বাঙালি খাদ্যবিলাসী জাতি, এই সুনাম এবং দুর্নাম উভয়েই আমাদের রয়েছে। কয়েক শতাব্দীর পুরনো সাহিত্যেও বাঙালির রান্নাবান্না এবং ভোজনের প্রকৃতি নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে গিয়েছেন বহু বিদগ্ধজন। এবং কলকাতার মতো সুবিশাল মহানগরীর নানা জায়গায় বিভিন্ন নামকরা রেস্তরাঁ এখন আমাদের এই বিশেষ ঐতিহ্যের স্বপক্ষে জলজ্যান্ত প্রমাণ। তবে শুধু তা-ই নয়, অনেক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এমন অনেক রেস্তরাঁ এখনও কলকাতা শহরে রমরম করে চলছে, যা বর্তমান প্রজন্মের রসনাকেও তৃপ্তি দিতে পারে। বিশ শতকের শেষের কয়েক দশকে কলকাতায় কেবিন রেস্তরাঁ বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এখানে শুধু নিকটজনের সঙ্গে নিভৃতে দু’দণ্ড কাটানো যেত তা-ই নয়, এই সব রেস্তরাঁর খাবার কলকাতা সহ পৃথিবীর আনাচেকানাচে সব বাঙালিদের কাছে হয়ে উঠেছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সব জায়গার খোলনলচে কিছু কিছু বদলে গেলেও এর ঐতিহ্য এবং খাবারের স্বাদ এখনও অনেকটাই অমলিন রয়ে গিয়েছে।
Cabin restaurants: পুরনো কলকাতার খাঁটি স্বাদ পেতে পৌঁছে যান শহরের সেরা কেবিনগুলিতে
অনেক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এমন অনেক রেস্তরাঁ এখনও কলকাতা শহরে রমরম করে চলছে, যা বর্তমান প্রজন্মের রসনাকেও তৃপ্তি দিতে পারে।
প্রতীকী ছবি
অ্যালেন কিচেন
ক্যাফে
শহরের ব্যস্ততম এবং কোলাহলপূর্ণ মোড়ে অবস্থিত, ক্যাফে নামের পুরনো এই কেবিন রেস্তরাঁটি অতীতের কলকাতার কথা মনে পড়িয়ে দেয় আমাদের। ভবানীপুরে আশুতোষ কলেজের বিপরীতেই লম্বা লোহার গ্রিলের জানলা এবং কাঠের চেয়ার দিয়ে সাদামাঠা ভাবে সাজানো এই জায়গায় সুস্বাদু মাছ বা চিকেন কবিরাজি থেকে শুরু করে মাটন চপ পর্যন্ত সবই মিলবে। গত ৮০ বছর ধরে এটি চলছে। যদিও বর্তমান মালিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। কিন্তু বিশ্বস্ত কর্মী এবং গ্রাহকদের যত্নের জন্য ক্যাফে আজও সফল। এখানে কবি দীনেশ দাস, ফুটবলার চুনি গোস্বামী, লেখক মহাশ্বেতা দেবী প্রমুখেরা সময় কাটিয়ে গিয়েছেন।
অ্যালেন কিচেন
অ্যালেন কিচেনকে অবশ্যই তার আশ্চর্যজনক পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রশংসা করতে হবে। জায়গাটির বয়স দীর্ঘ ১২৫ বছর। বলা হয় ভিনদেশি অ্যালেন সাহেব দেশ ছাড়ার আগে তাঁর বাঙালি বন্ধুকে এটি উপহার দিয়েছেন! কলকাতার অন্যতম নামকরা রেস্তরাঁ এটি। অ্যালেন কিচেনের বিখ্যাত চিংড়ির কাটলেট স্বাদে অনন্য। ভোজনপ্রিয় কলকাতাবাসী নিয়মিত এই রেস্তরাঁয় এখনও হানা দেন। খাঁটি ঘি দিয়ে তৈরি চপ-কাটলেট এখানকার বিশেষত্ব।
অনেক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এমন অনেক রেস্তরাঁ এখনও কলকাতা শহরে রমরম করে চলছে
অনাদি কেবিন
অনাদির মোগলাই পরোটার খ্যাতি দেশে-বিদেশে আজ ছড়িয়ে গিয়েছে। সারা কলকাতার মানুষ তাঁদের প্রাক-দুর্গাপূজার কেনাকাটার পর অনাদির কেবিনে ভোজ সেরে ফেরার পথ ধরেন এখনও। অনেক দিনের পুরনো রেস্তরাঁ হলেও এই কেবিনটি কলকাতার কেন্দ্রস্থলে থাকা বিখ্যাত অন্য যে কোনও রেস্তরাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে গিয়েছে খাবারের অনবদ্য স্বাদের জন্যই। হাঁসের ডিমের মোগলাই পরোটা অনাদির সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ, তবে পরোটার সঙ্গে এখানকার আলুর তরকারিও স্বাদে গন্ধে বেশ জনপ্রিয়।
দিলখুশা কেবিন
দিলখুশা, আক্ষরিক অর্থে যা আপনার হৃদয়কে খুশি করে, কলেজ স্ট্রিটের একটি শতাব্দী প্রাচীন কেবিন ক্যাফে। মেনু কার্ডে পুরনো খাবারের জায়গায় কিছু কিছু চাইনিজ খাবার জায়গা করে নিলেও ঐতিহ্যবাহী চিকেন কবিরাজি বা মাছের কাটলেট এখনও কলকাতার মানুষকে বারবার এখানে টেনে আনে। কলেজ স্ট্রিটে অবস্থিত এই দিলখুশা কেবিনে এক সময় বাংলার বহু কিংবদন্তী মানুষ রসনাতৃপ্তি ঘটিয়েছেন। সেই ঐতিহ্য এত বছর পরও অক্ষুণ্ণ।
দাস কেবিন
গড়িয়াহাটে অবস্থিত দাস কেবিনের ফিশ ফ্রাইয়ের খ্যাতি এখনও কলকাতার মানুষের মুখে নিয়মিত শোনা যায়। ফলে ছোট জায়গা হলেও এই রেস্তরাঁ কখনও খালি থাকে না। সকালের জলখাবার খেতে সপ্তাহের সাত দিনই এলাকার নানান ধরনের মানুষ ভিড় জমান এখানে। পকেটে শ’দুয়েক টাকা নিয়ে গেলেই পেট ভরে চপ-কাটলেট খেয়ে মনও ভরিয়ে আসতে পারেন আপনিও।