আমি ফুচকা খেতে খুব ভালবাসি। বিশেষ করে কলকাতার ফুচকা। বাইরের অনেক শহরে গিয়েও ফুচকা খেয়েছি। তবে কলকাতার ফুচকার মতো স্বাদ কোথাও পাইনি। কলকাতায় শীতকাল পড়তেই মনটা যেন নলেন গুড়ের খোঁজ শুরু করে। আমি নলেন গুড়ের রসগোল্লা খেতে ভালবাসি। পাটিসাপটা খেতেও আমার বেশ ভাল লাগে। ভবানীপুরে ‘গিরিশের’ একটা দোকান আছে। ওদের নলেন গুড়ের রসগোল্লাটা আমার পছন্দের। আমার তো অমৃতের মতো লাগে। পেশাগত কারণে সব সময় মিষ্টি খাওয়া যায় না। তবে সপ্তাহে এক দিন আমি মিষ্টি খেতে ভালবাসি।
কলকাতা এমনিতে খুব সুন্দর শহর। দুর্গাপুজোর সময় কলকাতা যেন আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। তা ছাড়া বাঙালির তো বারো মাসে তেরো পার্বণ। সারা বছরই কিছু না কিছু উৎসব লেগেই থাকে। কলকাতার মানুষ মজা করতেও খুব ভালবাসেন। খেতেও ভালবাসে। কলকাতায় সব কিছুর সম্ভার এত বেশি যে মানুষ সবটা চেটেপুটে নেন।
নৌকা চড়তে আমি খুব ভালবাসি। নৌকায় চেপে কলকাতার গঙ্গাবক্ষে ঘোরার একটা আলাদাই আনন্দ আছে। বাবুঘাট, এ দিকে বিদ্যাসাগর সেতু, কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর— সব মিলিয়ে কলকাতা পুরো জমজমাট। তবে বেশ কিছু বছর ধরে কলকাতা আরও বেশি মোহময়ী হয়ে উঠেছে। তার জন্য আমি ধন্যবাদ দিতে চাই আমাদের বর্তমান সরকারকে। ভীষণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে আলো দিয়ে। পার্কগুলিও ভীষণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
কলকাতা থেকে আমার প্রাপ্তি অনেক। আমার মনে আছে, আমার জন্মদিনে আমি চিংড়িঘাটার উপর দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেই সময় হোর্ডিং লাগানো হচ্ছিল। হোর্ডিংয়ের তিনটি কোনা লাগানো হয়ে গিয়েছিল। চার নম্বর কোণটা লাগানো হচ্ছিল। আমি গাড়িতে যেতে যেতে আকাশের দিকে তাকাতেই আমার মুখটা দেখতে পেলাম। কলকাতার আকাশে সেই প্রথম আমার নিজের হোর্ডিং দেখা। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই সিনেম্যাটিক লেগেছিল। রাসবিহারীর মোড়েও কোনও এক বৃষ্টির দিনে একই সঙ্গে আমার হোর্ডিং আর আমিও ভিজছিলাম। সেই দিনগুলি আমার ভীষণ কাছের।
কলকাতা প্রেমের শহর। আমার খুব পছন্দের একটি জায়গা হল রবীন্দ্র সরোবর লেক। আমি যখন মাঝেমাঝে লেকে হাঁটতে যাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকাদের দেখে আমার খুব ভাল লাগে। আর যাই হোক কলকাতা অন্তত ভালবাসতে ভুলে যায়নি। আমার সঙ্গে এই শহরের একটা প্রেমের সম্পর্ক আছে। আমার মনে হয় সব সম্পর্কের একটা নিজস্ব পরিধি থাকা দরকার। তাতে সম্পর্ক ভাল থাকে। আমিও তাই মাঝেইমাঝেই শহর ছেড়ে বাইরে চলে যাই ঘুরতে। যাতে আমার সঙ্গে কলকাতার সম্পর্কটা দীর্ঘজীবী হয়।