কলকাতার বেকারির কথা বলতে গেলে ফ্লুরিজের উল্লেখ প্রথমেই না করা ঘোরতর অন্যায়। বলা যায় এই শহরের আবেগের অনেকখানি প্রায় এক শতাব্দী ধরে ফ্লুরিজের মধ্যে আজও বর্তমান। ১৯২৭ সালে কলকাতায় এই বেকারির পথচলা শুরু হয়। সুস্বাদু পেস্ট্রি, ফ্রুট কেক, বিভিন্ন কুকিজ বা ইতালীয়, মহাদেশীয় এবং ইউরোপীয় নানা মুখরোচক স্ন্যাকস মিলবে এখানে। বড়দিনের সময়ে পার্ক স্ট্রিটে ফ্লুরিজের মূল কেন্দ্রে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান কর্মীরা। এখানকার প্লাম কেক সারা দেশে বিখ্যাত।
নাহুম অ্যান্ড সন্স
বেকারিটি ১৯০২ সালে এক জন বাগদাদি ইহুদি নাহৌম ইসরাইল মোর্দেকাই দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইসরাইল তার বেকারির ব্যবসা শুরু করেন বাড়ি বাড়ি বানানো খাবার বিক্রির মাধ্যমে এবং তার মিষ্টি খাবার সেই সময় ঔপনিবেশিক শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই ১২০ বছরের পুরানো বেকারি সম্ভবত যথাযথ ভাবে টিকে থাকা কলকাতা শহরের শেষ ইহুদি বেকারি বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিভিন্ন পাউরুটি, হার্ট কেক, ভ্যানিলা আর চকোলেট ফাজ ব্রাউনি, ক্লাসিক ফ্রুটকেক, লেবুর টার্টস বা তাজা বেকড কুকিজ এখানকার বিশেষত্ব। আজও বহু দূর থেকে কলকাতা শহরের একেবারে কেন্দ্রের এই বেকারিতে খাবারের খোঁজে আসেন বহু মানুষ।
সালদানহার ডার্ক চকোলেট ব্রাউনি, ফ্রেঞ্চ ম্যাকারন, চিজ পাফ, ওয়ালনাট কেক প্রভৃতি সারা শহরে বিখ্যাত।
হায়াত রিজেন্সির বেকারি
সুস্বাদু চকোলেট, কুকিজ এবং আরও নানা ধরনের কেক বা পেস্ট্রি হল হায়াত রিজেন্সির ‘দ্য বেকারি’র বিশেষত্ব। অনেকেই একে কলকাতার অন্যতম সেরা বেকারির মর্যাদা দিয়েছেন৷ অভিজাত হোটেল হলেও আপনি এখানে পছন্দের খাবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চেখে দেখতে পারেন। এমনকি কেক, পেস্ট্রি, কুকি এবং আরও নানা খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন উপযুক্ত মূল্যে। এখানে পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর রাখা হয় এবং বেকারির সমস্ত উপকরণ বিশেষ ভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়ে থাকে নিয়মিত।
এইটথ ডে ক্যাফে এবং বেকারি
কলকাতার পুরোনো ব্রিটিশ আমলের মতো সাজসজ্জা নিয়ে পার্ক সার্কাস এলাকার বাইলেনে ঔপনিবেশিক শৈলীর এক ভবনে এইটথ ডে ক্যাফে এবং বেকারিটি দাঁড়িয়ে আছে। এই ক্যাফে-কাম-বেকারিতে আপনি বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে আসতে পারেন। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য কলকাতার উপর এটি একটি আরামদায়ক পরিবেশ প্রদান করে। খাদ্যতালিকায় নিয়মিতই থাকে বিভিন্ন লোভনীয় অফার। কলকাতার বহু ভোজনবিলাসী এখানকার রেড ভেলভেট কাপ কেক বা পুরোনো দিনের আপেল পাই এবং মাখনের স্বাদযুক্ত স্কোনগুলির স্বাদ পেতে নিয়মিত এই ক্যাফেতে যান। এখানকার কফি এবং প্রাতরাশের প্রশংসাও শোনা যায় কলকাতার মানুষের কাছে।
সালদানহা
এই বেকারিটি ১৯৩০ সালে উবেলিনা সালদানহা এবং তার স্বামী ইগনাশিয়াস শুরু করেছিলেন। সেই সময়ে নাকি পুরো কলকাতা শহর জুড়ে উপহার পাঠানো হয়েছিল। সালদানহার প্লাম কেক আজও কলকাতার মানুষের ভীষণ প্রিয়। এ ছাড়াও এখানকার রাম বল, ডার্ক চকোলেট ব্রাউনি, ফ্রেঞ্চ ম্যাকারন, চিজ পাফ, ওয়ালনাট কেক প্রভৃতি সারা শহরে বিখ্যাত। এখানকার ফ্রুট কেকের রেসিপি নাকি স্বয়ং উবেলিনা সালদানহা নিজে আবিষ্কার করেছিলেন। উৎসব অনুষ্ঠানে এখানে এখনও বড় বড় অর্ডার আসে সারা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই। যদিও অতিমারির পরবর্তী সময় শোনা গিয়েছিল কলকাতার এই একমাত্র গোয়ান ক্যুইজিনের বেকারিটি হয়তো বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।