প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচনী নির্ঘণ্টকে প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি ও জামাতে ইসলামির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে বাংলাদেশের জনজীবনে কার্যত কোনও প্রভাবই পড়ল না। দু’দিন ছুটির পরে রবিবার সপ্তাহের প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের সর্বত্র অফিস-কাছারি খোলা ছিল। সমস্ত ধরনের যানবাহন অন্য দিনের মতোই চলাচল করেছে। তার পরেও সন্ধ্যায় ‘গোপন জায়গা থেকে’ ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি মন্তব্য করেছেন, “বাঁধভাঙ্গা আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অনিবার্য গণঅভ্যুত্থানের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।”
বিএনপির হরতালে সমর্থন জানানো জামাতে ইসলামি আবার এ দিনই সুপ্রিম কোর্টে মস্ত ধাক্কা খেয়েছে। হাই কোর্ট আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের বিরোধিতাকারী এই কট্টরপন্থী দলটির রাজনৈতিক দল হিসাবে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে জামাতে ইসলামি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেও তাদের আইনজীবীরা কখনও শুনানিতে গরহাজির থেকে, কখনও নতুন দিন চেয়ে কালক্ষেপের কৌশল নিয়েছিলেন। রবিবারও হরতালকে কারণ দেখিয়ে তাঁরা গরহাজির থাকলেও প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের বেঞ্চ জামাতের আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের রায় বহাল রাখার ঘোষণা করে। এর ফলে তাদের নির্বাচনী প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ জামাতের কাছে বন্ধ হল।
বিএনপি-জামাতের ডাকা হরতালের মধ্যেই বাংলাদেশের নানা জায়গায় দুষ্কৃতীদের আগুনে বাস-ট্রাক-ট্রেন মিলিয়ে ১১টি যানবাহন পুড়ে গিয়েছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ি স্টেশনে যমুনা এক্সপ্রেসের যাত্রীশূন্য তিনটি বগি ভস্মীভূত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, বগুড়া, নাটোরে পুড়েছে ৬টি বাস ও একটি ট্রাক। কিন্তু সারা দেশে ধর্মঘটের প্রভাব না-পড়ার কথা স্বীকার করছেন না বিএনপি নেতৃত্ব। বিএনপি নেতা রিজভি অভিযোগ করেছেন, বিরোধীদের জেলে ভরে এক তরফা নির্বাচনের কৌশল হিসাবে নাশকতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশ বিএনপির ৫১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে এবং ২০২৫ জনকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে।
তবে শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রবিবার মন্তব্য করেছেন, “নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর বাংলাদেশে গণজাগরণ দেখা দিয়েছে। বিএনপি-জামাতের হরতাল বা নাশকতাকে মানুষ আর গুরুত্ব দিচ্ছেন না।” প্রথম দিন ১০২৪ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফর্ম কেনার পরে রবিবার দ্বিতীয় দিনে কিনেছেন ১২১২ জন। ৫০ হাজার টাকা করে দাম রাখা হয়েছে ফর্মের, যা দলের তহবিলে জমা পড়ছে। দু’দিনে ফর্ম বিক্রি করে ১১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা আয় করেছে আওয়ামী লীগ, যা নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা হবে।