রাস্তাঘাটে খিদেয় পেট চুঁইচুঁই করে উঠলে কলকাতা শহরের মানুষজন হাতের কাছে যে খাবারটি সহজে পান, তার নাম এগ রোল। আপাদমস্তক স্বাস্থ্যসচেতন নন, এমন বাঙালি সব বয়সেই এই খাবারটি খান চেটেপুটে। মহানগরীর আনাচ-কানাচে ছাড়াও মফস্সলের প্রত্যেক অলিত-গলিতে এখন এগ রোলের দোকান দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই খাদ্যটি কলকাতার এত আপন হয়ে উঠল কবে থেকে? এর ইতিহাসটিও কিন্তু ভারী মজার। ডিমের রোল এবং তাদের নিকট প্রতিরূপ স্প্রিং রোলের প্রথম প্রবর্তন হয়েছিল চিনে। এর পর উনিশ শতকের মাঝামাঝি প্রথম চিনা বসতি স্থাপনকারীরা আমেরিকায় এই খাবারটি ক্রমশ ছড়িয়ে ফেলেন।
তবে- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতার বাইরেও তাদের কার্যকলাপ প্রসারিত করেছিল। নদীপথেই চলত তাঁদের সমস্ত কাজকর্ম। কোম্পানির কর্মীরা হুগলি নদীর বিভিন্ন বাঁকে নদীর ডকে গরমে নিয়মিত কাজ করতে করতে খিদেতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কলকাতা শহরে এই সব কর্মীদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য ডিমের রোল ক্রমশ বিবর্তিত হয়েছে—এমন গল্পও শোনা যায়।
তবে সবচাইতে বেশি যা শোনা যায় তা হল- কলকাতা শহরে এগ রোলের নাম প্রথমে ছিল ‘কাঠি রোল’। গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে যখন কলকাতা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী, সে সময়ে মূলত ইউরোপীয় সৈন্যদের মুখরোচক খাবার পরিবেশনের উদ্দেশ্যেই নিজামে প্রথম তৈরি হয় ‘কাঠি রোল’। মুচমুচে পরোটার মধ্যে তরকারি এবং মাংসের পুর দেওয়া, কাগজে মোড়ানো এই রোল অল্প দিনেই সারা শহরের বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভোজনবিলাসী বাঙালিও বিভিন্ন গোঁড়ামি কাটিয়ে স্বাদ নেন এই খাবারের। তবে মাংস ব্যবহারের ফলে এর দাম ছিল তুলনায় বেশি। ধীরে ধীরে তাই মাংসের জায়গায় ডিম দিয়ে রোল তৈরি শুরু হয়। কিন্তু সে আরও কয়েক দশক পরের কথা।