সখীর আখড়া— দীক্ষা নেওয়ার আগে চৈতন্যের ক্ষৌরকর্ম করেছিলেন মধু নাপিত। মধু নাপিতের যে বাড়িটি কাটোয়া শহরের মধ্যেই। সেই বাড়িটি এখন সখীর আখড়া নামে পরিচিত। এখানেও সন্ধ্যা-সকাল ভক্তরা ভিড় জমান।
মাধাইতলা মন্দির— মহাপ্রভুর ভক্ত জগাই-মাধাইয়ের কথা আমরা হয়তো শুনেছি। মহাপ্রভু যখন কাটোয়ায় তখন তাঁর বিরহে কাতর হয়ে কাটোয়া এসেছিলেন জগাই-মাধাই। কিন্তু মহাপ্রভু তখন কাটোয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু মাধাই কাটোয়াতেই আশ্রম গড়ে চৈতন্য ভজনা শুরু করেন। জীবনের একটা বড় সময় এখানে কাটিয়েছিলেন তিনি। এখনও এই মাধাইতলা মন্দিরে সারাদিন ধরে চলে নাম সংকীর্তন।
এ ছাড়াও কাটোয়া শহরে দেখা মিলবে জুনিয়র কেডি-র সমাধিস্থল এবং শাহ আলমের মসজিদ। এই স্থানগুলি সব কাটোয়া শহরের মধ্যেই ছড়িয়ে রয়েছে।
কাটোয়া শহর ছেড়ে একটু বেরলে দেখা মিলবে ইতিহাসের পদচিহ্ন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সতীপীঠ। কাটোয়া শহর থেকে বাসের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় সেই জায়গাগুলিতে। সেই সতীপীঠগুলিও পর্যটনদের আকর্ষণের অন্যতম জায়গা।
যোগাধ্যা মন্দির— কাটোয়ার কাছে ক্ষীরগ্রামে অবস্থিত এই মন্দির। বিশ্বাস, সতীর ডান পায়ের আঙুল পড়েছিল এখানে। বর্ধমানের রাজা কীর্তি চন্দ্র এখানে মন্দির নির্মাণ করেন। দাঁইহাটের প্রস্তরশিল্পী নবীনচন্দ্র ভাস্কর দশভুজা মহিষমর্দিনী মূর্তিটি তৈরি করেন। সারা বছর এই মূর্তিটি থাকে মন্দির সংলগ্ন ক্ষীরদিঘির জলে। ৩১ বৈশাখ তা তুলে এনে পুজো করা হয়। সে সময় বিশাল মেলা বসে ক্ষীরগ্রামে। প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়। আগে এখানে মোষ বলি হলেও এখন আর তা হয় না। তবে ৩১ বৈশাখ ক্ষীরের মোষ বানিয়ে এখনও বলি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে এখানে। কাটোয়া থেকে বর্ধমান যাওয়ার পথে পড়ে কৈচর। সেই কৈচরের পাশেই ক্ষীরগ্রামে যোগাধ্যা মন্দির অবস্থিত। কাটোয়া থেকে তা ২৩ কিলোমিটার মতো।
অট্টহাস মন্দির— কাটোয়া থেকে কেতুগ্রাম হয়ে ফুটিসাঁকো যাওয়ার রাস্তা ধরে গেলে পৌঁছে যাওয়া যাবে এই মন্দিরে। কাটোয়া থেকে দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার মতো। বাসে করে নিরোল গ্রামে নামলে সেখান থেকে মন্দির যাওয়ার অটো বা টোটো পাওয়া যায়। এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঈশাণী নদী। এর কাছেই রয়েছে শ্মশান। পিকনিক করতে প্রচুর মানুষ প্রতি বছর এখানে আসেন। সতীর ঠোঁটের নীচের অংশ পড়েছিল এখানে। এই এলাকাটি আগে এত বেশি জঙ্গলে ভরা ছিল যে, দিনের বেলাতেও যেতে সাহস পেতেন না অনেকে। তবে এখন খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে এই মন্দির। দেবী এখানে অধরেশ্বরী নামে পূজিতা হন। অট্টহাসে দেবীর মূল মূর্তিটি দেবীর অষ্টচামুণ্ডা রূপের অন্যতম দন্তুরা চামুণ্ডা। এই মূর্তি ভারতবর্ষে সচরাচর দেখা যায় না।
এগুলি ছাড়াও কাটোয়ার আশপাশে ছড়িয়ে রযেছে এ বাংলার বেশ কিছু ব্যক্তির জন্মস্থান। যেমন, চৈতন্য চরিতামৃতের লেখক কৃষ্ণদাস কবিরাজের বাড়ি ঝামতপুর নামের এক গ্রামে। বাংলায় মহাভারতের রচয়িতা কাশীরাম দাসের বাড়ি কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত সিঙ্গি গ্রামে। কুমুদরঞ্জন মল্লিকের বাড়িও কাটোয়ার কাছে। এই সব জায়গা ঘুরতে যেতে গেলে কাটোয়া হয়েই যাওয়া সবথেকে সুবিধাজনক। পাশাপাশি কাটোয়া থেকে কিলোমিটার ১০ দূরে জগদানন্দপুর গ্রামে রয়েছে রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির। পুরাতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহ থাকলে এই মন্দিরের গঠনশৈলি আপনাকে অবাক করবে।
জাঁকজমক পূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রের বাইরে ইতিহাস, চৈতন্য সমসাময়িক সময়কালকে জানতে গেলেও যেতেই হবে কাটোয়া।