(বাঁ দিকে) এস জয়শঙ্কর, (মাঝে) মুহাম্মদ ইউনূস এবং জো বাইডেন (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ফের এক বার মানবাধিকারের ‘পাঠ’ দিল আমেরিকা। এ বার সরাসরি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ফোন গেল হোয়াইট হাউস থেকে। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই ছয় দিনের সফরে আমেরিকায় যাচ্ছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তার ঠিক আগের দিন ইউনূসকে ফোন করেন আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান। কথা হয় মানবাধিকার প্রসঙ্গে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়ে।
সালিভানের সঙ্গে ইউনূসের ফোনালাপের বিষয়ে বিশদে কোনও তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তবে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতি অনুসারে, ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি উঠে এসেছে আলোচনায়। দু’জনের মধ্যে সদর্থক কথোপকথনই হয়েছে। মানবাধিকারের প্রসঙ্গে সালিভানের সঙ্গে সহমত ইউনূসও। ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকের মানবাধিকার রক্ষা এবং সেটিকে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে আমেরিকার সঙ্গে একমত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছে আমেরিকা।
দু’পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলেই জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকায়। গত সপ্তাহেও আমেরিকার বিদেশ দফতর সহকারী প্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। আমেরিকা, ভারত এবং বাংলাদেশে সনাতনীদের প্রতিবাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ন্যূনতম মানবাধিকার এবং মানুষের মর্যাদাকে রক্ষা করা উচিত।
হাসিনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শুধু মাত্র ডিসেম্বরেই অন্তত ছ’বার প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে আমেরিকার বিদেশ দফতর। কখনও উঠে এসেছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্ন। কখনও উঠে এসেছে বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের প্রসঙ্গ। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারি, তাঁর তাঁর আইনজীবীর মার খাওয়ার অভিযোগ, আদালতে কোনও আইনজীবীর তাঁর হয়ে সওয়াল না করার অভিযোগ— এই সব বিষয়েই আমেরিকার কী অবস্থান, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ডিসেম্বরে। উঠে এসেছে বাংলাদেশের একাংশের সমাজমাধ্যমে ভারতের বাংলা-ত্রিপুরা-অসম ‘দখল’ করে নেওয়ার প্রসঙ্গও।
সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে আমেরিকার মাটিতেও। যার জেরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকার প্রশাসনের অবস্থান জানতে চেয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি হাসিনার বিরুদ্ধে ইউনূস প্রশাসনের অভিযোগ, বাংলাদেশে নির্বাচনের দাবি, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে— এমন নানাবিধ প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে বিদেশ দফতরের মুখপাত্রকে।