Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
ODISHA

কয়েক দিনের ছুটি? ঘুরে আসুন ওড়িশার ‘কাশ্মীর’ দারিংবাড়ি

অরণ্যের সমুদ্র, জলপ্রপাতের উচ্ছ্বাস, তিরতিরে বয়ে চলা নদী আর হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া... প্রকৃতি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে ওড়িশার এই শৈলশহরে।

মান্দাসারু। এখানে এলে প্রকৃতি থেকে চোখ ফেরাতে পারবেন না।

মান্দাসারু। এখানে এলে প্রকৃতি থেকে চোখ ফেরাতে পারবেন না।

আবাহন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ২২:৩১
Share: Save:

ওড়িশার কোনও এলাকায় জুন মাসে কম্বল গায়ে দিতে হয়, ভাবা যায়? এটা যদি বা কষ্টেসৃষ্টে কল্পনা করে নেওয়াও যায়, শীতে সেখানে বরফ দেখা যায় বললে লোকে নির্ঘাত ‘গুলবাজ’ বলবে। কিন্তু কী আর করা, প্রকৃতির ক্ষমতা আশ্চর্য! ঘটনাস্থল ওড়িশার কান্ধামাল জেলার শৈলশহর দারিংবাড়ি। যার আবার ডাকনাম ‘ওড়িশার কাশ্মীর’!

দেশের অধিকাংশ সুন্দর হিল স্টেশনের মতো এ শহরও সাহেবদের তৈরি। ইংরেজ আমলে এই অঞ্চলের দায়িত্ব পেয়ে পাহাড়ি এলাকাটিতে থাকতে শুরু করেন দারিং সাহেব। তার পরে এক সময় তাঁর নাম থেকেই জায়গাটার নাম হয়ে যায়। ‘বাড়ি’ মানে অবশ্য ঘর নয়, ওড়িয়া ভাষায় ‘বাড়ি’র অর্থ গ্রাম।

ব্রহ্মপুর স্টেশন থেকে গাড়ি এগোল ৫৯ নং জাতীয় সড়ক ধরে। দূরের পাহাড় আস্তে আস্তে কাছে এল। পাক খেয়ে গাড়ি উঠতে লাগল। অতঃপর দারিংবাড়ি উদয়গিরি ফরেস্ট রেঞ্জ। এবং বিস্ময়। এ কি ওড়িশা? পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে রাস্তা উঠছে... গহীন বন, ঘন সবুজে কোথাও এতটুকু ফাঁক নেই। এমনকি বোধ হয় অল্টিচিউডের জন্যই সামান্য অস্বস্তিও হতে শুরু হল। এক সময়ে পাহাড়ের মাথায় পৌঁছলাম। রাস্তার দু’পাশে খোলা মাঠের মতো জায়গা। ফরেস্ট রেঞ্জের মূল এলাকায় ঢোকার গেট। কিছুটা যেতেই দারিংবাড়ি শহর।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ছোট্ট শহর। একটা বাজার এলাকা, দুটো হোটেল, কিছু দোকান, একটা চার মাথার মোড়। সেখান থেকে ডান দিক ধরে কিছুটা এগোলে শহরের কোলাহল পেরিয়ে রিসর্ট। বড় বড় গাছ আর ধাপে ধাপে কয়েকটা করে কটেজ। রিসর্ট চত্বরে প্রচুর ফলের গাছ। যথেষ্ট আনাজপাতিও ফলেছে সেখানে।

লাভার্স পয়েন্ট।

ছিমছাম বন্দোবস্ত। সাধারণত আগের দিন কিংবা খুব সকালে রিসর্ট বা কটেজে জানিয়ে দিতে হয়, সারা দিন কী খাবেন। ওঁরা সেই মতো বাজার করে আনেন।

