কলকাতা আনন্দের শহর। এই মহানগরীর আনাচেকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে মনে রাখার মতো এমন অনেক কিছুই যা সাধারণের মধ্যে হয়তো প্রবল খ্যাতি পায়নি। অথচ এ সব জায়গার ঐতিহাসিক গুরুত্বও কিছু কম নয়। তাই শহর কলকাতার শিকড় চিনতে হলে হাতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে এ ধরনের ব্যতিক্রমী স্থান ঘুরে দেখা উচিত যা সারা জীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে।
Offbeat places: বহু বছর এ শহরে বাস? দেখুন তো এই জায়গাগুলি কখনও দেখেছেন কি না
শহর কলকাতার শিকড় চিনতে হলে হাতে কিছুটা সময় নিয়ে কয়েকটি ব্যতিক্রমী স্থান ঘুরে দেখা উচিত যা সারা জীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে।
কলকাতা শহরের ব্যতিক্রমী স্থান ঘুরে দেখুন হাতে সময় নিয়ে
লোটাস সূত্র ভারতে প্রচার করার স্বপ্ন থেকেই কিন্তু নিপ্পনজান মায়োহোজি বৌদ্ধ মন্দির প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবা হয়।
নিপ্পনজান মায়োহোজি বৌদ্ধ মন্দির
এটি কলকাতায় জাপানি বৌদ্ধ মন্দির নামে পরিচিত। নিপ্পনজান মায়োহোজি বৌদ্ধ মন্দির কলকাতার সবচেয়ে সুন্দর এবং ভাল ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা বৌদ্ধ মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। এই মন্দিরটি দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ার লেক রোডে অবস্থিত, যা এখন কবি ভারতী সরণি নামে পরিচিত। এর উপস্থিতি কিন্তু বেশির ভাগ কলকাতাবাসীর কাছেও অজানা। মন্দিরটি নিচিদাতসু ফুজি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নিচিদাতসু ফুজি ছিলেন জাপানি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নিচিরেনের এক শিষ্য, যিনি ছিলেন লোটাস সূত্রের মতাবলম্বী। লোটাস সূত্র বুদ্ধের জীবনের শেষের দিকের শিক্ষার একটি সংকলন, যা জ্ঞান অর্জনের একমাত্র উপায় বলে পরিচিত ছিল। লোটাস সূত্র ভারতে প্রচার করার স্বপ্ন থেকেই কিন্তু নিপ্পনজান মায়োহোজি বৌদ্ধ মন্দির প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবা হয়। এই মন্দিরে বৌদ্ধ ঐতিহ্যের স্পর্শ পেতে পারেন আপনিও। প্রার্থনা নিয়মিত ভাবে সকাল ৬টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় হয়। যাঁরা উপস্থিত থাকতে চান, তাঁদের সকলের জন্যই মন্দির উন্মুক্ত।
১৮২৪ সালে নির্মিত এই মসজিদটি প্রায় দুই শতাব্দী ধরে কলকাতার বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী।
লেক মসজিদ
রবীন্দ্র সরোবর হ্রদের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত মসজিদটির কথা অনেকেই জানেন না। পৌঁছনোর জন্য একটি সুপ্রশস্ত পথ থাকা সত্ত্বেও তাই এই মসজিদটি কলকাতার সেরা রহস্যগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করেন মানুষজন। ১৮২৪ সালে নির্মিত এই মসজিদটি প্রায় দুই শতাব্দী ধরে কলকাতার বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। বিশদ বিবরণ কিছুটা অস্পষ্ট। তবে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে মসজিদটি ধরে রাখার জন্য হ্রদটি পরে খনন করা হয়েছিল। এমনকি এর মালিকও দাবি করেছেন, যে এক সময়ে এখানে একটি পুকুর ছিল। মসজিদটি সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে কিন্তু এর চারপাশের গাছগুলি এত বড় হয়ে যায় যে মসজিদটি চোখের আড়ালে চলে যায়। রবীন্দ্র সরোবর হ্রদের মধ্যে দিয়ে একটি সেতু এই দ্বীপে এই ক্ষুদ্র মসজিদের সঙ্গে সংযোগ করেছে। লেক মসজিদে যাওয়ার জন্য আপনাকে লেক ক্লাবের প্রধান ফটকের বাঁ দিকে সরু পথটি খুঁজে বার করতে হবে।
ভারত নয়, এশিয়ার বৃহত্তম ফুলের বাজারগুলির মধ্যে একটি হল এটি
মল্লিক বাজার
কলকাতার অনন্য কিছু অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি, সকালবেলা কলকাতার মল্লিকবাজার ঘাটে গিয়ে ফুলের বাজার চাক্ষুষ করা। ভারত নয়, এশিয়ার বৃহত্তম ফুলের বাজারগুলির মধ্যে একটি হল এটি। ১৮৫৫ সালে রামমোহন মল্লিক এই ঘাটটি তৈরি করেন। বিক্রেতারা এবং ক্রেতারা ভোর ৪টে থেকেই এই ঘাটে জড়ো হন। ছবি তুলতে ভালবাসেন এমন মানুষের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। আপনি প্রায়ই বহু লোককে ঘাটে বসে মালা গাঁথতে বা ফুলের তোড়া তৈরি করতে দেখতে পাবেন। গাঁদা, গোলাপ, পদ্ম এবং আরও বিভিন্ন ফুলের আধিক্যে ভরা এই জায়গাটি এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে আপনার জন্য। দেখতে পাবেন ঘাটে অনেক লোক নিয়মিতই আসেন স্নান করতে বা পূজা-অর্চনার জন্য। এ ছাড়াও, ঘাটের কাছাকাছি আখড়ায় এক বার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। কপাল ভাল হলে কুস্তি দেখার সুযোগও হতে পারে বইকি!
এই আর্মেনিয়ান গির্জাটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থে নির্মিত হয়
আর্মেনিয়ান চার্চ
আপনি যদি ইতিহাসপ্রেমী হন কিংবা ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিকে জানার আগ্রহ থাকে তা হলে ঘুরে আসতে পারেন নাজারেথের আর্মেনিয়ান চার্চ। এই গির্জাটি অবস্থিত কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলে। কলকাতার আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের কাছে এটি তীর্থস্থানের মতো। সপ্তদশ শতকে, এই বন্দর নগরী যখন কলিকাতা নামে পরিচিত তখন আর্মেনীয়রা, প্রাথমিক ভাবে বণিক এবং ব্যবসায়ীরা, ব্রিটিশ প্রশাসক জব চার্নকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে। ১৬৮৮ সালে একটি চুক্তি সাক্ষর করার পর এই আর্মেনিয়ান গির্জাটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থে নির্মিত হয়। যদিও অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কিছু বছর পরই এই গির্জাটি ফের বানানো হয় ১৭২৪ সালে। এই সুন্দর স্থাপত্যের ডিজাইন করেন ক্যাচিক আরাকিয়েল। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন গ্যালারির দেওয়ালে ফ্রেস্কো এবং পেন্টিং দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। যিশু খ্রীষ্টের ১২ প্রেরিতদের প্রতীক হিসাবে বেদীতে একটি ক্রস, গসপেল এবং আরও ১২টি ক্রস রয়েছে।