Wagner

‘বিদ্রোহী’ ওয়াগনার প্রধান প্রিগোঝিনকে খুন করিয়েছেন পুতিন? ইঙ্গিত আমেরিকার জেনারেলের

আমেরিকা সেনার অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল রবার্ট আব্রাম বৃহস্পতিবার এই ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘‘আর কখনও প্রিগোঝিনকে প্রকাশ্যে দেখা যাবে কি না, সে বিষয়ে আমার গুরুতর সন্দেহ রয়েছে।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
মস্কো শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ১১:৩৫
Wagner Group chief Yevgeny Prigozhin who rebelled against Russian President Vladimir Putin, likely dead, claims former US general

বাঁদিক থেকে, ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান অলিগার্চ ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল চিত্র।

ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান অলিগার্চ ইয়েভজেনি প্রিগোঝিনকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। আমেরিকা সেনার প্রাক্তন শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক জেনারেল রবার্ট আব্রাম বৃহস্পতিবার এই ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘‘আর কখনও প্রিগোঝিনকে প্রকাশ্যে দেখা যাবে কি না, সে বিষয়ে আমার গুরুতর সন্দেহ রয়েছে।’’

গত বছর কিভ, ডনবাস-সহ ইউক্রেনের একাধিক অঞ্চল দখলের গুরুদায়িত্ব তাঁরই বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। কিন্তু রুশ ধনকুবের প্রিগোঝিনের ভাড়াটে যোদ্ধাগোষ্ঠী ওয়াগনারের ‘বন্দুকের নল’ গত মাসে ঘুরে যায় পুতিনেরই দিকে। রুশ প্রেসিডেন্ট সেই ‘বিদ্রোহ’ সফল ভাবে মোকাবিলার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল প্রিগোঝিনের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে। গত কয়েক দিন ধরে তাঁর নিখোঁজ থাকার ঘটনায় এ বার নতুন জল্পনা ছড়িয়েছে। তবে জেনারেল আব্রামের ধারণা, এখনও প্রিগোঝিনের বেঁচে থাকার সম্ভবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘‘এমনও হতে পারে, গোপন জেলখানায় বন্দি রাখা হয়েছে ওয়াগনার প্রধানকে।’’

Advertisement

জুন মাসে ওয়াগনার যোদ্ধারা ইউক্রেন সীমান্তবর্তী একাধিক এলাকার দখল নিয়েছিল। এর পর তারা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উদ্দেশে অভিযান শুরু করে। কিন্তু সে সময় পুতিন দ্রুত নিজের অনুগত রুশ সেনাকে সামনে রেখে ‘বিদ্রোহীদের’ নিরস্ত করেছিলেন। প্রিগোঝিন সে সময় রাশিয়া থেকে বেলারুশে চলে গিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল। পুতিন ঘনিষ্ঠ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কো দাবি করেছিলেন, তিনিই মস্কোর সঙ্গে ওয়াগনার বাহিনীর সমঝোতা করিয়েছেন।

আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি তরফে সে সময় শোনা গিয়েছিল, সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী প্রিগোঝিনকে বেলারুশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে’ লুকাশেঙ্কো দাবি করেন, তাঁর দেশে প্রিগোঝিন নেই। ক্রেমলিনের তরফেও জানানো হয়, ওয়াগনার প্রধান কোথায় তারা জানে না। প্রিগোঝিন বেঁচে আছেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে জেনারেল রবার্টের বক্তব্যে ধোঁয়াশা আরও বেড়েছে। সম্প্রতি, আমেরিকার সামরিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট ফর জি স্টাডি অফ ওয়ার’ মঙ্গলবার দাবি করেছে, ক্রমশ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠা প্রিগোঝিনকে ফাঁদে ফেলতেই ওয়াগনার যোদ্ধাদের একাংশের সাহায্যে ‘বিদ্রোহের চিত্রনাট্য’ তৈরি করেছিলেন পুতিন!

ওয়াগনার বাহিনী ‘রণে ভঙ্গ’ দেওয়ার পরে ‘অজ্ঞাতবাসে’ যাওয়া প্রিগোঝিন অডিয়ো বার্তায় দাবি করেছেন, বিদ্রোহ নয়, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকার এবং তাঁর সেনার আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পথে নেমেছিল ‘ওয়াগনার’ বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস’ (এফএসবি) বলেছে, তদন্তে দেখা গিয়েছে যে বিদ্রোহে জড়িতরা অপরাধমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছেন। যদিও পুতিন ‘বিদ্রোহের’ প্রথম পর্যায়ে প্রিগোঝিনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন।

একদা পুতিন-ঘনিষ্ঠ হোটেল ব্যবসায়ী প্রিগোঝিনের ওই ভাড়াটে বাহিনী রুশ সেনার অংশ নয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে তারা রুশ বাহিনীর সহযোগী হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অতীতে লিবিয়া, সিরিয়া, মোজাম্বিক, সুদানের মতো দেশে গৃহযুদ্ধেও লড়েছে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধার এই পেশাদার ভাড়াটে বাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে মতবিরোধ চলছিল প্রিগোঝিনের। রুশ সেনা পরিকল্পিত ভাবে‌ ওয়াগনার যোদ্ধাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement