Advertisement
০২ মে ২০২৪
Do Aur Do Pyaar Review

বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে প্রাপ্তমনস্ক ‘দো অউর দো পেয়ার’: দেখল আনন্দবাজার অনলাইন

বিদ্যা এবং প্রতীকের রসায়ন ছবির মূলধন। বিদ্যার অভিনয় ক্ষমতা নিয়ে কোনও দিন কেউ প্রশ্ন তোলেননি। এ ছবিতেও বলা বাহুল্য, তার ব্যতিক্রম হয়নি।

Review of the film Do Aur Do Pyaar dtarring Vidya Balan and Pratik Gandhi

‘দো অউর দো পেয়ার’ ছবির একটি দৃশ্যে প্রতীক গান্ধী, বিদ্যা বালন, সন্ধিল রামমূর্তি এবং ইলিয়ানা ডিক্রুজ। ছবি: সংগৃহীত।

শ্রাবন্তী চক্রবর্তী
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪৩
Share: Save:

কোনও সম্পর্কেই প্রেম যথেষ্ট নয়। তাই উপচে পড়া প্রেমের সম্পর্কেও মন খোঁজে অন্য কিছু। ১২ বছরের সুখী দম্পতি অনি-কাব্যের (বিদ্যা বালন, প্রতীক গান্ধী) জীবনে এসেছিল পরকীয়া প্রেম (সন্ধিল রামমূর্তি, ইলিয়ানা ডিক্রুজ)। সন্ধিল-ইলিয়ানার সেই সম্পর্কে ছিল প্রেমের প্রাচুর্য। কিন্তু সেই প্রেম বোধ হয় নতুন করে ঘর বাঁধার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই উপচে পড়া সেই প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছিল তারা। ঘটনাচক্রে অনি আর কাব্য আবার একে অপরের কাছেই খুঁজে পেয়েছিল শান্তির আশ্রয়। পরিচালক শীর্ষ গুহঠাকুরতা তাঁর প্রথম ছবির বিষয় চয়ন করেছেন ‘ম্যারেজ ইজ অ্যান ইনস্টিটিউশন দ্যাট ওয়ান্টস টু লিভ ইন অ্যান ইনস্টিটিউশন’— গ্রাউচো মার্ক্সের এই উদ্ধৃতিকে কেন্দ্র করে।

ছবির শুরুতেই আমরা দেখতে পাই, অনি-কাব্য তাদের জীবনে নিজেদের পরকীয়া সম্পর্কে ভীষণ খুশি এবং তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কেরও আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু বাড়িতে অনি আর কাব্য একে অপরের সঙ্গে অপরিচিতের মত আচরণ করে।

Review of the film Do Aur Do Pyaar dtarring Vidya Balan and Pratik Gandhi

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

তাদের বৈবাহিক জীবন অটো-পাইলট প্রক্রিয়ায় চলে। দু’জনেই বাহানা খোঁজে, কী ভাবে এই অ-সুখকর সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাবে। দু’জনেই সেই বাহানা খুঁজে পায় উটি শহরে (কাব্যের আদি বাড়ি) কাব্যের ঠাকুরদা যখন গত হন। কাব্য এবং অনি দু’জনেই একসঙ্গে উটি আসে পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটাবে বলে। যদিও ফাঁকে-ফাঁকে নিজেদের পরকীয়া প্রেমটাও বজায় রাখে। নিজেদের সঙ্গীকে আশ্বাস দেয় যে, শীঘ্রই তারা তাদের বিয়ের বন্ধন থেকে বেরিয়ে আসবে। এই উটিতেই অনি এবং কাব্যের প্রেমপর্ব শুরু হয়েছিল। বাড়িতে শোকের পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও অনি এবং কাব্য তাদের বিগত সময়ের প্রেমকাহিনিতে মশগুল হয়ে পড়ে। ক্রমে আমরা এ-ও জানতে পারি, অনি আর কাব্য বাড়ির অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই অনি, কাব্যের পরিবারের সবার কাছে চক্ষুশূল। ক্রমশ দর্শক এটাও জানতে পারেন, কাব্য তার বাবার প্রিয় সন্তান নয়।

Review of the film Do Aur Do Pyaar dtarring Vidya Balan and Pratik Gandhi

‘দো অউর দো পেয়ার’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

বিরতির পর আমরা দেখতে পাই, কী ভাবে অনি আর কাব্য পরস্পরের শরীরী উত্তাপের কাছে আবার নিজেদের সমর্পণ করে দেয়। এবং তার মধ্যে দিয়ে তারা পায় যৌনতার চরম সুখ। সেই খুনসুটি, সেই উন্মাদনা, সেই বাউন্ডুলে মন, বেগুন পোস্ত (অনির প্রিয় খাবার), আর স্টিলের বাসনের ঝনঝনানির (কাব্যের আসক্তি) মাঝেই আবার ফিরে পায় তারা সম্পর্কের উষ্ণতা।

প্রাক-বিরতি অধ্যায়ে বিদ্যা এবং প্রতীকের রসায়ন ছবির মূলধন। বিদ্যার অভিনয় ক্ষমতা নিয়ে কোনও দিন কেউ প্রশ্ন তোলেননি। এ ছবিতেও বলা বাহুল্য, তার ব্যতিক্রম হয়নি। উটিতে বারের একটি দৃশ্যে শাড়ি পরিহিতা বিদ্যা এবং প্রতীক যে দক্ষতার সঙ্গে তাঁদের রসায়ন পর্দায় তুলে ধরেছেন, তা অপূর্ব। ‘মদগাঁও এক্সপ্রেস’-এর পর প্রতীক আবার প্রমাণ করলেন, কমেডিতে তিনি খুবই সাবলীল। বিদ্যা এবং প্রতীকের যৌথ দৃশ্যে দু’জনেই দু’জনকে টেক্কা দিয়েছেন। সন্ধিলের যৌন আবেদন ছবির একটি অতিরিক্ত পাওনা, ইলিয়ানার অভিনয়ও যথাযোগ্য।

সন্ধিল আর ইলিয়ানার চরিত্রকে আর একটু গভীর ভাবে জানতে পারলে হয়তো ভাল লাগত। ছবির সঙ্গীত কানে নির্মলতার ছোঁয়া দেয়। লাকি আলির গলায় ‘তু হ্যায় কহাঁ’ শ্রুতিমধুর। কার্তিক বিজয়ের সিনেমাটোগ্রাফি উটিকে খুব সুন্দর ভাবে পর্দায় তুলে ধরেছে।

ফ্রেঞ্চ ছবি ‘দ্য লাভার্স’ অবলম্বনে ‘দো অউর দো পেয়ার’ লিখেছেন ঈশা চোপড়া এবং সুপ্রতিম সেনগুপ্ত। অমৃতা বাগচির সংলাপ ছবিতে দর্শকের মুখে বেশির ভাগ সময় হাসি ফোটাবে। এর আগে আমরা ‘সিলসিলা’, ‘অর্থ’, ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’, ‘হমারি অধু্রি কহানি’, ‘গেহরাইয়াঁ’-র মতো সমধর্মী ছবি দেখেছি। তাঁর প্রথম ছবিতেই পরিচালক হিসেবে শীর্ষ গুহঠাকুরতা যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। ২ ঘণ্টা ১২ মিনিটের ছবিতে পরিচালক কখনওই দর্শকের চিন্তাধারার উপর চেপে বসেননি, বরং কৌতুকের আবরণে ‘দো অউর দো পেয়ার’-এ একজোড়া দম্পতির জীবনের জটিলতা, পরকীয়া প্রেমের ক্ষতিকর দিক, সব কিছু খুব দক্ষতার সঙ্গে দেখিয়েছেন। ছবির পরিসমাপ্তি দর্শককে কিছু বিষয় (বিবাহ, প্রেমহীন দাম্পত্য জীবন, পরকীয়া সম্পর্ক) নিয়ে ভাবাতে বাধ্য করবে। তবে স্বীকার করতেই হবে, বিরতির পর ছবির গতি একটু কমে যায়, যে কারণে ছবির প্রতি আগ্রহ একটু হলেও শিথিল হয়ে পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Review Movie Review Vidya Balan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE