Bangladesh Crimes

সংখ্যাগুরু আমজনতাও স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশে, ঢাকায় ৫ মাসে ৭ জন খুন শুধু ছিনতাইবাজদের হাতে

গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছিল। তার পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছিল, এখনও তা পুরোপুরি স্বাভাবিক করা যায়নি বলে অভিযোগ। ঢাকায় বেড়েছে ছিনতাই।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৭
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

একাধিক জেলায় সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের ঘটনা বার বার শিরোনামে তুলে আনছে বাংলাদেশকে। কিন্তু সে দেশের সংখ্যাগুরু আমজনতাও কি স্বস্তিতে আছেন? গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য কিন্তু সে বিষয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেই দেশের অরাজক পরিস্থিতি এবং পর পর অপরাধের ঘটনা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধের বলি হচ্ছেন সংখ্যাগুরু সাধারণ মানুষ। তাই দেশের পুলিশের ভূমিকায় তাঁরা খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। এমনকি, বেশ কিছু জেলায় থানায় বিক্ষোভ দেখাতেও শুরু করেছেন মানুষ।

Advertisement

গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছিল। ৮ অগস্ট ক্ষমতায় এসেছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সময়ে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে, এখনও তা পুরোপুরি স্বাভাবিক করা যায়নি বলে অভিযোগ। মানুষের মধ্যে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে দিকে দিকে। অপরাধের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে ঢাকায়। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জিনিসপত্র, টাকাপয়সা শুধু ছিনিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত থাকছে না দুষ্কৃতীরা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতও করছে। তাতে অনেকের প্রাণ যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ৫ অগস্ট থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার মাসে ঢাকায় শুধু ছিনতাইবাজদের হাতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত সাত জনের। পুলিশ এবং আইনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা মেনে নিচ্ছেন, অনেকে অপরাধের শিকার হয়েও থানায় যান না। ফলে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। খাতায়কলমে সে সব ঘটনা নথিভুক্ত নেই।

পুলিশের তথ্য বলছে, গত অগস্ট থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ঢাকার ৫০টি থানা এলাকায় ছিনতাইয়ের মামলা রুজু হয়েছে ৬৫টি। অনেকেই দুষ্কৃতীদের হাতে গুরুতর জখম হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের।

অধিকাংশ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে মূলত রাত এবং ভোরের দিকে। অভিযোগ, দল বেঁধে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বেরোচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সঙ্গে থাকছে ছুরি বা তেমন কোনও ধারালো অস্ত্র। রাতে বা ভোরের দিকে প্রকাশ্য রাস্তাতেই ‘শিকার’ করছে তারা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ধরপাকড় চালাচ্ছে বটে, তবে একাধিক ক্ষেত্রে দুষ্কৃতী থেকে যাচ্ছে অধরাই! ফলে মানুষ রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছেন।

‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা নাগাদ ঢাকার মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হাফেজ কামরুল হাসান নামের এক ব্যক্তির পেটে ছুরি মেরে মোবাইল এবং নগদ সাত হাজার টাকা নিয়ে পালায় ছিনতাইবাজেরা। হাসপাতালে কামরুলকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। একই ভাবে ছিনতাইকারী দলের কবলে পড়েছেন ঢাকার মালিক আলি হোসেন, সোহেল রানা, আব্দুল বাশার চৌধুরীরা।

দুষ্কৃতীদের ‘শিকার’-এর তালিকায় রয়েছেন বিদেশিরাও। কিছু দিন আগে চিনের এক নাগরিকের গলা থেকে সোনার হার ছিনতাই করা হয় ঢাকায়। আবার, রাতে গাড়ি করে আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার সময়ে দল বেঁধে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। যানজটে আটকে থাকা ট্রাকে উঠে ব্যক্তিকে মারধর করে জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেয় তারা। অর্থাৎ, জনবহুল এলাকাতেও স্বমহিমায় তারা বিরাজ করছে। ঢাকার অলিগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে দাপটের সঙ্গে।

ছিনতাই বৃদ্ধির কথা প্রকাশ্যেও স্বীকার করেছে ঢাকার পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘আমার কাছে যা রিপোর্ট, তাতে ছিনতাই বেড়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মোবাইল ছিনতাই হচ্ছে।’’ রাস্তায় মোবাইল নিয়ে হাঁটার সময়ে সাধারণ মানুষকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।

ঢাকার মহম্মদপুর, খিলগাওঁ, হাতিরঝিল এবং শাহজাহানপুর থানায় গত এক মাসে ছিনতাই নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, জানিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যে মহম্মদপুরের থানার সামনে নভেম্বরের শুরুর দিকে স্থানীয়েরা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি ছিল, ছিনতাইকারীদের ধরতে হবে এবং অবিলম্বে শাস্তি দিতে হবে। ওই ঘটনার পর এলাকায় পুলিশি তৎপরতা কিছুটা বেড়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন