Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

১৫ নভেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

North Kolkata: উত্তর কলকাতার অলিতেগলিতে ঘুরে দেখুন, খোঁজ পেতে পারেন অজানা খনির

এক সাহিত্যিকের মতে কলকাতার দক্ষিণে যদি থাকে জৌলুস, উত্তরে তবে আছে প্রাণ। একটি দিন উত্তর কলকাতার আনাচেকানাচে সেই প্রাণের স্পর্শ নিন আপনিও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:৩৬

রাজা নবকৃষ্ণ দেব অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ করেন এই শোভাবাজার রাজবাড়ি

কলকাতা শহরকে উত্তর এবং দক্ষিণ এই দুই অংশে আলাদা ভাবে চেনে বাঙালি। এই শহরের বাসিন্দারা এই দুই দিকে খোঁজ করেন দুই ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির। বিখ্যাত এক সাহিত্যিকের মতেও, দক্ষিণ কলকাতায় যদি থাকে জৌলুস, উত্তরে তবে আছে প্রাণ। ফলে একটি গোটা দিন উত্তর কলকাতার আনাচেকানাচে ঘুরে এই শহরের প্রাণের স্পর্শ অনুভব করে দেখা যেতেই পারে। বুঝতে পারবেন নিজের শহরকেই এখনও কতটা জেনে ফেলা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছে। অজানা এই খনির সন্ধান করতে বেরিয়ে বিশেষ বিশেষ কিছু জায়গার খোঁজ জানা থাকলে এই অভিযান ব্যর্থ হবে না আপনার।

টেরিটি বাজার
সাতসকালে বেরিয়ে পড়লে টেরিটি বাজার আপনার ক্ষুধা নিবারণের জায়গা হতেই পারে। কলকাতার পুরনো চায়না টাউন হিসেবে পরিচিত টেরিটি বাজার হল অভিবাসী চীনা সম্প্রদায়ের আবাসস্থল এবং কলকাতার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অপরিবর্তনীয় অংশ। প্রাতঃরাশের বাজার, যা সকাল ৬টায় খোলে, সেখানে আপনি পাবেন স্টিম্‌ড মোমো, চিকেন মোমো, ফিশ মোমো, পর্ক মোমো, চিকেন তাই পাও, শুমাই, সসেজ, প্রন ওয়েফার, হট স্যুপ নুডুলস, স্টিম্‌ড বাওজি বান, চিকেন রোল সসেজ, স্টাফড বান, শুয়োরের মাংসের রোল, ওয়ান্টনস ইত্যাদি বহু মুখরোচক খাবার।
বো ব্যারাক
চাদনি মেট্রো থেকে একটু দূরেই আপনি দেখতে পাবেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে আসা আমেরিকান সৈন্যদের জন্য তৈরি বো ব্যারাক। কলকাতা বিশেষজ্ঞদের মতে, বো ব্যারাক এখন কলকাতায় অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের ক্ষয়িষ্ণু সম্প্রদায়ের আবাসস্থল। এক সময় অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের একটি সমৃদ্ধ ঠিকানা এই বো ব্যারাকের লাল-ইট এবং সবুজ-জানালাওয়ালা ভবনগুলি কলকাতা শহরে তার পরিচিতি এবং আকর্ষণ এখনও ধরে রেখেছে। আপনি যদি বড়দিনের সময় এই শহরে থাকেন তবে বো ব্যারাকে এক বার পদার্পণ করতেই হবে। আলো ঝলমলে এই অঞ্চলটি স্মৃতিতে থেকে যাবে।

Advertisement
নলিন চন্দ্র দাস অ্যান্ড সন্‌স ১৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের সেরা মিষ্টির দোকানগুলির মধ্যে অগ্রগণ্য

নলিন চন্দ্র দাস অ্যান্ড সন্‌স ১৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের সেরা মিষ্টির দোকানগুলির মধ্যে অগ্রগণ্য


শোভাবাজার রাজবাড়ি
কলকাতার শহরের বিশেষ একটি রাজবাড়ি এই অভিযানে আপনি বাদ রাখতেই পারবেন না। রাজা নবকৃষ্ণ দেব অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ করেন এই শোভাবাজার রাজবাড়িটি। এটি কলকাতার অভিজাতদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত প্রাচীনতম রাজবাড়িগুলির মধ্যে একটি। গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থান এই রাজবাড়ি কলকাতার জমিদারি যুগের বিলাসবহুল জীবনধারার ইতিহাস প্রদর্শন করে। শোভাবাজার রাজবাড়ির সদস্যরা প্রতি বছরই দুর্গাপুজো আড়ম্বর ও জাঁকজমক করে উদ্‌যাপন করেন, হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় হয় প্রতি দিনই।

নলিন চন্দ্র দাস অ্যান্ড সন্‌স
ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লে কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টি চেখে দেখতে মন আনচান করতেই পারে। তার জন্য উত্তর কলকাতার প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান নলিন চন্দ্র অ্যান্ড সন্‌স রয়েছে হাতের কাছেই। ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত, নলিন চন্দ্র দাস অ্যান্ড সন্‌স ১৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের সেরা মিষ্টির দোকানগুলির মধ্যে অগ্রগণ্য। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি এখানে পাওয়া যায়। কিন্তু তার মধ্যে এখানকার সুস্বাদু কড়াপাক এবং চকোলেট সন্দেশ মিস করবেন না কোনও মতেই।

