শেখ হাসিনা। — ফাইল চিত্র।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর কথা বলে বাংলাদেশের হাই কমিশনের চিঠি (নোট ভার্বাল) এসেছে বলে সোমবার নিশ্চিত করলেন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তবে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর বলেন, ‘‘প্রত্যার্পণের বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ হাই কমিশনের থেকে একটি নোট ভার্বাল পেয়েছি আমরা। বর্তমানে এই বিষয়ে মন্তব্য করার মতো কিছু নেই।’’
সোমবার বাংলাদেশের বিদেশ সংক্রান্ত উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে। ভারতকে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে।” তাঁকে উদ্ধৃত করেছিল সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’। এ বার সেই ‘নোট ভার্বাল’ বা কূটনৈতিক বার্তা পাওয়ার কথা স্বীকার করল বিদেশ মন্ত্রক।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। বাংলাদেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাইদুর রহমানের খুনের ঘটনায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে সে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৩৩টি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ১৯৮টি ক্ষেত্রে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এ বার হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে তাঁর বিচার করতে চাইছে অন্তবর্তী সরকার।
সেই ইঙ্গিত যদিও আগেই দিয়েছিলেন ইউনূস। অক্টোবরের শেষে তিনি আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ফিনানশিয়াল টাইমস্’-কে বলেছিলেন, ‘‘হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণা হলে আমরা ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে তাঁকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করব।” এর মধ্যে হাসিনাকে ঢাকায় ফেরানোর জন্য ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন জানিয়েছে ইউনূসের প্রশাসন। সোমবার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম জানিয়েছেন, ভারত থেকে হাসিনাকে ফেরাতে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে চিঠি দিয়েছে তাঁর মন্ত্রক। তাঁর কথায়, ‘‘এই প্রক্রিয়া এখন চলছে।’’ তিনি এ-ও জানান, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যার্পণ চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তি মেনে ভারত থেকে হাসিনাকে ফেরানো সম্ভব।