পুড়ে গিয়েছে আম চারার পাতা। নিজস্ব চিত্র।
বৈশাখের সূর্য যেন আগুন ঝরাচ্ছে। ঠা-ঠা রোদে তেতে উঠেছে পথঘাট। তাপমাত্রার পারদ গিয়ে ঠেকেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। প্রখর রোদ-গরমে অসহায় অবস্থা গাছপালারও। হু-হু করে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর। প্রতিকূলতার সাঁড়াশি আক্রমণে ক্ষতি হচ্ছে আম চারার।
উত্তর ২৪ পরগনায় কলম করা চারার অন্যতম বড় বাগানগুলি কাঁকিনাড়ার কেউটিয়ায়। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন এলাকাগুলিতেই মূলত কলমের চারা তৈরির বাগান। এপ্রিল-মে মাস এই চারাগুলি বাজারজাত করার প্রাক-মুহূর্ত। জুন মাসে এই চারাগুলি বাগান থেকে ট্রাকে করে ভিন্ রাজ্যে বা অন্য জেলার চারা ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান। হাজারেরও বেশি কৃষিশ্রমিক এই সময়ে ব্যস্ত থাকেন চারাগুলির পরিচর্যায়। কৃষি আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে ব্যারাকপুরের তাপমাত্রা শীর্ষে থেকেছে সম্প্রতি।
শুধু আম চারাই নয়, এই দাবদাহে আম চাষিরাও আশঙ্কা করছেন আমের মুকুল ঝরে পড়ার। বীজপুর থেকে ঘোলা পর্যন্ত অসংখ্য বড় আমবাগান লিজ় দেন মালিকেরা। শিবদাসপুরে ১৮টি আমবাগানের লিজ় নিয়েছেন অসীম রায়। তিনি বলেন, ‘‘তীব্র গরমে আমের মুকুলের পোলেন গ্রেইন ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারলেও, স্টিগমা বেশি তাপে কার্যকরী ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এতে মুকুল বেরোনোর সম্ভাবনা কমে আসে। তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে, তাতে এ বার ফলন কী হবে তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।’’
কেউটিয়ায় ১২ একর জমিতে আম চারা তৈরি করেছেন নিরঞ্জন সরকার। বহু কৃষি শ্মিক কাজ করেন তাঁর বাগানে। এই গরমে নিরঞ্জনের মতো অনেক বাগান মালিকের কাছে মূল সমস্যা হয়েছে জল। চারাগুলিতে সকাল-সন্ধ্যা জল ছেটানোর ব্যবস্থা করা জরুরি মানছেন সকলেই। কিন্তু জলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে কাছাকাছি থাকা জলাশয়গুলি শুকিয়ে যাওয়ায়। জলস্তর বহু ক্ষেত্রে নেমে যাওয়ায় সাব মার্সিবলেও অনেক সময়ে জল উঠছে না বলে জানান কৃষিশ্রমিকেরা। লোডশেডিংয়ের সমস্যাও আছে।
নিরঞ্জন বলেন, ‘‘লক্ষাধিক চারা ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার কথা। কিন্তু দাবদাহে কচি পাতা পুড়ে যাচ্ছে। রোদ-পোকার আক্রমণ তো আছেই।’’ বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি আবহাওয়া বিভাগের গবেষক দেবলীনা সরকার বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে গরম কমার কোনও সম্ভাবনাই নেই। সকাল-সন্ধ্যায় জল ছিটিয়ে চারাগুলি সুস্থ রাখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy