বাঁ দিক থেকে ঋষি সুনক, সুয়েলা ব্রেভারম্যান। — ফাইল চিত্র।
এই প্রথম নয়। এর আগেও ব্রিটেনের মন্ত্রিপদ থেকে অপসারিত হয়েছেন সুয়েলা ব্রেভারম্যান। এক বছর ২২ দিনের মাথায় দ্বিতীয় বার অপসারিত হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুয়েলা। সোমবার তাঁকে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, যিনি নিজেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। লন্ডনে প্যালেস্টাইনের পক্ষে মিছিল নিয়ে পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছিলেন সুয়েলা। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর ‘কর্তৃত্বকে খাটো’ করেছেন তিনি।
গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলার প্রতিবাদে লন্ডনের রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল। মিছিলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। অভিযোগ, অতি-দক্ষিণপন্থীরা আইন ভেঙেছেন। তবু নিষ্ক্রিয় থেকেছে পুলিশ। এই প্রসঙ্গে লন্ডন পুলিশের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইন সমর্থকদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানোর অভিযোগ তুলেছেন সুয়েলা। গত বুধবার ব্রিটেনের একটি দৈনিকে তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন তিনি। অভিযোগ করেছিলেন, প্রতিবাদীদের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়েছে পুলিশ। তিনি লেখেন, ‘‘আমি মনে করি না, শুধু গাজ়ার জন্য সাহায্য চেয়ে এ ধরনের মিছিল হয়েছে। এগুলো আসে কিছু গোষ্ঠীর দাবিদাওয়া, বিশেষত ইসলামিকদের, যা উত্তর আয়ারল্যান্ডে দেখা যেত।’’ এই প্রতিবেদনের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েন সুয়েলা।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, সুয়েলার উপর ‘পূর্ণ আস্থা রয়েছে’ সুনকের। তবে তিনি তাঁর মন্তব্যকে সমর্থন করেন না। বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সুয়েলাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে মন্ত্রিসভায় কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, সেই প্রস্তাব মানেননি সুয়েলা।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব, নীতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছিলেন সুয়েলা। ২০২২ সালে লিজ ট্রাসের সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ছিলেন সুয়েলা। নিজের ব্যক্তিগত মেল আইডি থেকে অন্য এক সাংসদকে সরকারি একটি মেল পাঠিয়ে মন্ত্রিত্বের প্রোটোকল ভেঙেছিলেন। তার পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছেড়েছিলেন সুয়েলা। এর পর সুনক যখন প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন, তখন ছ’সপ্তাহ পর ফের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসেন সুয়েলা।
সুয়েলার জন্ম পশ্চিম লন্ডনে। প্রকৃত নাম সু-এলেন ফার্নান্ডেজ। বাবা ক্রিস্টি ফার্নান্ডেজের পরিবার আদতে গোয়ার বাসিন্দা। সেখানে থেকে গিয়েছিলেন কেনিয়া। মা উমা ফার্নান্ডেজের পূর্বসূরিরাও ছিলেন ভারতীয়। ভারত থেকে মরিশাসে চলে গিয়েছিল তাঁর পরিবার। ১৯৬০ সাল নাগাদ ব্রিটেনে এসে বসবাস শুরু করেন সুয়েলার বাবা, মা। লন্ডনের উপকণ্ঠে হিথফিল্ড স্কুলে পড়ার সময় শিক্ষকেরা তাঁর নাম দেন সুয়েলা।
সুয়েলার পরিবার কনজারভেটিভ দলের সমর্থক। পার্লামেন্টের ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছিলেন তাঁর মা। পরে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। কেমব্রিজের কুইন্স কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন সুয়েলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজারভেটিভ সংগঠনে সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। এর পর ব্রিটেন এবং আমেরিকায় আইন প্র্যাকটিস করেন তিনি। হ্যাম্পশায়ারের ফেয়ারহ্যাম থেকে ভোটে জিতে হাউস অফ কমনসে প্রবেশ করেন তিনি। তখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডেভিড ক্যামেরন। কনজারভেটিভ পার্টির ভিতর ব্রেক্সিটের তীব্র সমর্থক ছিলেন সুয়েলা। বরিস জনসনকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন তিনি। সে কারণে ক্ষমতায় এসে সুয়েলাকে জুনিয়র ব্রেক্সিট মন্ত্রী করেন বরিস। এর পর অ্যাটর্নি জেনারেল হন তিনি।
২০১৮ সালে মার্সিডিজ-বেঞ্জের ম্যানেজার রায়েল ব্রেভারম্যানকে বিয়ে করেন সুয়েলা। রায়েল ইহুদি। ব্রিটেনে বেআইনি উদ্বাস্তুদের প্রবেশ রুখতে বড় পদক্ষেপ করেছিলেন সুয়েলা। সেই নিয়ে সমালোচিতও হন। নতুন উদ্বাস্তু নীতি তৈরিতেও বড় ভূমিকা রয়েছে তাঁর। যদিও সেই বিষয়টি এখনও পরীক্ষা করছে শীর্ষ আদালত। এ বার গাজ়ায় যুদ্ধ বিরোধীদের মিছিল নিয়ে মন্তব্য করে ফের সমালোচিত সুয়েলা। আরও এক বার হারালেন মন্ত্রিত্ব।