংয়ের সমাধিস্থল হিসাবেও এই প্রাঙ্গণটি বেছে নেওয়া হয়েছিল।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
ভারতে ব্রিটিশ রাজের আর একটি ধ্বংসাবশেষ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সপ্তাহান্তে একটি গোটা দিন এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখতে দেখতেই কেটে যাবে আপনার। এই সাদা মার্বেলের দুর্গটি মহারানি ভিক্টোরিয়ার স্মরণে তৈরি করা হয়েছিল ভারতে তাঁর ২৫ বছরের শাসন উদযাপনের জন্য। এটি লন্ডনের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রায় প্রতিরূপ। এই স্মৃতিসৌধটি রক্ষণাবেক্ষণ করা বাগান দ্বারা বেষ্টিত, যা ৬৪ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এবং এতে অসংখ্য মূর্তি ও ভাস্কর্য রয়েছে। একটি ষোল ফুট লম্বা ব্রোঞ্জের মূর্তি, স্মৃতিসৌধের শীর্ষে বল বিয়ারিংয়ের উপর লাগানো, এখানে গেলে সারাদিন ঘুরে দেখে সন্ধ্যায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড অনুষ্ঠান না দেখে ফেরা একেবারেই উচিত হবে না।
স্নো পার্ক
যদিও বসন্তকালের এই সবে শুরু, তবু এখনই কলকাতা শহরে দিনের বেলায় বেশ গরম লাগছে। এই সময়ে বরফে ঘেরা পাহাড়ে না যেতে পারলেও আপনি সপ্তাহান্তে ঘুরে আসতে পারেন স্নো পার্কে। গোটা পার্কই স্নো ফ্লেক্স বা বরফের কণা দিয়ে আবৃত এবং এখানে আপনি স্নো ম্যান বানানোর আনন্দে মেতে উঠতে পারেন অন্য সকলের সঙ্গে। কলকাতার নিউ টাউনে অ্যাক্সিস মলের মধ্যে অবস্থিত এই পার্কে ছয় থেকে ছাপ্পান্ন সমস্ত বয়সের মানুষই রীতিমতো আনন্দ পাবেন এই সময়ে। সকলের জন্য উপযুক্ত বিভিন্ন ধরনের রাইডও রয়েছে এখানে। বসন্তের কলকাতায় সপ্তাহের শেষ ছুটির দিনটা বরফের মধ্যে আনন্দে কাটবে আপনার।
মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম
মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম এখন এই শহরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠেছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে একটি উদ্যোগে নিউ টাউনে একটি আর্থিক কেন্দ্র খুলেছে সম্প্রতি। এর পঞ্চম এবং ষষ্ঠ তলায় মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম অবস্থিত। এটি নিউ টাউনের ইকো পার্কের প্রধান গেটের ঠিক বিপরীতেই অবস্থিত। এটি কলকাতা শহরের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে সাম্প্রতিকতম সংযোজন। ছুটির দিন এটি ঘুরে দেখতে হাতে অনেকটা সময় আপনাকে নিয়ে আসতেই হবে। বহু নামী ব্যক্তিত্বের মোমের মূর্তি এখানে আপনি দেখতে পাবেন। এটি দেখতে গিয়ে অনেক মানুষ লন্ডনের মাদাম ত্যুসোর মিউজিয়ামের উল্লেখও করে থাকেন। এটি তত বড় না হলেও এই মিউজিয়ামে আপনি সপ্তাহান্তের ছুটির একটি দিন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে আসতে পারবেন।