নতুন বছরের একরাশ শুভেচ্ছাবার্তার মধ্যেদ একটা মেসেজে হাসি চাপা যায়নি। ড্রিংক অফ ২০২০ কী? উত্তর— ‘কাড়হা’।
এই করোনাকালে কাড়হা, ক্বাথের মতো দেশীয় ঘরোয়া পানীয়র চাহিদাই সব থেকে বেশি। প্রথম যখন লকডাউন শুরু হয়, করোনার প্রকোপ ক্রমে টের পেতে শুরু করে দেশ তথা রাজ্য , তখন শোনা গেল গরম জল অথবা লিকার চা খাওয়া ভাল। ব্য স, যার বাড়িতে যত ফ্লাস্ক সব বেরিয়ে পড়ল। জল খেলেই গরম, চা খেলেই লিকার–– এমনই অবস্থা হল। ওদিকে বাঙালির পেটে কোষ্ঠকাঠিন্যে র দামামা বাজতে শুরু করল।
ক্রমে যত সময় গড়াতে থাকল গরম জলের মধ্যেম পড়তে শুরু করল আদা, গোলমরিচ, তুলসীপাতা ইত্যাদি ইত্যাদি। ইমিউনিটি বুস্টার বলে কথা! রমরমিয়ে এই তরল একেবারে সবার ঘরে ঘরে হাজির। মা-ঠাকুমার চিরকালীন ক্বাথ হয়ে উঠল সবার মাস্ট হ্যাভ। এক বার কাশলেই হল, পারলে পাশের বাড়ির কাকিমাও এক কাপ ক্বাথ বা কাড়া নিয়ে হাজির। হাঁচি, কাশির এত সম্মান এই প্রথম। কফ সিরাপ, কফ ড্রপস সব নিপাত গেল। ঘরোয়া টোটকাই রোগপ্রতিরোধের চাবিকাঠি।
লকডাউনের সেরা পানীয়, পুরনো দাওয়াই নতুন গেলাসে
এই করোনাকালে কাড়হা, ক্বাথের মতো দেশীয় ঘরোয়া পানীয়র চাহিদাই সব থেকে বেশি।
কাড়হা
আসলে এই সময়ের কোনও পানীয়ই ঠিক তৃষ্ণার শান্তি দিতে বা আমোদ প্রমোদের জন্যক নয়। এরা সবাই ‘রক্ষাকবচ’। যদিও এমন নয় যে, এগুলো পান করলেই করোনা চলে যাবে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্যা করে এই সব পানীয় আর তাই এদের এতে রমরমা। সম্ভবত সেই কারণেই সবাইকে টেক্কা দিয়ে একেবারে সেরার শিরোপা জিতে নিয়েছে কাড়হা।
ছোটবেলায় তুলসীপাতা, মধু, বা কাঁচা হলুদ গুড় দিয়ে খায়নি এমন বঙ্গসন্তান প্রায় নেই বললেই চলে। আর সর্দি-কাশি জমিয়ে বসলেই গরম গরম ক্বাথ বা কাড়হা। খেতে যথেষ্ট খারাপ, কিন্তু গুণে একমেবাদ্বিতীয়ম। তাবড় তাবড় কফ সিরাপকে হার মানায়। আর ছিল গরম দুধে হলুদ। সেও এক অভিজ্ঞতা! সেই হলুদ-দুধ কায়দার মোড়কে হয়ে গেল ‘টারমারিক লাতে’। গুচ্ছ খানেক গ্যাঁ টের কড়ি খরচা করে কায়দার প্যািকেজিং-এ মোড়া সেই আদি অকৃত্রিম হলদি দুধ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার গ্লাসে।
আসলে গ্লোবাল গ্লোবাল করতে করতে করতে লোকালকে যে প্রায় আমরা টাটা বাই বাই করে দিয়েছিলাম, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। এই অতিমারি আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়েছে। নিউ নর্মাল জীবনযাপনে যেমন অভ্যইস্ত করেছে, আবার নিজেদের শিকড়ের কাছাকাছি যাওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে।
কাড়হা এমনই নামডাক করে বসল যে, প্যা কেট করেও এখন তা বাজারেও মিলছে। অনলাইন বা স্টোরে, সব জায়গাতেই রেডিমেড কাড়হা মিক্স বেশ সহজলভ্যঅ। জলে মেশান আর খান। তা না পেলে রেসিপি জেনে নিন। ইউটিউবে এক বার সার্চ দিয়ে তো দেখুন, হুড়মুড়িয়ে রেসিপি চলে আসবে। সুতরাং তরতরিয়ে নিজেদের ইমিউনিটি বাড়িয়ে তুলুন। আরস সমস্বরে বলুন ‘চিয়ার্স টু কাড়হা’!