প্রথম দিনের শেষ দুপুরে গাড়ি নিয়ে যাওয়া হল মান্দাসারু। রাস্তা খুব একটা ভাল নয়, তবে সেটাই মজা। গভীর জঙ্গল, খুব নিরিবিলি। আর তার ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলা... অবশেষে একটা ছোট্ট গ্রাম। সেখানে একটা পার্ক। টিকিট কেটে ঢোকা হল। উল্টো দিকের পাহাড়টা যেন তুলিতে আঁকা। এই সবুজ রঙের উপত্যকাটিকে বলা হয় ‘সাইলেন্ট ভ্যালি অফ ওড়িশা’। এ পারে ওয়াচ টাওয়ারে উঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেবল ও দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেওয়া যায়। থাকার ব্যবস্থাও আছে। অসামান্য একটা কাঠের বাংলো। আগে জানা ছিল না। তাই খুব আফসোস হল। আর কোথাও বেড়াতে গেলেই যেমন সঙ্কল্প হয়— পরের বার দারিংবাড়ি এলে মান্দাসারুতেই থাকব!

যে কোনও টুরিস্ট স্পটেই যেমন ‘ফাইভ পয়েন্টস’ বা ‘সেভেন পয়েন্টস’ গোছের বেড়ানোর একটা ব্যাপার থাকে, দারিংবাড়িতেও আছে। অতএব, দ্বিতীয় দিন ‘পয়েন্ট’ ভ্রমণ। প্রথমে মিরুবান্দা ফলস। জঙ্গলের মধ্যে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে কিছুটা উতরাই ধরে পৌঁছলাম জলপ্রপাতের পায়ের কাছে। সেখান থেকে বেরিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ আমাদের চালক রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে খাদের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, ‘‘দেখেছেন ভ্যালিটা?’’ সবুজে সবুজ। আর মাঝখান দিয়ে চিরে বেরিয়ে যাওয়া সরু রাস্তাটা যেন ঠিক কারুকাজের মতো। এটাই দ্বিতীয় পয়েন্ট— পাঙ্গালি উপত্যকা। আর তিন নম্বর? কেউ বিশ্বাস না-ও করতে পারেন, পাইন বন। হ্যাঁ, ওড়িশায় পাইন বন! ডুলুরি বনের উল্টো দিকে কফি আর গোলমরিচের বিশাল বাগান, সেটা অবশ্য তালিকায় চার নম্বর। পঞ্চমটির নাম ‘লাভার্স পয়েন্ট’। প্রতিটি টুরিস্ট স্পটই চিরন্তন জায়গা। যদিও এখানকার পাহাড়ি নদী বিস্ময় জাগায়। দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে, এ পাথর-ও পাথরে লাফিয়ে সময় কেটে যায়!

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে সরাসরি চেন্নাই বা বিশাখাপত্তনমগামী ট্রেনে চেপে নামতে হবে ব্রহ্মপুর। সেখান থেকে গাড়িতে ঘণ্টা দুয়েকের রাস্তা দারিংবাড়ি। সাধারণত ঠান্ডা আবহাওয়া থাকার জন্য বছরের যে কোনও সময়েই যাওয়া যায়

খাস দারিংবাড়িতেও একটা নেচার পার্ক আছে। সাজানো-গোজানো বাগানটিতে প্রচুর গাছ, ফুল, প্রজাপতি। বিকেলে যাওয়া গেল সেখানে।

অবশ্য রিসর্টটাও একেবারে প্রকৃতি ঘেরা। পিছনে শাল জঙ্গল আর সামনে খোলা চাতাল, সেখানে দাঁড়ালে কিছুটা দূরে শহর।

দারিংবাড়ির মানুষও থাকেন প্রকৃতিকে নিয়ে। মূলত জনজাতি এলাকা। ছোট ছোট বাড়ি। সাজানো, গোছানো, পরিচ্ছন্ন। এক একটা গ্রামে অল্প অল্প ঘর। সামান্য লোকের বাস। চেঁচামেচি নেই। চোখের সঙ্গে কানও জুড়োয়।

মাথায় রাখা ভাল, বিশেষ একটি-দু’টি ছাড়া ফোনের নেটওয়ার্কের বালাই নেই। ও সব আবার দারিংবাড়ি উদয়গিরি ফরেস্ট রেঞ্জের গেট পেরোলেই পাওয়া যায়।
‘সভ্য’ জগতের শুরু কিনা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Odisha Daringbadi দারিংবাড়ি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE