Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

২২ নভেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

Egg Rolls: কলকাতার আপন এগ রোল কতটা বাঙালির, কতই বা চিনাদের

আপাদমস্তক স্বাস্থ্যসচেতন নন, এমন বাঙালি সব বয়সেই এগ রোল খান চেটেপুটে। মহানগরীর প্রত্যেক অলি-গলিতে অন্তত একটি এগ রোলের দোকান দেখতে পাওয়া যাবে

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:৫৯

ডিমের রোল এবং তাদের নিকট প্রতিরূপ স্প্রিং রোলের প্রথম প্রবর্তন হয়েছিল চিনে

রাস্তাঘাটে খিদেয় পেট চুঁইচুঁই করে উঠলে কলকাতা শহরের মানুষজন হাতের কাছে যে খাবারটি সহজে পান, তার নাম এগ রোল। আপাদমস্তক স্বাস্থ্যসচেতন নন, এমন বাঙালি সব বয়সেই এই খাবারটি খান চেটেপুটে। মহানগরীর আনাচ-কানাচে ছাড়াও মফস্‌সলের প্রত্যেক অলিত-গলিতে এখন এগ রোলের দোকান দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই খাদ্যটি কলকাতার এত আপন হয়ে উঠল কবে থেকে? এর ইতিহাসটিও কিন্তু ভারী মজার। ডিমের রোল এবং তাদের নিকট প্রতিরূপ স্প্রিং রোলের প্রথম প্রবর্তন হয়েছিল চিনে। এর পর উনিশ শতকের মাঝামাঝি প্রথম চিনা বসতি স্থাপনকারীরা আমেরিকায় এই খাবারটি ক্রমশ ছড়িয়ে ফেলেন।

তবে- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতার বাইরেও তাদের কার্যকলাপ প্রসারিত করেছিল। নদীপথেই চলত তাঁদের সমস্ত কাজকর্ম। কোম্পানির কর্মীরা হুগলি নদীর বিভিন্ন বাঁকে নদীর ডকে গরমে নিয়মিত কাজ করতে করতে খিদেতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কলকাতা শহরে এই সব কর্মীদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য ডিমের রোল ক্রমশ বিবর্তিত হয়েছে—এমন গল্পও শোনা যায়।

তবে সবচাইতে বেশি যা শোনা যায় তা হল- কলকাতা শহরে এগ রোলের নাম প্রথমে ছিল ‘কাঠি রোল’। গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে যখন কলকাতা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানী, সে সময়ে মূলত ইউরোপীয় সৈন্যদের মুখরোচক খাবার পরিবেশনের উদ্দেশ্যেই নিজামে প্রথম তৈরি হয় ‘কাঠি রোল’। মুচমুচে পরোটার মধ্যে তরকারি এবং মাংসের পুর দেওয়া, কাগজে মোড়ানো এই রোল অল্প দিনেই সারা শহরের বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভোজনবিলাসী বাঙালিও বিভিন্ন গোঁড়ামি কাটিয়ে স্বাদ নেন এই খাবারের। তবে মাংস ব্যবহারের ফলে এর দাম ছিল তুলনায় বেশি। ধীরে ধীরে তাই মাংসের জায়গায় ডিম দিয়ে রোল তৈরি শুরু হয়। কিন্তু সে আরও কয়েক দশক পরের কথা।

Advertisement
এগ রোলের পাশাপাশি চিকেন রোল, মটন রোল, ফিশ রোল, চিংড়ির রোল, পর্ক রোল এই শহরের মানুষের মন জয় করে নিয়েছে।

এগ রোলের পাশাপাশি চিকেন রোল, মটন রোল, ফিশ রোল, চিংড়ির রোল, পর্ক রোল এই শহরের মানুষের মন জয় করে নিয়েছে।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এবং স্বাধীনতা তথা দেশভাগের পর বহু মানুষ রাস্তায় খাবারের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করেন। কাঠি রোল প্রায় সেই সময় থেকেই চেহারা বদলে ডিমের রোলে পরিণত হতে থাকে। একটি রোলে পেটও ভরে যায়, তা ছাড়া মুখরোচক কিছু খাওয়ার আগ্রহও পূরণ হয়। আজ এগ রোলে যে স্যালাড আর সসের ব্যবহার হয়, তা আরও পরবর্তী সময়ের বিবর্তিত রূপ।

এখন এই রোল আর শুধু ডিমে বা মাংসে সীমাবদ্ধ নেই। রন্ধনশিল্পীরা নিরামিষাশীদের জন্য পনির রোল, ভেজিটেবিল রোল, মাশরুম রোল, আলুর রোল বানান নিপুণ ভাবে। তেমনই অন্য দিকে এগ রোলের পাশাপাশি চিকেন রোল, মটন রোল, ফিশ রোল, চিংড়ির রোল, পর্ক রোল এই শহরের মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। বিশেষ করে এগ রোলের মধ্যে মাংসের পুর দিয়ে এগ চিকেন বা এগ মটন রোল নতুন প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আকারও বদলেছে এগ রোল। লম্বা রোল খেতে গেলে দামও দিতে হয় বেশি। তবে লম্বা একটি রোল একা খেয়ে শেষ করা রীতিমতো সমস্যার বলেই মনে করেন অনেকে।

নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট, গড়িয়াহাট, শ্যামবাজার, উল্টোডাঙ্গা, যাদবপুর, গোলপার্ক, কালীঘাট, ভবানীপুরের মতো বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে এগ রোলের বিখ্যাত কিছু দোকান। এ সব জায়গায় এখন বিভিন্ন ধরনের রোল পাবেন। বিভিন্ন জায়গায় রোলের পরোটাও বানানো হচ্ছে নানা কায়দায়। কোথাও থাকছে আলুর পরোটা, কেউ আবার পরোটায় দিচ্ছেন চিজ। ফলে সাধারণ এগ রোলও হয়ে উঠছে অসাধারণ। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সব দোকানে তাই মানুষজনের ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো।

Advertisement