কুমোরটুলিতে কারিগরদের ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো বসতি রয়েছে

কুমোরটুলিতে কারিগরদের ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো বসতি রয়েছে


কুমোরটুলি
উত্তর কলকাতা পর্যটন করতে বার হয়ে কুমোরটুলিকে কোনও মতেই বাদ দেওয়া চলবে না। কুমোরদের এলাকা অর্থাৎ এই কুমোরটুলিতে কারিগরদের ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো বসতি রয়েছে। প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি গলিতেই চোখে পড়বে ভাস্কর, কুমোর, ফ্রেম ডেকোরেটর এবং শিল্পীরা কাঠ, বাঁশ, খড় এবং কাদামাটি থেকে মূর্তি তৈরি করতে দিনরাত কেমন পরিশ্রম করে চলেছেন। ৫০০টিরও বেশি কর্মশালায় এবং হাজার হাজার কারিগরের তৈরি প্রতিমাগুলি বিভিন্ন উত্সবের সময় শহর জুড়ে প্যান্ডেলগুলিতে শোভা পায়৷ এখানকার প্রতিমা সারা বছরই পৌঁছে যায় বিদেশেও।

কলেজ স্ট্রিট অঞ্চল সারা বিশ্বের বইপ্রেমীদের কাছে পরিচিত একটি নাম।

কলেজ স্ট্রিট অঞ্চল সারা বিশ্বের বইপ্রেমীদের কাছে পরিচিত একটি নাম।


কলেজ স্ট্রিট
এর পর চলে আসুন এশিয়ার বৃহত্তম সেকেন্ড-হ্যান্ড বইয়ের বাজারে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিট অঞ্চল সারা বিশ্বের বইপ্রেমীদের কাছে পরিচিত একটি নাম। দেড় কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই বই-পাড়ায় রয়েছে বিখ্যাত কলকাতা এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েছে নামকরা একাধিক কলেজও। বইয়ের অসংখ্য দোকান ঘুরে দেখতে দেখতে এই অভিযানের সিংহভাগ সময়ই আপনার ব্যয় হয়ে যাওয়ার কথা। কলেজ স্ট্রিটে পুরনো বইয়ের দোকানে আপনি পেয়ে যেতে পারেন দুষ্প্রাপ্য কোনও খনির সন্ধান।

দ্য ইন্ডিয়ান কফি হাউসকে এখনও শহরের বুদ্ধিজীবীদের আড্ডার কেন্দ্রস্থল হিসেবে ধরা হয়।

দ্য ইন্ডিয়ান কফি হাউসকে এখনও শহরের বুদ্ধিজীবীদের আড্ডার কেন্দ্রস্থল হিসেবে ধরা হয়।


কফি হাউস
কলেজ স্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক উল্টো দিকের গলিতে অবস্থিত দ্য ইন্ডিয়ান কফি হাউসকে এখনও শহরের বুদ্ধিজীবীদের আড্ডার কেন্দ্রস্থল হিসেবে ধরা হয়। কফি হাউসকে মান্না দে-র বিখ্যাত গান তো আমরা সকলেই শুনেছি। এ ছাড়াও হাংরি আন্দোলনের কবি-সাহিত্যিকদের আলোচনা তথা অসংখ্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিতর্ক এখানে চলে আসছে বিগত কয়েক দশক ধরে। ইনফিউশন নামক কড়া কালো কফিতে চুমুক দিতে দিতে আপনিও এই কফি হাউসে কাটিয়ে আসুন কিছু ক্ষণ। পুরনো ঐতিহ্যের স্পর্শ পাবেন নিশ্চিত।


জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি এখন ঠাকুর পরিবারের তথ্য এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সংগ্রহশালা

জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি এখন ঠাকুর পরিবারের তথ্য এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সংগ্রহশালা


জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়ি জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি এখন ঠাকুর পরিবারের তথ্য এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সংগ্রহশালা হিসেবে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। ১৭৮৫ সালে নির্মিত বিশাল ৩৫০০০ বর্গ মিটার জুড়ে বিস্তৃত জোড়াসাঁকোর এই ঠাকুর বাড়িটিতে বর্তমানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনও চলে। দ্বারকানাথ ঠাকুর, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ বহু প্রতিভাবান বাঙালির আবাসস্থল ছিল এই বাড়িটি। জীবনের অনেকটা সময় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই বাড়িতেই অতিবাহিত করেছেন। উত্তর কলকাতার একটি বিশেষ দর্শনীয় স্থান এই বাড়ি।

মিত্র ক্যাফে
উত্তর কলকাতার অলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে একেবারে ক্লান্ত শরীরে এই অভিযান আপনি শেষ করতে পারেন মিত্র ক্যাফের খাবার খেয়ে। ১৯২০ সালে শ্রী সুশীল রায় প্রতিষ্ঠা করেন এই রেস্তরাঁটি। শ্যামবাজারের প্রথম কেন্দ্রটি এখন কলকাতা এবং মফস্বলের বিভিন্ন প্রান্তে শাখা মেলেছে। বছরের পর বছর ধরে মিত্র ক্যাফের ফিশ কবিরাজি, ব্রেন চপ, চিকেন কাটলেট এই শহরের ভোজনবিলাসীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এ ছাড়াও এখানে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার আপনি পেয়ে যাবেন অল্প ব্যয়েই।

Advertisement