স্থাপত্য নিয়ে কলকাতার মানুষজন গর্ব করতেই পারেন। কারণ গত ৩০০ বছর ধরে এমনকি এখনও পর্যন্তও বিভিন্ন স্থপতির হাতে একের পর এক ব্যতিক্রমী পরিকল্পনায় এই শহরের বুকে তৈরি হয়েছে নানা পৃথিবীখ্যাত স্থাপত্যকীর্তি। অনেক মানুষ সারা পৃথিবী ঘুরে ভিন্ন ভিন্ন শহরের স্থাপত্য নিয়ে চর্চা, আলোচনা এবং আজীবন গবেষণাও করে থাকেন। এর মধ্যে কলকাতার নাম উঠে আসবেই। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতা শহরকে আগাগোড়া জানতে চাইলে প্রথমেই এই শহরের স্থাপত্যের দিকে আপনার নজর পড়তে বাধ্য। আর এই শহরে নানা নকশা, ভিন্ন ভিন্ন মালমশলা দিয়ে, একাধিক অভিনব পরিকল্পনায় তৈরি হয়েছে নানা সৌধ। তা বহন করে নিয়ে চলেছে আমাদের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ইতিহাসকেও।
Architectural Wonders of Kolkata: বাইরে যেতে হবে না, স্থাপত্যকীর্তিতে মুগ্ধ করে দিতে পারে শহর কলকাতার ঐতিহ্যই
কলকাতা শহরকে আগাগোড়া জানতে চাইলে প্রথমেই এর স্থাপত্যের দিকে আপনার নজর পড়তে বাধ্য। একাধিক অভিনব পরিকল্পনায় এই শহরে তৈরি হয়েছে নানা সৌধ।
কলকাতা শহরকে আগাগোড়া জানতে চাইলে এই শহরের স্থাপত্যের দিকে নজর পড়তে বাধ্য
ঐতিহাসিক গুরুত্ব ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
লর্ড কার্জনের রানি ভিক্টোরিয়াকে সম্মান জানানোর জন্য একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করার ইচ্ছার ফলাফলই হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ১০০ বছর আগে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি এই স্মৃতিসৌধটি ৬৪ একর বাগান দ্বারা বেষ্টিত এবং একটি বিশেষ সমৃদ্ধ প্রদর্শনশালা নিয়ে গঠিত। এই স্মৃতিসৌধের কেন্দ্রীয় গম্বুজের উপরে বিজয়ের দেবদূতের চিত্র দেখতে পারেন। এখানে ২৫টি গ্যালারি রয়েছে যা ভাস্কর্য, অস্ত্র, পুরাকীর্তি, বই, বিরল চিত্রকলা ইত্যাদি সহ বিভিন্ন সংগ্রহ প্রদর্শন করে। স্থাপত্যের বৈভবের সাথে ঐতিহাসিক গুরুত্ব ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।
এই ক্যাথেড্রালটি উত্তর ভারতের সবচেয়ে বড় গির্জা
সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল
সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল কলকাতার অন্যতম পুরনো এবং ঐতিহ্যসম্পন্ন গির্জাগুলির মধ্যে একটি। ১৮৪৭ সালে তৎকালীন কলকাতা শহরে বসবাসকারী ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের জন্য নির্মিত হয়েছিল। এখন এই ক্যাথেড্রালটি উত্তর ভারতের সবচেয়ে বড় গির্জা। যা এটিকে কলকাতার শীর্ষ ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে একটি করে তোলে তা হল এর অনবদ্য স্থাপত্য যা ইন্দো-গথিক শৈলীকে চিত্রিত করে। এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিদেশী অঞ্চলে নির্মিত প্রথম ক্যাথেড্রালও বটে। সারা বিশ্বের মানুষ প্রতি বছর বিভিন্ন সময় জড়ো হন এই গির্জার অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী দেখার জন্যেও।
গ্রীক মন্দিরগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য বহন করে কলকাতার মেটকাফে হল
মেটকাফে হল
অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য সহ একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান এথেন্সের সাধারণ গ্রীক মন্দিরগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য বহন করে কলকাতার মেটকাফে হল। শহরের ব্যবসায়িক এলাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, উনিশ শতকের প্রথম দিকের এই বিল্ডিংটি প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির সংগ্রহস্থল ছিল। এখন এর দোতলাটি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের অধীনে রয়েছে এবং একতলায় আছে এশিয়াটিক সোসাইটির বিরল পাণ্ডুলিপি এবং বিদেশী জার্নাল। স্থাপত্যের দিক দিয়ে এই বাড়িটি কলকাতার ইতিহাসকে বিশেষ ভাবে স্মরণ করায়।
রাজেন্দ্র মল্লিক দ্বারা এটি নির্মিত হয়েছিল
মার্বেল প্যালেস
মার্বেল প্যালেস উত্তর কলকাতার একটি সুন্দর এবং মার্জিত ভবন। দেওয়াল এবং মেঝে সবই মার্বেলের তৈরি। একজন খ্যাতনামা বাঙালি বণিক রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক দ্বারা এটি নির্মিত হয়েছিল। নিওক্লাসিক্যাল শৈলীতে নির্মিত এই ভবনটিতে খোলা প্রাঙ্গণ রয়েছে যা ঐতিহ্যগত ভাবে বাঙালি স্থাপত্যেও দেখতে পাওয়া যায়। এই সৌধে এখন অসংখ্য ভিক্টোরিয়ান পেইন্টিং এবং আরও অনেক মূল্যবান মূর্তি রয়েছে। এখানে প্রবেশ করার আগে আপনার পূর্বানুমতি প্রয়োজন কারণ এটি একটি ব্যক্তিগত আবাসস্থল।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সচিবালয় হিসেবে অনেক দিন ব্যবহৃত হয়েছে রাইটার্স বিল্ডিং
রাইটার্স বিল্ডিং
রাইটার্স বিল্ডিংটি মূলত একটি অফিস বিল্ডিং হিসাবে নির্মিত হয়েছিল যেখানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির করণিকরা কাজ করতেন। এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সচিবালয় হিসেবেও অনেক দিন ব্যবহৃত হয়েছে। ভবনটি এখন সংস্কারের জন্য সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে। এই লাল ইটের বাড়িটি ১৭৭৬ সালের, যদিও কাঠামোতে পরবর্তী সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি ব্লকে রাইটার্স বিল্ডিংকে প্রসারিত করা হয়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় একটি দীর্ঘ বারান্দা যুক্ত করা, বিল্ডিংয়ে একটি লোহার সিঁড়ি তৈরি এবং গ্রীক দেবীর মূর্তিগুলি এই সৌধে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।